চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বিষয়ক জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লব: বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়নের জন্য ব্যবসার পুনর্গঠন’ শিরোনামে দুদিনব্যাপি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১৭-১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ অনলাইনে সম্মেলনটির আয়োজন করে চবি’র ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ব্যুরো অব বিজনেস রিসার্চ। এই সম্মেলনে পৃষ্ঠপোষকতা করেন চিটাগং ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (সিইউসিবিএ) ও হাইডেলবার্গ সিমেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেড।
ব্যুরোর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোঃ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে ১৭ সেপ্টেম্বর বিকাল ৪:০০ টায় ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবু তাহের উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে চবি’র মাননীয় উপ-উপচার্য প্রফেসর বেনু কুমার দে, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর এস. এম. সালামত উল্ল্যাহ ভূঁইয়া এবং ব্যাংকিং ও ইন্সুরেন্স বিভাগের প্রাক্তন সভাপতি প্রফেসর ড. সুলতান আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে মূখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জনাব মাহতাব উদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন সম্মেলনের আহ্বায়ক ও একাউন্টিং বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ আইয়ুব ইসলাম এবং সঞ্চালনা করেন ব্যুরোর পরিচালক ও ফাইন্যান্স বিভাগের প্রফেসর ড. এস. এম. শোহরাবুদ্দীন। এ সময়ে অন্যান্যের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ, পিএইচডি ও এম.ফিল গবেষকগণ এবং শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে উন্নীতকরণ এবং ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নের জন্য আইসিটি জ্ঞানসমৃদ্ধ উদ্যোক্তা সৃষ্টির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। মাননীয় উপ-উপাচার্য প্রফেসর বেনু কুমার দে বলেন, পঞ্চম শিল্প বিপ্লব অত্যাসন্ন এবং ঐ শিল্প বিপ্লব হবে ডিএনএ প্রযুক্তি নির্ভর। ইউজিসির সম্মানিত সদস্য প্রফেসর ড. তাহের বলেন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে ব্যবসায়িক পরিমণ্ডল অত্যন্ত দ্রুত পরিবর্তনশীল এবং এর সুফল পেতে হলে শিক্ষক-কেন্দ্রিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিবর্তন করে শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক শিক্ষা কার্যক্রম চালুর পরামর্শ দেন। বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় প্রফেসর ড. সুলতান আহমদ টেকসই উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও সামাজিক সাম্যের উপর অধিকতর গুরুত্ব প্রদানের পরামর্শ দেন। প্রফেসর ভূঁইয়া বলেন চতুর্থ শিল্প বিপ্লব রোবটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ন্যানো টেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, ইন্টারনেট অব থিংসের যুগান্তকারী সময় হিসেবে চিহ্নিত হবে।
মূখ্য আলোচনায় জনাব মাহতাব টেকসই উন্নয়নের জন্য ডিজিটাল যুগে ব্যবসা-বাণিজ্যকে কিভাবে পুনর্বিন্যাস করতে হবে তা পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার মাধ্যমে প্রাণবন্তভাবে ব্যাখ্যা করেন। জনাব মাহতাব তাঁর অসামান্য উপস্থাপনায় বলেন ডিজিটাল যুগ তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর যুগ এবং এই প্রযুক্তির উৎকর্ষতা ও সদ্ব্যবহারের উপর ভবিষ্যতের গতিপথ অনেকাংশে নির্ভরশীল। নিত্যনতুন তথ্য-প্রযুক্তি কিভাবে উৎপাদন, মিডিয়া, বিনোদন, যোগাযোগ, পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতকে প্রভাবিত করছে তার উপর চমৎকারভাবে আলোকপাত করেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ব্লকচেইন-নির্ভর চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সামাজিক অসমতা নিরসনে কার্যকর উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই শিল্প বিপ্লবের সুফল পেতে হলে প্রাণবন্ত নেতৃত্ব (জবংরষরবহঃ খবধফবৎংযরঢ়), রিইমাজিনিং অপারেশনস (জবরসধমরহরহম ঙঢ়বৎধঃরড়হং), ডিজিটাল প্রযুক্তি অভিযোজন, মানব সম্পদের জ্ঞান-ভিত্তিক দক্ষতা অর্জন, এবং টেকসই উদ্ভাবন এর উপর অধিকতর গুরুত্ব দিতে হবে।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মানিত বক্তাগণ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে দৈনন্দিন জীবন-জীবিকা, চাকুরি, ব্যবসা, সর্বোপরি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর এর প্রভাব ও চ্যালেঞ্জসহ নানাবিধ দিক নিয়ে প্রাণবন্ত আলোচনা করেন। স্বাগত বক্তৃতায় প্রফেসর ড. আইয়ুব অংশগ্রহণকারী সকলকে ধন্যবাদ জানান, এবং শিল্প বিপ্লবের পটভূমি বর্ণনা করেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে এ সম্মেলন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একাডেমিক কারিকুলামে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। পরিশেষে প্রফেসর ড. সেলিম সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন এবং অনুষ্ঠানকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য সম্মানিত অতিথিবর্গ এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ১০টি স্বতন্ত্র পর্বে দেশের স্বনামধন্য শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ বিভিন্ন প্রতিপাদ্য বিষয়ে প্রায় ৫০টি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন। সকাল ৯টা থেকে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত পর্বগুলোতে অধিবেশন- সভাপতিগণ, আলোচকবৃন্দ এবং অংশগ্রহণকারীরা নিজস্ব চিন্তাভাবনা ও অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ মতামত ব্যক্ত করেন।