দখিনা হাওয়ার দিন আসছে

দখিনা হাওয়ার দিন আসছে। মুছে যাচ্ছে শীতের রিক্ততা। চার দিন পরেই ফাল্গুন। ঋতুরাজ বসন্ত। বিদায় নিচ্ছে ভোরের কুয়াশা। মাঘের রুক্ষ, উত্তুরে হিমেল দিন শেষ হয়ে এলো। বনতল, গাছে গাছে আমের বোল, পুষ্প, শিমুল-পলাশ ফুটে প্রকৃতিকে রাঙিয়ে, পাখিরা কণ্ঠে গান তুলে ঋতুরাজের আগমনি বার্তা দিচ্ছে। সাজতে শুরু করেছে প্রকৃতি। তাপমাত্রা ঊর্ধ্বমুখী।

সোমবার আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাস দিয়েছে, আজ থেকে দিনে দিনে তাপমাত্রা বাড়বে। আগামী দুই দিন সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমলেও দিনের তাপমাত্রা বাড়বে। আক্ষরিক অর্থে শীত বিদায় নিচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, জলীয় বাষ্পের জোগান বেড়ে যাওয়ায় আকাশে মেঘ জমেছিল। সোমবার তা সরে গেছে। মেঘ সরে যাওয়ার ফলে শীতের অনুভূতি বাড়তে পারে দুই-তিন দিন। তবে দিনে তাপমাত্রা সেভাবে কমবে না।

বিশেষ করে দেশে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কোথাও কোথাও আবারও শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে। এর ফলে শীতের অনুভূতি বেড়ে যাবে। কার্যত এখন শীতের বিদায়বেলা। ধীরে ধীরে শীত বিদায় নেবে। ভোর বা রাতে শীতের আমেজ থাকলেও বেলা গড়ালেই তাপ বাড়ছে। আব্দুল মান্নান বলেন, ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে আবহাওয়া বিরূপ আচরণ করে। কখনো হালকা ঠান্ডা, আবার কখনো গরম অনুভূত হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহীনুর রহমান বলেন, কিছু দিনের মধ্যে আর বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা নেই। শীতের তীব্রতা আর বাড়বে না। গতকাল সোমবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছে টেকনাফে ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শ্রীমঙ্গলে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানী ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৪ ও সর্বনিম্ন ১৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, পশ্চিমবঙ্গের হিমালয়ের পাদদেশে এবং আমাদের দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কিছু এলাকায় যে লঘুচাপের প্রভাব ছিল, তা কেটে গেছে। এখন বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে কিছু কিছু এলাকায় আকাশে মেঘ আছে। তাপমাত্রা এখন যেমন আছে আগামী দু-এক দিন তেমনই থাকতে পারে।

এ বছর শীত জেঁকে বসতে না বসতেই বিদায় নিচ্ছে। অনেকটা খেয়ালি প্রকৃতির মতো। পুরো পৌষে শীতের তেমন প্রকোপ না থাকলেও মাঘের শুরু থেকে সারা দেশে জেঁকে বসতে শুরু করে ঠান্ডা সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহ। প্রকৃতির সবচেয়ে সুন্দর দুই ঋতু হলো—শীত ও বসন্ত। শীতের সকালগুলো আমরা যেভাবে উপভোগ করি ঠিক একইভাবে বসন্তের প্রকৃতি আমাদের মুগ্ধ করে। এই দুই ঋতু মানুষকে যেন প্রকৃতি তার আরো অনেক কাছে টানে। যদিও শীত এবার গিয়েছে অনেকটা নীরবে।

বলা যায় মহামারি করোনার কারণেই শীত আমাদের কাছে আতঙ্কের বিষয় হয়েছিল। কারণ এ শীতেই করোনা ভাইরাস সারা বিশ্বে তাণ্ডব চালিয়েছে। সেই আতঙ্ক আমাদের পিছু ছাড়েনি। তবে আশার কথা, দেশে করোনা বাড়েনি। শীতে খুব একটা অস্থিরাবস্থা হয়নি। এর মধ্যে করোনার টিকা এসে গেছে।