দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে যুক্তরাষ্ট্রে

করোনার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে। মার্কিন সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, করোনার কারণে গত বছর দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি কমেছে ১০ শতাংশেরও বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বৃহত্তম উৎস দেশ চীন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ।
জানা গেছে, করোনা শুরু হওয়ার আগে থেকেই মার্কিন পোশাকের বাজার উত্থান-পতনের মধ্যে ছিল। এর মধ্যে করোনার আঘাত দেশটির তৈরি পোশাক আমদানিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। এর ধারাবাহিকতায় দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানির দিক থেকে বাংলাদেশের চেয়ে ভিয়েতনাম সব সময়ই এগিয়ে ছিল। কিন্তু করোনা মহামারির প্রভাবে প্রতিযোগিতায় দুই দেশের মধ্যে ব্যবধান আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

তারা আরো জানিয়েছেন, আমাদের পোশাকের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রে যদি রপ্তানির ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকে, তাহলেই দেশের রপ্তানি খাতের পুনরুদ্ধার হবে, নইলে হবে না। কারণ যে দেশ বা অঞ্চলেরই হোক না কেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ভোক্তা বা গ্রাহকের ক্রয়ের অভ্যাস ও ক্ষমতা একটি বড় নিয়ামক। তাই ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা থাকলে সেটার ব্যবহার করতে হবে।
মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলসের (ওটিইএক্সএ) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৯ সালে বিশ্ববাজার থেকে ৮ হাজার ৩৭০ কোটি ৫০ লাখ ডলারের পোশাক আমদানি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। সেখান থেকে ২৩.৪৬ শতাংশ কমে গত বছর এ আমদানির পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ হাজার ৪০৭ কোটি ডলারে। এ সময় শীর্ষ ১০ উৎস দেশের মধ্যে ৯টি থেকেই আমদানি কমিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাড়িয়েছে শুধু কম্বোডিয়া থেকে। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনাম থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানি ৭.২৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৫৭ কোটি ডলারে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে এ রপ্তানির পরিমাণ নেমে এসেছে ভিয়েতনামের অর্ধেকেরও নিচে। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের ১১.৭৩ শতাংশ কমে নেমে এসেছে প্রায় ৫২৩ কোটি ডলারে। এ সময় শীর্ষ ১০ উৎস দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র পোশাক আমদানি সবচেয়ে বেশি কমিয়েছে চীন থেকে। গত বছর চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি কমেছে ৩৯ শতাংশের বেশি।
পোশাক রপ্তানিকারকরা বলেন, পোশাক খাতের বৈচিত্র্য আনা একটি মৌলিক প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনা আমাদের সেটাই শিখিয়ে দিচ্ছে। এটাই এখন বাস্তবতা। অপ্রচলিত বাজারে আমাদের রপ্তানি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে এ মহামারির ক্ষতি থেকে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারই প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা বলছেন, জাপান মোটেও কম ধনী নয়। কিন্তু দেশটির ভোক্তারা এত বেশি পরিমাণে পোশাক কেনেন না। পোশাক সবচেয়ে বেশি ক্রয় করেন যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তারা। এক্ষেত্রে প্রধান নিয়ামক ক্রয়াভ্যাস। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপান বাদ দিলে বড় বাজারগুলোর মধ্যে থাকে ভারত। কিন্তু ভারত নিজেই পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক। আবার বাংলাদেশের প্রতিযোগীও বটে। তুরস্কও বাংলাদেশের প্রতিযোগী। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ায় জনসংখ্যা কম হওয়ায় দেশটির ক্রয়াদেশগুলোও ছোট আকারের।