চরাঞ্চলের বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী

দীর্ঘ দেড় বছর পরে বিদ্যালয়ে ঘণ্টা বাজলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি উদ্বেগজনক হারে কমেছে। লালমনিরহাটের চরাঞ্চলের বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার মাত্র ৫০ শতাংশ।

জানা গেছে, বৈশ্বয়িক মহামারি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে গত বছর (২০২০) মার্চে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। কয়েক দফায় ছুটি বাড়ানো হয় শিক্ষক কর্মচারীদের। সাম্প্রতিক সময় করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমে আসলে গত ১২ সেপ্টেম্বর সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরাসরি পাঠদানের ঘোষণা দেয় সরকার। ফলে দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরাসরি পাঠদান শুরু হয় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। তবে শতভাগ শিক্ষার্থী নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুললেও সাপ্তাহিক শ্রেণি বিভাজনে পাঠদান শুরু করেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

দীর্ঘ সময় বন্ধের পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালা খুললেও শিক্ষার্থীর উপস্থিতি হতাশাজনক। শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিতি ৮০-৮৫ শতাংশ হলেও গ্রামীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অর্ধেকের নিচে। বিশেষ করে চরাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিতির হার ৫০-৫২ শতাংশ। তিস্তা, ধরলা আর সানিয়াজান নদী বেষ্টিত জেলা লালমনিরহাটের চরাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোর অনুপস্থিতির সংখ্যা উদ্বেগজনক।

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়েছে। গরিব বাবার অভাবের সংসারের হাল ধরতে অনেকেই রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে কর্মক্ষেত্রে যুক্ত হয়েছে। বই খাতা ছেড়ে অনেকেই কৃষিকাজ, ইটভাটা বা কলকারখানায় শ্রমিক হিসেবে কর্মজীবনে পদার্পন করেছে। কেউ কেউ বাবা-মায়ের সঙ্গে পাড়ি জমিয়েছে কর্ম এলাকার কোনো শহরে। গ্রামীন কিছু প্রাথমিকের শিক্ষার্থী চলে গেছে কওমী মাদরাসায়।

মাধ্যমিক আর উচ্চ মাধ্যমিকে মেয়েরা বেশি অনুপস্থিত। যাদের বড় অংশ বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। কেউ প্রেমের টানে বাড়ি ছেড়ে প্রেমিককে নিয়ে সংসার করলেও অপহরণ মামলার ভিকটিম হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ের কিছু ছেলে বিয়ে করে সংসার জীবন চালু করলেও অধিকাংশ পোশাক কারখানাসহ কর্মমুখী হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ ছুটির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন চিত্র বিড়াজ করছে বলে অভিজ্ঞদের অভিমত।

শিক্ষার্থীদের ডাটাবেজ অনুযায়ী মোবাইলে শিক্ষার্থীদের খোঁজ খবর বাড়াতে এবং শিক্ষকদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করার তাগিদ অভিভাবকদের। শিক্ষকদের শতভাগ উপস্থিতি হলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়বে। এজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই গোপনে পরিদর্শনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তারা। ঝরে পড়া রোধে বিদ্যালয় ছুটির পরে শিক্ষকদের হোম ভিজিট কর্মসূচি চালুর দাবি জানান সচেতন মহল।

তিস্তা নদীর বাম তীর গোবর্দ্ধন হাট ইসমাইল পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণির উপস্থিতি ৮৫ শতাংশ হলেও ২য়তে ৫০ ও প্রথম শ্রেণিতে উপস্থিতি মাত্র ৪৮ শতাংশ। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

তবে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, চরাঞ্চলের অধিকাংশ অভিভাবক বিদ্যালয় চালুর খবর জানেন না। সবার মোবাইলে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। কিছু অভিভাবক ছেলে মেয়েদের নিয়ে কাজের সন্ধানে বাইরে রয়েছেন। কিছু কওমী মাদরাসায় ভর্তি হয়েছে। তবে পূর্বের পরিবেশ ফেরাতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

শহরের আদলে প্রতিষ্ঠিত কালীগঞ্জ কেউপি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খুরশীদুজ্জামান আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় কিছু শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে, যার হার ১০-১৫ শতাংশ। যাদের বড় অংশই মেয়েরা। তাদের বিয়ে হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। সবেমাত্র খুলেছে বিদ্যালয়। এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলে পরিষ্কার বোঝা যাবে ঝড়ে পড়ার হার।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন, স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি মনিটরিং করতে অফিসারদের প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বাড়ানো হয়েছে। তবে শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিতি শতভাগ বলে দাবি করেন তিনি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গোলাম নবী বলেন, গত দুই দিনের পরিদর্শনে জেলার বিদ্যালয়গুলোতে গড় উপস্থিতির হার ৭২-৭৪ শতাংশ। যার মধ্যে গ্রামীন ও চরাঞ্চলে উপস্থিতির হার আরও অনেক কম লক্ষ্য করা গেছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অভ্যাসের পরিবর্তন হওয়ায় এমন অবস্থা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের পুনরায় বিদ্যালয়মুখী করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।