বেসরকারি প্রয়োজন মেটাতেও টিকা আনছে বেক্সিমকো

অ্যাস্টাজেনেকার করোনাভাইরাসের ৩০ লাখ ডোজ পর্যন্ত সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার কাছ থেকে কিনবে বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। বেসরকারি বাজারে বিক্রয়ের জন্য তারা প্রতিটি ডোজ টিকা কিনবে প্রায় ৮ ডলার দামে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ কথা জানিয়েছেন বেক্সিমকোর প্রধান অপারেটিং কর্মকর্তা (সিওও) রাব্বুর রেজা। তিনি বলেছেন, সরকারি টিকাদান কর্মসূচিতে দেয়া টিকা যে দামে কেনা হবে, তার বাইরে বেসরকারি বাজারে বিক্রির জন্য এই টিকা কেনা হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। সরকারি কর্মসূচিতে দেয়ার জন্য যেসব টিকা কেনা হচ্ছে তার প্রতিটি ডোজের দাম পড়ছে প্রায় ৪ ডলার। এ বছরের প্রথম অর্ধাংশে আলাদাভাবে সরকারকে মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ দেয়া হবে। রাব্বুর রেজা বলেছেন, এ মাসের পরের দিকে বাংলাদেশকে সরকারি পর্যায়ে এবং বেসরকারি ব্যবহারের জন্য টিকা দেয়া শুরু করবে সিরাম ইনস্টিটিউট। এই টিকা প্রতিজন রোগীকে আলাদাভাবে প্রথমে একটি এবং কয়েক সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজ দিতে হয়।

ভারতের পূর্বাঞ্চলের প্রতিবেশী বাংলাদেশে জনসংখ্যা কমপক্ষে ১৬ কোটি। তাদেরকে এই টিকা সরবরাহ দেয়ার বিষয়টি আসছে এমন এক সময়ে, যখন বিশ্বজুড়ে টিকার চাহিদা মিটানোর জন্য চেষ্টা করছে ভারত। আর এর মধ্য দিয়ে তারা নিজেদেরকে ‘ফার্মাসিউটিক্যাল পাওয়ার হাউজ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। রাব্বুর রেজা বলেছেন, বেসরকারি পর্যায়ে এই টিকা বাংলাদেশে বিক্রি শুরু হবে আগামী মাসে। প্রতিটি ডোজের খুচরা বিক্রয় মূল্য হবে প্রায় ১১২৫ টাকা বা ১৩.২৭ ডলার। তিনি আরো যোগ করেন, বর্তমানে ১০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহের চুক্তি আছে তাদের। এর পরিমাণ আরো ২০ লাখ ডোজ বাড়ানো যেতে পারে। তবে এর আগে এই টিকার রেট অর্থাৎ দাম এবং চুক্তি সম্পর্কে রিপোর্ট করা হয়নি।
বাংলাদেশের বৃহৎ ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানির মধ্যে অন্যতম বেক্সিমকো। তারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকা দেশে সরবরাহ করার এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর বা বিতরণকারী। রাব্বুর রেজা বলেছেন, টিকা উৎপাদনকারী ভারতীয় অন্য কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বেক্সিমকো। এর মধ্যে রয়েছে ভারতের বায়োলজিক্যাল ই এবং ভারত বায়োটেক। ভারত বায়োটেকের টিকা এ মাসেই অনুমোদন দিয়েছে ভারত। অ্যাস্ট্রাজেনেকা/অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির টিকার ব্যাকআপ বা বিকল্প হিসেবে এই টিকা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। টেলিফোন সাক্ষাৎকারে বেক্সিমকোর সিওও বলেছেন, এখনকার মতো আমাদের অংশীদার সিরাম। তাদের সঙ্গে আমাদের লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যদি সরকার আরো টিকা চায়, তাহলে সিরাম যেসব টিকা নিয়ে কাজ করছে সেগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করতে পারি। অবশ্য যদি অ্যাস্ট্রাজেনেকার বাইরে অন্য কিছু চায় সরকার।
বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ টিকা উৎপাদনকারী সিরাম ইনস্টিটিউট। তারা ভারত সরকারের কাছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ১০ কোটি ডোজ প্রতি ডোজ টিকা ২০০ রুপিতে বিক্রির পরিকল্পনা করছে। এর পরের সরবরাহের জন্য তারা কিছুটা বেশি দাম নিতে পারে। এরই মধ্যে প্রাথমিক দামে এক কোটি ১০ লাখ ডোজ টিকা কিনেছে ভারত। নয়াদিল্লি যখন অনুমোদন দেবে তখন বেসরকারি বাজারে প্রতিটি ডোজ টিকা ১০০০ রুপিতে বিক্রি করতে চায় সিরাম।
রাব্বুর রেজা বলেছেন, যদিও বাংলাদেশ সরকারের টিকা কর্মসূচিতে দেয়ার জন্য বেক্সিমকো প্রতি ডোজ টিকার জন্য ৪ ডলার দিচ্ছে। তবে ভারত সরকার সিরামকে যে দাম দেবে তার গড় হারের সঙ্গে মিলিয়ে এই দাম ঠিক করা হবে। ভারত থেকে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত টিকা পৌঁছে দেয়ার খরচ বহন করবে সিরাম। বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য সরকারি পর্যায়ে ৩ কোটি টিকার চুক্তি রয়েছে। এর বাইরে সিরামের কাছ থেকে অতিরিক্ত টিকা কেনার সুযোগ আছে বেক্সিমকোর। বাংলাদেশে এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কমপক্ষে ৫ লাখ ২৩ হাজার মানুষ। মারা গেছেন কমপক্ষে ৭ হাজার ৮০০।
একটি নিম্ন আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রায় ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা পাবে। সম্ভবত এর মধ্যে রয়েছে ফাইজারের টিকা। এক্ষেত্রে বৈশ্বিক টিকা বিষয়ক জোটের পক্ষ থেকে ভর্তুকি দেয়ার পর যে দাম হবে সেই হারে টিকা পাবে বাংলাদেশ। ওদিকে বৃটেনের ওষুধ প্রস্তুতকারক অ্যাস্ট্রাজেনেকা, গেটস ফাউন্ডেশন ও গ্যাভি টিকা বিষয়ক জোটের সঙ্গে অংশীদারিত্ব রয়েছে সিরামের। এই জোটের অংশ হিসেবে তারা দরিদ্র দেশগুলোর জন্য অ্যাস্ট্রাজেনেকার শতাধিক কোটি ডোজ টিকা উৎপাদন করতে পারবে।