ভাসানচরে বদলে গেছে রোহিঙ্গাদের জীবনমান

মির্জা ইমতিয়াজ:: মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনে দেশটি থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য নোয়াখালীর ভাসানচরে গড়ে তোলা হয়েছে আধুনিক সুবিধা সংবলিত পরিকল্পিত অস্থায়ী আবাসন প্রকল্প। ‘সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে মোটামুটি ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে ১২০টি গুচ্ছগ্রামে ঘরের সংখ্যা ১ হাজার ৪৪০টি যাতে ১ লাখ ১ হাজার ৩৬০ শরণার্থী বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

ব্রিটিশ কোম্পানির ডিজাইনে শক্তিশালী বাঁধ দিয়ে দ্বীপকে সুরক্ষিত করা হয়েছে। আবাসন থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎসহ সব মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে পূর্ণ স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা।

ভাসানচর প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জীবনমান বদলে দেয়ার সব আয়োজন রয়েছে ভাসানচরে। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) স্ট্যান্ডার্ড মেনে তৈরি করা হয়েছে পরিকল্পিত আবাসন।

২২টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ভাসানচরে কাজ শুরু করেছে। পরিকল্পিত আবাসন, ভাসানচরের পরিবেশ ও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সন্তুষ্ট হয়ে প্রথম দফায় আসা রোহিঙ্গারা কক্সবাজার ক্যাম্পে থাকা স্বজন ও পরিচিতদেরও আসতে বলেছেন।

ভাসানচরে ১৮টি উন্নত সেবা ও সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এগুলো হল : উন্নত আবাসন, পর্যাপ্ত সুপেয় পানি, পরিবেশসম্মত স্যানিটেশন সুবিধা, খাদ্য সংরক্ষণ ও সরবরাহ ব্যবস্থা, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, জীবিকানির্বাহের সুযোগ, স্থান ব্যবস্থাপনা, উন্নত ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ, অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ, দুর্যোগে ক্ষতির ঝুঁকি কম, পর্যটনের ওপর প্রভাব কম, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা, মানব ও মাদক পাচার বন্ধ, অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি কম, উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বিকল্প রান্নার ব্যবস্থা।

‘অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য ভাসানচরে মহিষ, ভেড়া, হাঁস, কবুতর পালন করা হচ্ছে। আবাদ করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি। পরীক্ষামূলকভাবে ধান চাষও করা হচ্ছে।

থাকার ঘরের পরিবেশে রোহিঙ্গাদের মধ্যে সন্তুষ্টি দেখা গেছে। এরাই আত্মীয়স্বজনকে ফোন করে সুযোগ-সুবিধাগুলোর কথা জানিয়েছে। ফলে বাকিদের মধ্যেও ভাসানচরে আসতে আগ্রহ বেড়েছে।

ভাসানচর আবাসন প্রকল্পের পরিচালক নৌবাহিনীর কমডোর আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী বলেন, অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে এই প্রকল্পের কাজটি আমরা করেছি।

আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে থাকার ঘরগুলো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচর কেমন হবে-সেটা নিয়ে শুরুতে অনেক রোহিঙ্গার মধ্যে এক ধরনের চিন্তা ছিল। আমরা তাদের অভয় দিয়েছিলাম।

এরপর প্রথম দফায় ১ হাজার ৬৪২ জন এখানে আসে। এরপরই পাল্টে যেতে থাকে চিত্র। তারা ভাসানচরের সুযোগ-সুবিধা দেখে কক্সবাজার ক্যাম্পে জানায়। ফলে ভাসানচরে আসতে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়।

  উল্লেখ্য প্রথম দফায় গত বছরের ৪ ডিসেম্বর নৌবাহিনীর মোট আটটি জাহাজে ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেয়া হয়।

দ্বিতীয় ধাপে ২৯ ডিসেম্বর স্বেচ্ছায় ভাসানচরে এসেছে ৪২৮ পরিবারের ১ হাজার ৮০৪ জন রোহিঙ্গা। এরমধ্যে পুরুষ ৪৩৩, মহিলা ৫২৩ ও শিশু ৮৪৮ জনসহ মোট ১ হাজার ৮০৪ জন।

ছবি- পিআইডি