অমি অনেকটা ফুসলিয়ে বোট ক্লাবে নিয়ে যান

ডিবি কার্যালয়ে জেরার মুখোমুখি হয়েছেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। এ সময় তিনি ছিলেন ধীরস্থির। গতকাল বিকালে তিনি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে দুই ঘণ্টা অবস্থান করে তার দেয়া অভিযোগের বিষয়ে গোয়েন্দাদের বিভিন্ন তথ্য দেন। এ সময় পুলিশ কর্মকর্তারা পরীমনির করা অভিযোগ ও মামলার বিভিন্ন বিষয় জানতে চান। জিজ্ঞাসাবাদের সময় গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তাকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এমনকি দ্রুত কাজে ফেরা এবং স্বাভাবিক জীবনে ফেরার বিষয়েও তারা পরামর্শ দেন। পরীমনি পুলিশ কর্মকর্তাদের জানান, অমি তাকে অনেকটা ফুসলিয়ে বোট ক্লাবে নিয়ে যান। তিনি ভেতরে ঢুকতে চাননি।

তাকে জোর করে অমি ভেতরে নিয়ে গেছেন। এরপর সেখানে তিনি মারধর, লাঞ্ছিত ও ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছেন। প্রথমে তিনি পুলিশের সহযোগিতা পাননি বলে সোস্যাল মিডিয়ায় কেন স্ট্যাটাস দিয়েছেন পুলিশের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তিনি বিষয়টি অনেকজনকে জানিয়েছেন। কিন্তু কেউ তার কথা পাত্তা দেয়নি।

সবাই তাকে বিষয়টি চেপে যেতে বলেছেন। পুলিশে আছেন এমন কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তারাও তার কোনো কথায় কর্ণপাত করেনি। এজন্য তিনি মনের ক্ষোভে থানায় কোনো সহযোগিতা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। তার সংগঠন শিল্পী সমিতি কেন তার এই দুর্দিনে পাশে দাঁড়ায়নি অন্য প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন যে, শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েজ খানের সঙ্গে গত ১ বছর ধরে মনোমালিন্য ছিল। এ কারণে তিনি তার সংগঠন থেকে কোনো সমর্থন পাননি। বোট ক্লাবে তিনি মাতাল অবস্থায় গিয়েছিলেন কি-না পুলিশ কর্মকর্তাদের এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি। পরীমনি ও পুলিশের বৈঠকে উপস্থিত এক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। তবে ডিবি কার্যালয়ে পুলিশের সঙ্গে দেখা করতে এসে পরীমনি সাংবাদিকদের অনেক প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেছেন।

গতকাল বিকাল ৩টা ৫৫ মিনিটে পরীমনি একটি সাদা প্রাইভেট গাড়িতে মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে যান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন চিত্র পরিচালক চয়নিকা চৌধুরীসহ তার কয়েকজন বন্ধু। এছাড়াও তার সঙ্গে একাধিক চিত্র পরিচালককে দেখা গেছে। তিনি ডিবি কার্যালয়ে ঢুকে সরাসরি চলে যান ঢাকা মহানগর উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মো. হারুনূর রশীদের কক্ষে। ওই কক্ষে ছিলেন ডিবি ডিসি (গুলশান) মো. মশিউর রহমান, জোনের এসি মো. খলিলুর রহমানসহ একাধিক ঊর্র্ধ্বতন কর্মকর্তা। দীর্ঘ ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিট পরীমনি পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন। সেখানে তিনি দুপুরের খাবারও খান।

ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে পরীমনি জানান, ‘আমার সঙ্গে যা হয়েছে, আমি আশাবাদী, আমি এর ন্যায়বিচার পাবো। পুলিশ ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে। আসামিদের গ্রেপ্তার করেছে। আমি সেদিন বলেছিলাম যে, আমাকে একটু আইজিপি মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দিন। উনি আমার কথা শুনলে নিশ্চয়ই আমি ন্যায়বিচার পাবো। এজন্য আমি শিল্পী সমিতি, পরিচালক-প্রযোজক সমিতির নেতাদের সহযোগিতা চেয়েছিলাম। তারা আমাকে সহযোগিতা করেননি। কিন্তু, আইজিপি বিষয়টি জানতে পেরে ব্যবস্থা নিয়েছেন। আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। আমি ডিবিতে নিজেই এসেছি। আমাকে তারা সাহস জুগিয়েছেন। আমি আবারও কাজে ফিরবো। পুলিশের কাছে এসে আমি আশ্বস্ত হয়েছি। মামলার প্রধান আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদ গ্রেপ্তারের আগে বলেছিলেন যে, পরীমনি মাতাল অবস্থায় ক্লাবে এসেছিলেন এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো উত্তর দেননি। সোস্যাল মিডিয়ায় দেয়া বক্তব্য এবং এখনকার বক্তব্য দুইরকম কেন এমন এক প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান পরীমনি।

এ সময় ঢাকা মহানগর উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মো. হারুনূর রশীদ জানান, আমরা পরীমনির কাছে ঘটনা নিয়ে কথা বলেছি। আমরা তাকে আশ্বস্ত করেছি, তার যে অভিযোগ, তা যথাযথভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো। তাকে নির্ভয় দিয়েছি। ঢাকা বোট ক্লাবে ঘটনার পর পরীমনি পুলিশ ও আইজিপি স্যারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন ঠিকই কিন্তু, প্রযোজক সমিতি ও শিল্পী সমিতি সেই সুযোগটা করে দেয়নি। এটিই পরীমনির অভিযোগ ছিল।

তিনি বলেন, পরীমনি পুলিশকে ধন্যবাদ দিতে ডিবি কার্যালয়ে এসেছিলেন। তিনি আরও জানান, মামলা রেকর্ড হওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পরীমনি বলেছেন, পুলিশ ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে এবং এটাও বলেছেন যেন, তিনি (পরীমনি) আইজিপি’র কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন এবং চলচ্চিত্র শিল্পীদের কাছে আবেদনও করেছিলেন। কিন্তু, তার (আইজিপি) কাছে যেতে পারিনি। এরপরও আইজিপি স্যার ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জানিয়েছেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে আসামিদের গ্রেপ্তার করি।

বনানী থানায় পরীমনির অভিযোগের বিষয়ে ডিবি’র এ যুগ্ম-কমিশনার বলেন, ঘটনার রাতে ৪টায় বনানী থানায় পরীমনি গিয়েছিলেন। কিন্তু, ওই সময় ওসি সাহেব থানায় ছিলেন না। থানায় অসুস্থতাবোধের কারণ হলো- সাময়িকভাবে পরীমনি বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। ওই সময় পরীমনি দ্রুত থানা পুলিশের সহায়তায় হাসপাতালে চলে যান। উনি (পরীমনি) ডিবি কার্যালয়ে এসে পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং মামলার যাবতীয় বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। পরীমনি পুলিশের কাছে অনুরোধ করেছেন, মামলাটি যেন সুষ্ঠুভাবে তদন্ত হয়। আমরা তাকে বলেছি যে, অপরাধ করলে কেউ ছাড় পাবে না।

তিনি আরও জানান, পুলিশ সবসময় চলচ্চিত্র সমিতি এবং যারা চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত আছেন সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করে। তাদের যেকোনো সমস্যায় পুলিশ এগিয়ে যাবে। আমরা মামলাটি শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে দেখভাল করবো, যাতে সুষ্ঠু বিচার হয়।

এদিকে কাজে কি সহসাই ফেরা হবে কিনা জানতে চাইলে পরীমনি মানবজমিনকে বলেন, যে ঘটনা ঘটেছে তাতে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। একটু সময় নিতে চাই। কাজের জন্য মানসিক প্রশান্তি দরকার। যতদিন সেটা আসছে না অপেক্ষা করতে চাই। অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার হয়েছে। বিষয়টি এখন আদালতে বিচারাধীন। কিন্তু আপনার অভিযোগ প্রমাণ হবে বলে মনে করেন কি? এ নায়িকা বলেন, আমার কাছে প্রমাণ যা ছিল সেগুলো দেয়া হয়েছে। সেদিনের সিসিটিভির ফুটেজ দেখলেও অনেক কিছু পরিষ্কার হবে। এগুলো দ্রুত সংগ্রহ করতে হবে।

