চট্টগ্রামের যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের বিপ্লব দৃশ্যমান হচ্ছে

বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবাইদুল কাদের বলেছেন, শেখ হাসিনা সরকার চট্টগ্রামের উন্নয়নকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করছে। চট্টগ্রামের যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের বিপ্লব দৃশ্যমান হচ্ছে। চীনের সাংহাই নগরীর মতো ওয়ান সিটি টু টাউন মডেলে গড়ে উঠছে বীরপ্রসবিনী চট্টগ্রাম। মঙ্গলবার (২ মার্চ) সকালে চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট-বোয়ালখালী সড়কে বিআরটিসির বাস সার্ভিসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে দেশের প্রথম চারলেন বিশিষ্ট বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ এগিয়ে চলেছে। মীরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত আরেকটি মেরিন ড্রাইভ সড়ক করার পরিকল্পনা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে চার লেন এবং ছয় লেনে উন্নীত করণের কাজ শুরু করতে যাবো। মন্ত্রী জানান, এছাড়া চট্টগ্রামে মেট্রোরেল স্থাপনের পরিকল্পনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়েছেন। মেট্রোরেল নির্মাণে আমরা প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছি। এরমধ্যে পটিয়া বাইপাস সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। শাহ আমানত সেতু সড়ক চার ও ছয় লেনে উন্নীত করণের কাজ সম্পন্ন। মহাসড়কের কেরানীহাট, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়ায় ৫টি ফ্লাই ওভার নির্মাণের প্রস্তুতিমূলক কাজ চলছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত কালুরঘাটে সড়ক কাম রেলওয়ে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। আগামী জুন মাসের মধ্যে এ সেতুর ডিজাইনের কাজ শেষ হবে। বক্তব্যে শুরুতে তিনি বলেন, পরিবহণ একটি সেবা খাত। সম্যক যাত্রী সাধারণকে পরবিবহণ সেবার আওতায় আনার জন্য শেখ হাসিনা সরকার গণপরিবহণের সক্ষমতা বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে বিআরটিসি বহরে বাস সংখ্যা বৃদ্ধি। বর্তমানে ১৩শর বেশি বিআরটিসির বাস চালু রয়েছে। চট্টগ্রাম বাস ডিপোতে অনেকগুলো গাড়ী পড়ে আছে। এগুলো মেরাতমত করার জন্য আমি বিআরটিসির নতুন চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করবো। এটি যতো দ্রুত সম্ভব করতে হবে। যে মেরামতযোগ্য সেগুলো কেন দিনের পর দিন বছরের পর বছর পড়ে থাকবে। এভাবে চলতে থাকলে তো গাড়ী আর থাকবে না। এসময় তিনি বলেন, বিআরটিসির কর্মকর্তা যারা আছেন আপনার বেবিকে আপনি যদি নিজেই গলা টিপে মারেন, তাহলে রক্ষা করবে কে ? বিআরটিসিকে যতœ করে লালন পালন করা কর্মকর্তা কমচারীদের দায়িত্ব। চালু থাকা বাসগুলো ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বিআরটিসির সুনামের ধারা তা ফিরিয়ে আনতে হবে। যাত্রী সাধারণ বিআরটিসিতে চলাচল করতে অনেকেই আগ্রহী। বাসগুলোর যতœ নেওয়া হলে মানুষ আরো আগ্রহী হবেন। দক্ষ প্রশিক্ষিত চালকের অভাব রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, নতুন করে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে চারটি জেলায় এর কার্যক্রম চলছে। এ সপ্তাহেই ৮টি বিভাগীয় অফিসে থেকে এ কার্যক্রম শুরু হবে। অচিরেই যন্ত্রপাতি সংযুক্ত করে ৬৪টি জেলা থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করা হবে। এতে মাসের পর মাস আর অপেক্ষা করতে হবে না। নিজ জেলা থেকেই ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করা যাবে। বিআরটিসি গাড়ী পরিচালনার পাশাপাশি দক্ষ চালক তৈরিতেও কাজ করছে। দেশে অনেক বেকার জনশক্তি রয়েছে। বিদেশে গাড়ী চালকের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। অদক্ষ চালকের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা তৈরিতে বিআরটিসির ৩টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। সম্প্রতি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো শক্তিশালী ও আধুনিকায়নে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। গাড়ী চালনায় নারীদেরও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তোলা দরকারের কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, নারীরা ঠা-া মাথায় গাড়ী চালায় সেখানে দূঘর্টনার ঝুঁকি কম। সেইজন্য গাড়ীতে নারী চালকের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। বিদেশে উন্নত দেশগুলোতে নারী গাড়ী রয়েছে এমনকি প্রতিবেশি দেশ ভারতেও নারী চালকের সংখ্যা একেবারেই কম নয়। স্কুল বাস সার্ভিসে নারীদের শতভাগ সম্পৃক্ত করতে যাতে পারি সেই ব্যবস্থা করা দরকার। বোয়ালখালী সিরাজুল ইসলাম ডিগ্রী কলেজ মাঠে আয়োজিত উদ্বোধনী এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম-৮ আসনের সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমদ। এতে উপস্থিত ছিলেন, বিআরটিসি চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নুরুল আলম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আছিয়া খাতুন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী প্রমুখ।