ঘুমধুমে ১৫টি ইটভাটায় পুড়ছে বনের কাঠ

কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া।
কক্সবাজারের উখিয়ার পার্শ্ববর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ী ও ঘনবসতি এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তর, ঘুমধুম পুলিশ, লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজ করে প্রায় ১৫টি ইটভাটায় জ্বলছে ইট পুড়ছে বনের কাঠ। ধ্বংস হচ্ছে বনসম্পদ ও পরিবেশ। কিন্তু দেখার কেউ নেই।
পরিবেশ সম্মত স্থান কাল ও পাত্র ভেদে ইট তৈরির বাধ্যবাদকতা থাকলেও এখানেই তা মানা হচ্ছে না। প্রভাব বিস্তার ও কালো টাকা ব্যবহারের মাধ্যমে লোকালয়ে সম্পূর্ণ অবৈধ উপায়ে তৈরি করা হচ্ছে পাকা স্থাপনা তৈরির অন্যতম উপকরন ইট। ইট তৈরি ও পুড়ানোর ক্ষেত্রে বনসম্পদ ব্যবহারের উপর পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ভাটা মালিকেরা লোক দেখানো কিছু পরিমান কয়লা মজুদ করে পেছনের দরজা দিয়ে ইট ভাটায় জ্বালানি  হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে ব্যাক্তি মালিকানাধিন সামাজিক বনায়নের কাঠ ও বন সম্পদ। এমনকি লোকালয় থেকে ফলজ ও বনজ গাছ কম মূল্যে ক্রয় করে ইট ভাটায় পুড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। ইট ভাটায় স্থাপন করা চিমনির কালো ধুঁয়ায় স্থানীয় পরিবেশ দূষিত হয়ে কৃষিজাত পন্যের উপর প্রভাব পড়ছে।
পাশাপাশি ইট ভাটা সংলগ্ন বসতি গুলোতে বয়োবৃদ্ধ ও শিশুরা করোনা রোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ বললেন, অবৈধ ইট ভাটার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘুমধুম চাইল্যাতলীর ইটভাটার মালিক সাগর সাংবাদিকদের জানান, পুলিশ, বন কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাসিক টাকা দিয়ে ইট ভাটা চালিয়ে যাচ্ছে। সে আরো বলেন, টাকা থাকলে বনের কাঠ কেন মানুষ হত্যা করলেও কোন অসুবিধা নেই। এদেশে টাকাইসব।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদর, সোনাইছড়ি, ঘুমধুমের চাইল্যাতলী সাগর, আজু খাইয়ায় শহিদুল আলম, আবুল কালাম মেম্বার ও রেজু আমতলীর ছৈয়দ হোসেন, খুনিয়াপালংয়ের আলমগীর, রেজু পাত্রাঝিরির হায়দার আলী ও হলদিয়া পাতাবাড়ী, ইউপি সদস্য ফজল করিম, পাতাবাড়ী খেওয়াছড়ি বাদশাহ মেম্বার, মধ্যম হলদিয়া আব্দুস ছবুর কোম্পানি মালিকানাধীন কয়েকটি ইট ভাটা ঘুরে দেখা যায়, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ির ১৫ টি ভাটার সামনে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য কিছু পরিমান কয়লা মজুদ রাখা হলেও তা ব্যবহার করা হচ্ছে না। ইট ভাটার পেছনে গিয়ে দেখা যায়, শতশত টন কাচা লাকড়ী মজুদ রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী শামশুল আলম সাওদাগর সহ আরো কয়েকজন গ্রামবাসী অভিযোগ করে জানান, উখিয়ার ফলিয়া পাড়া এলাকার মনক্রু ও দোছড়ির ফরিদ এর নেতৃত্বে একটি বৃহত্তর সিন্ডিকেট উখিয়ার জারাইলতলী, হরিণমারা, দোছড়ি সড়ক দিয়ে অবৈধ ডাম্পার যোগে সামাজিক বনায়নের কাঠ ইট ভাটায় পাচার করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
ইট ভাটার চিমনি থেকে নির্গত কালো ধুঁয়ায় এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠলেও দেখার কেউ নেই। স্থানীয় স্কুল শিক্ষক হেলাল উদ্দিন জানান, ইট ভাটার কালো ধুঁয়ায় শিক্ষার্থীরা ও এলাকার বয়োবৃদ্ধরা শ্বাস কষ্টেরমত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। স্থানীয় কৃষক নজু মিয়া জানান, ইট ভাটার কারনে শীতকালিন শাকসবজির মারাত্নক অবনতি ঘটছে। এব্যাপারে ভাটা মালিক আবুল কালাম মেম্বারের সাথে যোগাযোগ করে জানতে চাওয়া হলে, তার ইট ভাটার বৈধতা আছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে সে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। তবে মজুদ করা জ্বালানি কাঠের ব্যাপারে জানতে চাইলে সে জানান, উখিয়ার কাঠ ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে কাঠ গুলো নিচ্ছে বলে তিনি স্বীকার করেন। এ ভাবে প্রতিটি ইট ভাটায় বুলড্রেজার দিয়ে পাহাড় কাটা মাটি ও ফসলী জমির মাটি কেটে অবৈধ ভাবে ইট তৈরির ফলে পরিবেশের মারাত্নক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে ভুক্তভোগী গ্রামবাসীর অভিযোগ।
হলদিয়া পালং ইউনিয়নের পাতাবাড়ী এলাকার ডালিম অভিযোগ করে জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বিহীন যত্রতত্র গড়ে উঠা অবৈধ ইট ভাটায় কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি হিসাবে নির্বিচারে বনজসম্পদ পুড়ানো হলেও বন কর্মীরা নির্বিকার। তিনি বলেন, পাহাড় কাটা মাটি, বনসম্পদ ধ্বংসের পাশাপাশি কৃষি জমির মাটি কর্তনের ফলে একদিকে যেমন জমির উর্বরাশক্তি হ্নাস পাচ্ছে অন্যদিকে প্রাকৃতিক পরিবেশের চরম অবনতি হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম জানান, অবৈধ ইট ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।