নাসির-অমি ৭ দিনের রিমান্ডে: ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে চিত্রনায়িকা পরীমনির করা মামলায় গ্রেপ্তার নাসির ইউ মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিকে মাদকের মামলায় সাতদিন করে রিমান্ডে দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসি এই আদেশ দেন। এ ছাড়া একই ঘটনায় গ্রেপ্তার লিপি আক্তার (১৮), সুমি আক্তার (১৯) ও নাজমা আমিন স্নিগ্ধার (২৪) তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। একই সঙ্গে মামলাটি তদন্ত করে আগামী ১৮ই আগস্ট প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।

আদালত সূত্র জানায়, গতকাল বিকাল ৩টার কিছু আগে আসামিদের আদালতে হাজির করে ডিবি পুলিশ। তাদের ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। বিকাল সোয়া ৪টার দিকে তাদের এজলাসে তোলা হয়। ৪টা ১৭ মিনিটে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিএমপি’র গুলশান জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক (নি.) উদয় কুমার মণ্ডল আসামিদের ১০ দিন করে যে রিমান্ড আবেদন করেছিলেন তার ওপর শুনানি শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবুসহ কয়েকজন ১০ দিনেরই রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন। আব্দুল্লাহ আবু গণমাধ্যমকে বলেন, মামলাটি মাদকদ্রব্য আইনের। ঘটনার সূত্রপাত নায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা থেকে। এ মামলায় পরীমনি সাভার থানায় মামলা করেন। ডিবি পুলিশ অভিযান চালায় আসামিদের গ্রেপ্তারে। তারা খোঁজ পায় আসামিরা উত্তরার একটি বাসায় আছে। সেখান থেকে নাসির উদ্দিনসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বলেন, এরা বাড়ির মালিক না। সেখানে গিয়ে তারা আমোদ ফুর্তি করে। যা ঘৃণিত কাজ। সেখান থেকে মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। এ ধরনের ভদ্র মুখোশধারী লোকজন সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। বিভিন্ন লোকজনদের প্রলোভন, অভিনয় করে নিকৃষ্ট কাজে সম্পৃক্ত করছে। এই ঘটনার সঙ্গে আরও কারা জড়িত, কারা মাদক সরবরাহ করে তাদের চিহ্নিত করতে রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করি। আদালত এসব বিবেচনায় নিয়ে তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অপরদিকে, নাসির উদ্দিনের পক্ষে ঢাকা বারের সভাপতি আব্দুল, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মোহাম্মদ হযরত আলী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তারা বলেন, ঘটনা ৮ই জুনের। মামলা হয়েছে ৬ দিন পর। সেই মামলা থেকে এই মামলা এসেছে। দেখা যাচ্ছে মাদক উদ্ধারের কথা বলা হয়েছে মামলায়। কিন্তু নাসির উদ্দিন ওই বাসায় ছিলেন না। তাকে অন্য জায়গা থেকে গ্রেপ্তার করে এ বাসায় নিয়ে এসেছে। ওই বাসা কার তা তার দেখার বিষয় না। পরীমনির ওই ঘটনা না ঘটলে খালি বোতল, সোডার বোতল উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হতো না। তারা বলেন, নাসির উদ্দিনকে যে মামলায় গ্রেপ্তার করতে গেছেন, সেই মামলায় তো তাকে গ্রেপ্তার দেখাননি। বাসা তার না। তার শরীর থেকেও কিছু পাননি। বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আসলে বিষয় কিছু না। কিছুই পায়নি। ২৪ ঘণ্টা আগে তাকে গ্রেপ্তার করেছে। জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কিছুই পায়নি। তারা আরও বলেন, তিনি একজন সম্মানিত ব্যক্তি, ব্যবসায়ী। প্রেক্ষাপটের আলোকে এখানে আসতে হয়েছে। লাখ লাখ টাকা তিনি সরকারকে ট্যাক্স দেন। আর উনি গেছেন এসব মাদক খাটের নিচে রাখতে। তিনি ভিকটিমাইজ। সমাজের এলিট পার্সন। যেভাবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এতে তার মান-সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে। তিনি অসুস্থও। যা উদ্ধার করার তা হয়েছে। রিমান্ডের যৌক্তিকতা নেই।

