এবার শিমের বাম্পার ফলনে আয় দেড়শো কোটি টাকা

সীতাকুণ্ডে এবার শিমের বাম্পার ফলনে ১৫০ কোটি টাকা আয় হয়েছে। এতে কৃষকদের সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা, মুখে ফুটেছে হাসি।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, এ অঞ্চলের দক্ষিণে শিল্প কারখানার কারণে বিশাল কৃষি ফসলী জমি নষ্ট হয়ে গেলেও উত্তরে কৃষি ফসলী জমি থাকার ফলে শিম চাষে এবার কৃষকরা অনেক লাভবান হন। প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়। বিশেষ করে ৬ নম্বর ইউনিয়ন থেকে ১ নম্বর ইউনিয়ন পর্যন্ত শিমের চাষ হলেও ৬ নম্বর বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নে শিমের চাষ একেবারে কম। কারণ, ৬ নম্বর ইউনিয়নের কৃষি জমিকে অকৃষি জমি দেখিয়ে ভূমিদস্যুদের মাধ্যমে নিরীহ কৃষকদেরকে বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে কৃষি জমিগুলো খরিদ করে শিল্প কারখানা গড়ে তোলে। এতে কৃষি ফসলী জমি কমে গিয়ে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যায়। বারৈয়াঢালা ইউনিয়ন, নুনাছড়া, বটতল, শেখপাড়া, গোপ্তাখালি, নডালিয়া, গুলিয়াখালী, শেখেরহাট, বহরপুরসহ মোট ৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার আনাচে কানাছে শিমের চাষ করে বাম্পার ফলন হয়। কৃষকরা এই শিম উৎপন্ন করে কেউ তাদের পুরো জমিতে, কেউ জমির আইলে, কেউ খালের পাড়ে, কেউ বেড়িবাঁধের দুই পাশে, কেউ ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশসহ সব খানেই চাষীরা শিমের চাষ করেন। তবে বেশির ভাগ চাষী জমির মধ্যে শীতকালীন অন্যান্য সবজির চাষ করেন। এছাড়া জমির চারপাশের আইলেও শিম চাষ করেন। বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের উত্তর ফেদাইনগর গ্রামের শিম চাষী জসিম উদ্দিন বলেন, সে বংশ পরস্পরায় কাত্তিকোটা, ছুরি, পুঁটি ও বাটাসহ ছয় ধরনের শিম চাষ করে আসছেন। মৌসুমের প্রথম থেকে শুরু করে মাঝামাঝি পর্যন্ত পরিপক্ব শিম পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন। এরপর দাম কমে গেলে আরও পরিপক্ব কাঁচা শিমের বিচি খুলে প্রতি কেজি বিচি ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করেন।

এ অঞ্চলে শিমের বিচি ‌‘খ্যাইসা’ নামে খ্যাত। আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে ২০ টন করে সর্বমোট ৬০ হাজার টন শিম উৎপাদন হয় বলে কৃষকরা জানায়। ফলে প্রতি কেজি শিম ২৫-৩০ টাকা মূল্যে হিসাব করলে এবার ৬০ হাজার টন শিম প্রায় ১৫০ কোটি টাকার শিম বিক্রি করেন কৃষকরা। এই শিমের বিচিও ইপসা নামক একটি এনজিও বিদেশে রপ্তানি করে রেমিটেন্স আয় করে। এদিকে, এলাকার অভিজ্ঞ মহলের ধারণা, সরকার যদি সীতাকুণ্ডের উৎপাদিত শিম ও শিমের বিচি বিদেশে রপ্তানির জন্য প্রান্তিক চাষি বা ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক সহযোগিতা করে তাহলে দেশের এই সম্ভাবনা খাত থেকে বিপুল পরিমান রাজস্ব আদায়সহ এ খাতে নিয়োজিত বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অর্থনৈতিকভাবে অনেক লাভবান হবে।অপরদিকে, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র নাথ বলেন, দক্ষিণ সীতাকুণ্ডে কৃষি ফসলি জমি কম এবং শিল্প কারখানা বেশি। তবে, বর্তমানে উত্তর সীতাকুণ্ডে চাষাবাদের জমি বেশি। শীতকালে এ উপজেলায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে শাক সবজির চাষ হয়। এর মধ্যে শিমের চাষ হয় প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে।

তিনি আরো জানান, দেশের অন্যান্য স্থানে একই জমিতে তিনবার চাষ হয়- আমন, আউশ ও বোরো ধান। কিন্তু সীতাকুণ্ডে বোরো ধানের বদলে চাষীরা অন্যান্য শাক সবজিসহ শিমের চাষ করেন বেশি।