কর্মসংস্থানের দাবিতে চট্টগ্রামে কর্মপ্রত্যাশীদের নিবন্ধন কর্মসূচির উদ্বোধন

যুবদের কাজের ব্যবস্থা করতে না পারলে বেকার ভাতার দাবি করেছে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলা। আজ ২৬ মার্চ ২০২১ সকাল ১১.০০টায় সিনেমা প্যালেস মোড়ে দেশের বিদ্যমান বিপুল বেকার জনগোষ্ঠীর সাথে নতুন করে যুক্ত হওয়া করোনাকালীন কর্মহীন হয়ে পড়া যুবদের কর্মসংস্থানের দাবিতে সমাবেশ ও কর্মপ্রত্যাশীদের নিবন্ধন কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।
উক্ত কর্মসূচিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকারিভাবে কর্মপ্রত্যাশীদের জন্য অনলাইন নিবন্ধন কেন্দ্র চালু করতে হবে এবং নিবন্ধিত যুবদের এক বছরের মধ্যে কাজের ব্যবস্থা করতে। অন্যথায় পরবর্তী দুই বছর বেকার ভাতা দিতে হবে। ভাতা চলাকালীন যুবদের দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
উক্ত কর্মসূচি থেকে সরকারি শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগ সংকট দূর করা, আউটসোর্সিং নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধ এবং ঘুষ ছাড়া চাকরির নিশ্চয়তার দাবি জানান যুব ইউনিয়নের নেতবৃন্দ।
বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি রিপায়ন বড়ুয়ার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল শিকদার, সহ সভাপতি আবদুল হালিম, সহকারী সাধারণ সম্পাদক জাবেদ চৌধুরী, রুপন কান্তি ধর, সাংগঠনিক সম্পাদক রাশিদুল সামির এবং সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি এ্যানি সেন।
বক্তারা আরো বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তিতে আমাদের দেশে ১ কোটি ১০ লক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক, ২ কোটি ৩০ লক্ষ কৃষি শ্রমিক এবং আরো প্রায় ৩ কোটি ২০ লক্ষ অন্যান্য পেশার শ্রমজীবী মানুষের কারোর জন্যই আর্থিক, সামাজিক বা স্বাস্থ্যগত সুরক্ষা নিশ্চিত হয়নি। করোনা মহামারীতে সরকার ধনীক শ্রেণির স্বার্থে ব্যবসায়ীদেরকে রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা দিলেও বিদেশ ফেরত শ্রমিক কিংবা করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়াদের জন্য কোনো প্রণোদনা দেয়নি। সাধারণ মানুষ আরো নিঃস্ব হয়েছে। দেশের ৩% ধনীর বিপরীতে ৯৭% সাধারণ মানুষ। দেশের এক চতুর্থাংশ কর্মক্ষম মানুষের পূর্ণকালীন কাজের ব্যবস্থা নেই। ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর দেয়া তথ্যানুযায়ী সরকারি চাকরিতে ৩ লক্ষ ৬৯ হাজার ৪৫১টি শূন্যপদ রয়েছে। দেশের উচ্চশিক্ষিত যুবদের ৪৭ শতাংশের কাজ নেই। দেশের এই বিপুল এই কর্মহীন যুবদের সাথে করোনাকালীন পরিস্থিতিতে যোগ হয়েছে আরো কোটি বেকার। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি বলছে করোনাকালে ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে ৩১-মের মধ্যে ৩ কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছে। কমপক্ষে ১৪ লক্ষ প্রবাসী শ্রমিক বেকার হয়েছে। ফরম্যাল সেক্টরে ১৩ ভাগ মানুষ চাকরিচ্যুত হয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে দেশের ৭২% মানুষের আয় কমেছে। এ অবস্থায় দেশের বিপুল কর্মহীন যুবকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কর্মসংস্থানের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সেজন্য কর্মহীন প্রকৃত কর্মপ্রত্যাশীদের কর্মসংস্থানের আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে কাজ করবে আমাদের এ নিবন্ধন কর্মসূচি।
সমাবেশ থেকে সরকারের প্রতি ৭ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো :
১. করোনাকালীন কর্মহীন  হয়ে পড়া যুবদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজের ব্যবস্থা কর।
২. করোনাকালীন প্রবাস ফেরত যুবদের প্রবাসে কর্মে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত কর।
৩. সরকারি শূন্যপদে নিয়োগ সংকট দূর কর। আউটসোর্সিং কমিশন বাণিজ্য বন্ধ কর।
৪. ঘুষ ছাড়া চাকরি চাই। নিয়োগ ও বদলিতে বাণিজ্য-দুর্নীতি বন্ধ কর।
৫. কর্মসংস্থান ব্যাংকের সচ্ছতা নিশ্চিত করে সহজ শর্তে যুবদের ঋণ প্রদান কর।
৬. জাতীয় বাজেটের ৫% কর্মসংস্থানের জন্য পৃথক বরাদ্দ দাও।
৭. কর্মপ্রত্যাশীদের জন্য অনলাইন নিবন্ধন কেন্দ্র চালু কর। নিবন্ধিত যুবদের এক বছরের মধ্যে কাজের ব্যবস্থা কর। অন্যথায় পরবর্তী দুই বছর বেকার ভাতা দাও।