করোনায় পশ্চিমা দেশগুলোতে যেসব চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে! আবারো চিকিৎসা সংক্রান্ত অনেক প্রশ্ন, অনুরোধ পাচ্ছি নিয়মিত। তাই একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দিচ্ছি পশ্চিমা দেশগুলোতে কি কি চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে সেসবের উপর ভিত্তি করেঃ

১. প্রথমত যার অক্সিজেন লেভেল ভালো আছে। অর্থাৎ রুম এয়ার- এ ৯৪ % এর উপরে থাকলে কোনো ঔষধ খাবার দরকার নেই। হাসপাতালে ভর্তি হবারও দরকার নেই। ২. একটা কাজ করবেন এই সময়ে – দিনে দুবার করে ছয় মিনিট হাঁটার শেষ পর্যায়ে অক্সিজেন লেভেল মাপুন ও দেখুন অক্সিজেন লেভেল ড্রপ করছে কিনা!

৩. অক্সিজেন লেভেল রেস্ট – এ অথবা এক্সারসাইজ -এ ড্রপ করলে স্টেরোয়েড ট্যাবলেট শুরু করতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শে! স্টেরোয়েড গ্রূপ -এ ডেক্সামিথাসন (ওরাডেকসন) ট্যাবলেট ছয় মিগ্রা ভরা পেটে দিনে একবার দশদিনের জন্য! বিকল্প হিসেবে প্রেডনিসোলোন ক্যাপসুল/ট্যাবলেট ৪০ মিগ্রা ভরা পেটে দিনে একবার খাওয়া যেতে পারে দশদিনের জন্য।

৪. অসুখ শুরু হবার প্রথম সাতদিনের মধ্যে হলে remdesivir ইনজেকশন ব্যবহার করা যায়। অনেক গবেষণায় এর কোন কার্যকারিতা প্রমাণিত হয় নি। একটি গবেষণায় বলা হয়েছে remdesivir ব্যবহার করলে অনেক রোগী হাসপাতাল থেকে আগে ছাড়া পেতে পারেন, তবে স্টেরোয়েড এর মতো remdesivir মৃত্যুর হার কমাতে পারে না! ও হো (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) গাইডলাইনে Remdesivir রিকমেন্ড করা হয় নি।

৫. যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং যাদের অক্সিজেন লেভেল খুব দ্রুত ড্রপ করছে ও সিআরপি খুব হাই হয়ে যাচ্ছে – স্টেরোয়েড এর সাথে একমাত্র এক ডোজ টোসিলিজুম্যাব দেয়া যেতে পারে বিশেষায়িত হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্বাবধানে! টোসিলিজুম্যাব না পাওয়া গেলে ব্যারিসিটিনিমাব কার্যকর হতে পারে।
তবে ব্যারিসিটিনিমাব নিয়ে এখন পর্যন্ত বড় ট্রায়াল হয় নি! তবে ব্যারিসিটিনিমাব নিয়ে আমি আশাবাদী!

৬. সিটি স্ক্যান বা ভি কিউ স্ক্যান প্রমাণিত ব্লাড ক্লট না থাকলে ট্রিটমেন্ট ডোজ এর এন্টিকোয়াগুলেশন/ব্লাড থিনার এর কোনো ব্যবহার/কার্যকারিতা নেই! হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের ক্ষেত্রে প্রিভেন্টিভ ডোজের এন্টিকোয়াগুলেশন দেয়া বিজ্ঞানসিদ্ধ। প্রিভেন্টিভ ডোজ হচ্ছে Clexane ৪০ (চল্লিশ) মিগ্রা দিনে একবার করে যদি কিডনি ফাংশন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক থাকে! কিডনি ফাংশন/ল্যাব টেস্ট সামান্য এবনরমাল হলেও Clexane দেয়া যাবে না -তখন হেপারিন দিতে হবে ৫০০০ মিগ্রা করে দিনে দু-তিন বার। কেউ বাসায় থেকে চিকিৎসা নিলে এই ব্লাড থিনার এর কোনো প্রয়োজন নেই! যেই চিকিৎসকরা এ কাজটা করছেন – দয়া করে এটা বন্ধ করুন। ব্লাড ক্লট প্রিভেন্ট করার জন্য একটিভ থাকা ও নিয়ম করে হাঁটাচলা করা খুব জরুরি!

