গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাস ডিসেম্বর শুরু

দৈনিক প্রিয় চট্টগ্রাম:: বাঙালির জাতীয়তাবোধের উন্মেষের সুদীর্ঘ ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম ঘটনা হলো ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের এক ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির কয়েক হাজার বছরের সামাজিক, রাজনৈতিক স্বপ্নপূরণ হয় এই মাসে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে জনযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এ দেশের মানুষ। ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম আর ত্রিশ লাখ শহিদ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানীর মাধ্যমে আসে জাতীয় মুক্তি।

পাকিস্তানিদের দ্বারা সুদীর্ঘ ২৩ বছরের শোষণ, বঞ্চনা আর অত্যাচার-নির্যাতনের সমাপ্তি ঘটে ১৬ ডিসেম্বরে। পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্ত হয় প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। এবার ১৬ ডিসেম্বরে পালিত হবে স্বাধীনতার ৪৭তম বার্ষিকী। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর। স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে কারান্তরীণ করে হানাদার বাহিনী। শুরু হয় ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ইতিহাসের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ।

এর আগে একাত্তরের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমস্ত জাতিকে স্বাধীনতার প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু সেদিন বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতা সংগ্রাম’। এরপর ২৫ মার্চের কালরাতের নৃশংসতার জবাবে জাতির জনকের সেই সংগ্রামের আহ্বানে দেশকে স্বাধীন ও মুক্ত করার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিভিন্ন বয়সী শ্রেণিপেশার নারী-পুরুষ। শুরু হয় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ যুদ্ধ।

ডিসেম্বরে বিজয়ের শেষ সময়ে এসে পিছু হটতে থাকে হানাদার বাহিনী। পরাজয় নিশ্চিত জেনে একপর্যায়ে পাকিস্তানি বাহিনী দেশকে মেধাশূন্য করতে তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদর-আল শামসদের সহযোগিতায় এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যায় মেতে ওঠে। তাই বুদ্ধিজীবীদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে প্রতিবছরের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের শেষ সময়ে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেও শেষ রক্ষা হয়নি হানাদারদের। শেষ পর্যন্ত ১৬ ডিসেম্বরেই পর্যুদস্ত হতে হয় তাদের। ৯ মাস যুদ্ধ শেষে ৩০ লাখ শহিদের রক্ত ও ২ লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর আসে মুক্তির স্বাদ। এদিন ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহ?রাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সূচিত হয় বাঙালির বিজয়।

বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। বাংলা ও বাঙালির মহান অর্জনের ও বিশ্বের বুকে আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার মাস ডিসেম্বর। ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা, পাক হানাদার বাহিনীর বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন, নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়ে ৯ মাসের ত্যাগ তিতিক্ষার পর পৃথিবীর বুকে এ মাসেই রচিত হয় এক অমর গাথা- বাঙালির স্বাধীনতা, লাল সবুজের পতাকা, স্বাধীন বাংলাদেশ। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ নামক যে রাষ্ট্র বিজয় গৌরবে তার যাত্রা শুরু করেছিল, আজ তা বিশ্বের কাছে এক অপার বিস্ময়, উন্নয়নের রোল মডেল। এবারের বিজয়ের মাসে অনুষ্ঠিত হচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিজয়ে উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার পথে আরো একধাপ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। এমন প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।