জীবনের গল্প বদলে দিলো গাড়ল ও ভেড়া

দেশের শিক্ষিত বেকার যুবকরা যখন অভিশপ্ত জীবন নিয়ে চাকরির পিছনে ছুটছে তখন কম্পিউটার প্রকৌশলী মেহেদী হাসানের উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েও আশানুরূপ চাকরি মেলাতে পারেননি।

তাতে কী? মেহেদী থেমে থাকেন নি। মেহেদী উন্নত জাতের গাড়ল ও ভেড়ার খামার করে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে অর্থনৈতিকভাবে। মেহেদীর দেখাদেখি যশোরের সীমান্তবর্তী শার্শা উপজেলার অনেক তরুন ও বেকার যুবকরা ঝুকে পড়েছে ভেড়া ও গাড়ল পালনে। গাড়ল শব্দটি সমাজে অনেকের কাছে অপরিচিত হলেও এটি এ অঞ্চলের পশু প্রেমি মানুষের কাছে খুবই পরিচিত। দেখতে অনেকটা ভেড়ার মত হলেও আকারে সাধারণ ভেড়া থেকে বেশ বড়। প্রতিটি গাড়ল থেকে ৬০/৭০ কেজি মাংস পাওয়া যায়। গাড়লের মাংসের স্বাদ ভেড়া বা ছাগলের চেয়ে অনেক বেশী সুস্বাদু বলে জানালেন প্রকৌশলী মেহেদী হাসান। গাড়ল চাষের ভাবনা আসে তরুন মেহেদীর মাথায় ভারতের রাজস্থান প্রদেশ ঘুরতে গিয়ে। মেহেদী স্বপ্ন দেখে কিভাবে গাড়ল চাষ করে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায়। এরপর যে কথা সেই কাজ ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ভারত থেকে নিয়ে আসে দুটি গাড়লের বচ্চা তারপর মেহেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলেকা থেকে সংগ্রহ করে আরো কিছু গাড়লের বাচ্চা। বর্তমানে তার খামারে ৬৫ টি পূর্নবয়ষ্ক গাড়ল আছে যার প্রতিটির দাম প্রায় ১৫ হাজার টাকা। বেনাপোলের শিকড়ী গ্রামের মেহেদী তার নিজ বাড়িতেই গড়ে তুলেছে ভেড়া ও গাড়লের খামার।
বেনাপোল বাজার থেকে দক্ষিনে মাত্র ২ কিমি দূরে শিকড়ী গ্রামে মেহেদীর খামার। তার পিতা মোঃ আব্দুল কাদের বলেন তার একমাত্র ছেলে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও চাকরি ছেড়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য খামারটি গড়ে তুলেছে। নিজ থানাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ দেখতে আসে খামারটি।

তিনি বলেন গাড়ল লালন পালন অত্যন্ত সহজ। এরা যে কোন পরিবেশে জীবন যাপন করতে পারে, রোগ ব্যাধি খুবই কম। বাজারে গাড়লের চাহিদা অনেক বেশি। একটি ৩/৪ মাস বয়সী গাড়লের দাম ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা।
বেনাপোল বাজারের পশু ডাক্তার ইমরান হোসেন বলেন, বছরে চারবার কৃমিনাশক বড়ি আর দুবার পিপিআর টিকা প্রদান করলে খামার রোগ মুক্ত থাকে, এছাড়া উপজেলা পশু সম্পদ অফিস থেকে বিনামুল্যে টিকা প্রদান করা হয়। বর্তমানে খামারটিতে সার্বক্ষনিক ২ জন শ্রমিক কাজ করছে। গাড়লের প্রধান খাবার ঘাস ও লতাপাতা। এছাড়া খড় ও ভুসি খেয়ে থাকে।

আগামী কুরবানি মওসুমে খামারটি থেকে মোটা অংকের অর্থ আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তরুন খামারী প্রকৌশলী মেহেদী। তারা হাতে গড়া খামার দেখে এলাকার অনেক লোক এ পেশার দিকে ঝুকে পড়ছে বলে জানান।
শার্শা উপজেলা মৎস ও প্রাণী সম্পদ অধিদফরের কর্মকর্তা জয়দেব কুমার সিংহ জানান, গাড়ল লালন পালন করা অত্যন্ত সহজ এবং লাভ জনক। এরা যে কোন পরিবেশে জীবন যাপন করতে পারে, রোগ ব্যাধি খুবই কম। ঘাস, লতাপাতা, খড় ও ভুসি খেয়ে গাড়ল দীর্ঘদিন বাচতে পারে।