তিন নারী আসামির পক্ষে মুহাম্মদ জুয়েল রিমান্ড বাতিল চেয়ে শুনানি করেন। তিনি বলেন, এদের অন্য জায়গা থেকে ধরে এনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা নির্দোষ। ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানে না। রিমান্ড বাতিল করে তাদের জামিনের প্রার্থনা করি। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত রিমান্ডের আদেশ দেন।

ধর্ষণ, হত্যাচেষ্টা ও মারধরের মামলা তদন্তের নির্দেশ: অপরদিকে, ধর্ষণ, হত্যাচেষ্টা এবং মারধরের অভিযোগে চিত্রনায়িকা পরীমনির দায়ের করা মামলাটির এজাহার গ্রহণ করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। আগামী ৮ই জুলাই মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন। ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট কামরুন্নাহার সাভার থানা পুলিশকে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এই তারিখ ধার্য করেন। আদালত প্রসিকিউশন মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ মানবজমিনকে জানান, সাভার থেকে মামলার এজাহার পৌঁছালে তা গ্রহণ করে আদালত। এরপর আদালত মামলাটির এজাহার গ্রহণ করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। এবং আগামী ৮ই জুলাই মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন।

গত সোমবার আবাসন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। এজাহারে বলেন, নাসির উদ্দিন মাহমুদ (৫০), অমি (৪১)সহ অজ্ঞাতনামা চারজনের বিরুদ্ধে এ মর্মে এজাহার দায়ের করছি যে, ৮ই জুন রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টায় আমার বর্তমান ঠিকানার বাসা থেকে আমার কস্টিউম ডিজাইনার জিমি, অমি, বনিসহ দুটি গাড়িযোগে উত্তরার উদ্দেশ্যে রওনা হই। পথিমধ্যে অমি বলে, বেড়িবাঁধের ঢাকা বোট ক্লাব লিমিটেডে তার দুই মিনিটের কাজ আছে। অমির কথামতো আমরা ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে গাড়ি দাঁড় করাই। কিন্তু বোট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অমি কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে। তখন ঢাকা বোট ক্লাবের সিকিউরিটি গার্ডরা গেট খুলে দেয়। তখন অমি অনুরোধ করে, এখানে পরিবেশ সুন্দর, তোমরা নামলে নামতে পারো। আমরা ঢাকা বোট ক্লাবে ঢুকে টয়লেট ব্যবহার করি। টয়লেট থেকে বের হওয়ার পর ১ নম্বর বিবাদী নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমাদের ডেকে বারের ভেতরে বসার অনুরোধ করেন এবং কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেন। আমরা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে অমিসহ ১ নম্বর আসামি মদ্যপান করার জন্য জোর করেন। পরীমনি এজাহারে আরও বলেন, মদ্যপান করতে না চাইলে ১ নম্বর আসামি জোর করে আমার মুখের মধ্যে মদের বোতল ঢুকিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করে। এতে আমার সামনের দাঁত ও ঠোঁটে আঘাত পাই। ১ নম্বর আসামি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্পর্শ করে এবং আমাকে জোর করে ধর্ষণের চেষ্টা করে। ১ নম্বর আসামি উত্তেজিত হয়ে টেবিলে রাখা গ্লাস ও মদের বোতল ভাঙচুর করে আমার গায়ে ছুড়ে মারে। তখন আমার কস্টিউম ডিজাইনার জিমি ১ নম্বর আসামিকে বাধা দিতে চাইলে তাকেও মারধর করে। এ সময় আমি ৯৯৯ এ কল করতে গেলে আমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি টান মেরে ফেলে দেয়া হয়। ২ নম্বর আসামিসহ অজ্ঞাতনামা চারজন ১ নম্বর আসামিকে ঘটনা ঘটাতে সহায়তা করে।