৭. কনভ্যালেসেন্ট প্লাজমা নিয়ে অনেক কন্ট্রোভার্সি হচ্ছে – এটার কার্যকারিতা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় দেখা দিয়েছে! বাংলাদেশের রিয়েলিটিতে যেখানে এন্টিবডি টাইটার এভেইলেবল না – সেই পরিস্থিতিতে কনভ্যালেসেন্ট প্লাজমা ব্যবহার না করাই ভালো! আমি এটা আর ব্যবহার করি না।

৮. এর বাইরে স্ক্যাবো, জিঙ্ক, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি ইত্যাদির কোনোটাই প্রমাণিত না। যুক্তরাষ্ট্রের/যুক্তরাজ্যের কোনো বড় হাসপাতালে এগুলো ব্যবহার করা হয় না। গত এক বছর হাজার হাজার করোনা রোগীর চিকিৎসা করেছি এবং কাউকেই এই ঔষধগুলো প্রেসক্রাইব করিনি!
৯. হাসপাতালে রোগীর অবস্হা খারাপ হয়ে গেলে ভেন্টিলেটর- এ দেয়া যত দেরি করা যায় তত ভালো!
১০. হাসপাতালে ভর্তি রোগীর জ্বর আসলে অথবা WBC কাউন্ট বেড়ে গেলে তখনই এন্টিবায়োটিক দেবার কথা ভাবা উচিত – এর আগে নয়!

১১. আইসিইউ তে ARDS হয়ে গেলে ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞর তত্বাবধানে ARDS এর স্ট্যান্ডার্ড চিকিৎসা দেয়া ছাড়াও তিন দিনের জন্য হাইয়ার ডোজের (২০ মিগ্রা তিন দিন) স্টেরোয়েড দেয়া যেতে পারে!

১২. প্রাইভেট রুম ছাড়াও নেগেটিভ এয়ার ফ্লো রুম ছাড়া নেবুলাইজার বা বাইপ্যাপ ইত্যাদি ব্যবহার করা সেফ না!

১৩. করোনা হলেই চেষ্ট সিটি স্ক্যান করার কোন প্রয়োজন নেই। চেষ্ট সিটি স্ক্যান তখনই করতে হবে যখন পালমোনারি এম্বোলিজম (জমাট বাধা রক্ত) সন্দেহ হবে! তবে এক্ষেত্রে সিকন্ট্রাষ্ট টি এনজিওগ্রাম করতে হয় যা তেমন করা হয় বলে মনে হয় না! এছাড়া করোনা হলেই পয়সা খরচ করে চেষ্ট সিটি স্ক্যান করার প্রবণতা থেকে সরে আসতে হবে!

১৪. নিয়ম করে মুড়ি মুড়কি এক দরের মতো – সবাইকেই সিআরপি ফেরিটিন ও ডিডাইমার করতে পাঠানোর দরকার নেই! সিআরপি করা যেতে পারে সাইটোকাইন স্টর্ম সন্দেহ করলে (রোগীর খুব দ্রুত অবনতি হতে থাকলে) – টোসিলিজুম্যাব দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য!

১৫. সবচেয়ে বড় কথা – হাসপাতালে যত কম ভর্তি করানো যায় – অক্সিজেন প্রয়োজন ছাড়া – ততই ভালো। একজনের অক্সিজেন প্রয়োজন ২ লিটার এ নেমে আসলে অক্সিজেন ট্যাংক দিয়ে বাড়ি ছেড়ে দিন!

[লেখকঃ যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের অরল্যান্ডো রিজিওনাল হেলথ সেন্টারের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং ট্রেনিং পরিচালক]