ব্যাটসম্যানের ব্যার্থতায় ৫২ রানে হেরেছে স্বাগতিকরা

ব্যাটসম্যানের ব্যার্থতায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টিতে সিরিজ জয়ের অপেক্ষা বাড়লো বাংলাদেশের। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয়টিতে ৫২ রানে হেরেছে স্বাগতিকরা।

ফলে ২-১ এ ব্যবধান কমালো কিউইরা।
৭৬ রানে অলআউট হওয়া বাংলাদেশ নিজেদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর করল। অবশ্য এটি যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। এর আগে এবছরই নিউজিল্যান্ড সফরে অকল্যান্ডে ৭৬ রান করেছিল। আর কিউইদের বিপক্ষেই ২০১৬ সালের বিশ্বকাপে ভারতের কলকাতায় ৭০ রানে অলআউট এখন অবধি দলের সর্বনিম্ন স্কোর।

যদিও ঘরের মাঠে এটিই সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড হয়ে গেল। এর আগে ঘরের মাঠে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে। সেবার ২০১১ সালে ৯ উইকেট হারিয়ে ৮৫ রান করেছিল বাংলাদেশ।

রোববার (০৫ সেপ্টম্বর) মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় দুদল। যেখানে প্রথমে ব্যাট করা নিউজিল্যান্ড নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে ১২৮ রান তোলে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে সবকটি উইকেট হারিয়ে ৭৬ রান করতে পারে বাংলাদেশ।

১২৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে ২.৫ ওভারে ২৩ রান তোলেন দুই ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও লিটন দাশ। কোল ম্যাকোঞ্চির দ্বিতীয় ওভারে এলবি হয়ে মাঠ ছাড়েন লিটন। আউট হওয়ার আগে ১১ বলে ৩টি চারে ১৫ রান করেন লিটন। পরের ওভারেই অবশ্য বাংলাদেশের জোড়া উইকেট তুলে স্বাগতিকদের বিপদ বাড়ান আজাজ প্যাটেল। টেলএন্ডার ব্যাটসম্যান মেহেদী হাসানকে হেনরি নিকোলসের ক্যাচে ফেরানোর পর সাকিব আল হাসানকে শূন্য রানের বিদায় করেন। ফলে দলীয় ২৩, ২৪ ও ২৫ রানে যথাক্রমে ৩ উইকেটের পতন হয় বাংলাদেশের।

আশা জাগিয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি ওপেনার নাঈম শেখ। রচিন রবীন্দ্রর বলে ইনসাইডেজ বোল্ড হন এই বাঁহাতি। ১৯ বলে মোকাবিলা করে ২টি চারে ১৩ রান করেন তিনি। এরপর বাংলাদেশের ইনিংসের ৪৪ রানে ফের জোড়া উইকেট তুলে স্বাগতিকদের কোনঠাসা করে দেন প্যাটেল। নিজের তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে মাহমুদউল্লাহ ও আফিফ হোসেনকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকেরও সম্ভাবনা জাগান এই বাঁহাতি কিউই। মাহমুদউল্লাকে (৩) নিকোলসের ক্যাচে পরিণত করার পর অফিফকে বোল্ড করেন তিনি।

ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশের সপ্তম উইকেট তুলে নেন কোল ম্যাকোঞ্চি। তার বলে সোজা শট খেললেও দারুণ এক ক্যাচে তাকে ফেরান টম ব্লান্ডেল। এরপর এই স্পিনারেরই তৃতীয় শিকারে এলবি হয়ে মাঠ ছাড়েন সাইফউদ্দিন (৮)। আর নবম উইকেটে নামা নাসুম আহমেদ স্কট কুগেলিনের বলে বোল্ড হন। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মোস্তাফিজুর রহমান কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের বলে তুলে মারতে গিয়ে ব্যক্তিগত ৪ রানে ফেরেন।

মুশফিক ২০ রানে অপরাজিত থাকলেও তার ৩৭ বলের ইনিংস জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানের ইনিংসে কোনো বাউন্ডারিও ছিল না।

কিউই বোলারদের মধ্যে ক্যারিয়ার সেরা বল করে প্যাটেল ৪টি উইকেট পান। ৩টি উইকেট তুলে নেন ম্যাককোঞ্চি। এছাড়া একটি করে উইকেট পান রবীন্দ্র, কুগেলিন ও গ্র্যান্ডহোম।

টস জিতে এর আগে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ব্যাট করতে থাকেন নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার ফিন অ্যালেন ও রচিন রবীন্দ্র। করোনামুক্ত হয়ে এদিন প্রথম মাঠে নামেন অ্যালেন। ১৩ বলে ১৬ রানের এই জুটি অবশ্য নিজের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই ভেঙে দেন মোস্তাফিজুর রহমান। তুলে মারতে গিয়ে মিড অনে থাকা মাহমুদউল্লার কাছে ক্যাচে দিয়ে ফেরেন এই ডানহাতি।

মিরপুরের পাঁচ নম্বর পিচে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে উইল ইয়ংয়ের সঙ্গে ইনিংস মেরামত করতে থাকেন আরেক ওপেনার রবীন্দ্র। ২৭ বলে ৩০ রান করে ভালো কিছুর সম্ভাবনা জাগান তারা। তবে সেই সম্ভাবনায় কাঁটা হয়ে দাঁড়ান মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। এক ওভারেই তিনি তিন বলের ব্যবধানে কিউইদের দুটি উইকেট তুলে নেন। ইয়ং ও নতুন ব্যাটসম্যান কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে এলবির ফাঁদে ফেলেন ডানহাতি পেসার সাইফ। ২০ বলে ২০ রান করেছিলেন ইয়ং।

এরপর উইকেটে জমে যাওয়া রবীন্দ্রকে (২০) সরাসরি বোল্ড করে নিউজিল্যান্ড ইনিংসের ৫৮ রানের মাথায় ফেরান পার্টটাইম বোলার মাহমুদউল্লাহ। সুবিধে করতে পারেননি আগের ম্যাচের হাফসেঞ্চুরি করা কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথামও। ব্যক্তিগত ৫ রানে মেহেদী হাসানের বলে তাকেই ক্যাচ দেন।

শেষের গল্পটা অবশ্য নিউজিল্যান্ডের ষষ্ঠ উইকেট জুটির। ধীর এই পিচে খুব বেশি আক্রমণাত্মক খেলতে না পারলেও উইকেট আর বিলিয়ে দেননি হেনরি নিকোলস ও টম ব্লান্ডেল। শেষ অবধি অপরাজিত থেকে ৫৫ বলে ৬৬ রানের জুটি গড়ে মাঠ ছাড়েন। নিকোলস ২৯ বলে ৩টি চারের সাহায্যে ৩৬ রান করে অপরাজিত থাকেন। আর ব্লান্ডেল ৩০ বলে ৩টি চারে সমান ৩০ রানের হার না মানা ইনিংস খেলে মাঠ ছাড়েন। ১২৮ রানে থামে সফরকারীদের ইনিংস।

বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে ২ উইকেট নিয়ে সবচেয়ে সফল সাইউদ্দিন। এছাড়া একটি করে উইকেট পেয়েছেন মেহেদী, মাহমুদউল্লাহ ও মোস্তাফিজ। অনেক রেকর্ডের সম্ভাবনা থাকলেও কোনো উইকেট পাননি সাকিব আল হাসান। ৪ ওভারে ৬ ইকোনোমিতে ২৪ রান দেন তিনি।

ক্যারিয়ার সেরা বল করে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান আজাজ প্যাটেল।

আগামী ৮ সেপ্টম্বর একই ভেন্যুতে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।