ফেসবুকের নামে ডোমেইন কেনা নিয়ে তোলপাড়

২০০৮ সালে ‘ফেসবুক ডটকম ডটবিডি’ নামে একটি ডোমেইন বরাদ্দ নেয়া হয় এ ওয়ান সফ্‌টওয়্যার লিমিটেডের নামে। এর মালিক হিসেবে আছেন এক বাংলাদেশি। তার নাম এস কে শামসুল আলম। ১২ বছর পার হলেও এতোদিন এ নিয়ে কোনো আলোচনা ছিল না। কিন্তু এখন ফেসবুকের নামের সঙ্গে মিল রেখে কেনা ওই ডোমেইন নিয়ে চলছে তোলপাড়। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়াতে যাচ্ছে। কারণ ডোমেইনটির মেয়াদ আগামী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকলেও তা বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। এজন্য ৬ মিলিয়ন ডলার দাম ঘোষণা করা হয়েছে।
এরপরই নড়েচড়ে বসে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে তারা। মূলত ফেসবুকই বাংলাদেশে আদালতের আশ্রয় নিতে যাচ্ছে। এজন্য তারা নিয়োগ দিয়েছেন এক ব্যারিস্টারকে। মামলায় ডোমেইনটির উপর স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চাওয়ার পাশাপাশি ৫০ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে ফেসবুকের প্যানেল আইনজীবী মোকছেদুল ইসলাম। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে কোনো ধরনের বক্তব্য না দেয়ার জন্য ওই ব্যারিস্টারকে কড়া নির্দেশনা দিয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটির মিডিয়া উইং থেকে গণমাধ্যমে নিয়মিত ব্রিফিং করা হবে বলে জানানো হয়েছে। ফেসবুকের আইনজীবী গণমাধ্যমকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে সারা বিশ্বে ফেসবুক সুপরিচিত। ‘ফেসবুক’ নামটি যে কেউ চাইলেই ব্যবহার করতে পারবে না। কেউ যাতে এই নামটি ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য ট্রেডমার্ক নিবন্ধন আইন অনুযায়ী ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে নামটি ট্রেডমার্ক নিবন্ধন নিয়েছে। যেহেতু এটা আমার ট্রেডমার্ক তাই চাইলেই কেউ এটা ব্যবহার করতে পারবে না। এদিকে বিটিসিএল থেকে ডোমেইন কেনার অনুমোদন নেয়া হলেও ওই প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের মালিক এস কে শামসুল আলমের কোনো হদিস নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ১২ বছর আগে প্রতিষ্ঠানটির গুলশানের যে ঠিকানা দেয়া হয়েছিল তা এখন আর নেই। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল মতিন মানবজমিনকে বলেন, ডোমেইনটি ১২ বছর আগে যখন বিটিসিএল থেকে বরাদ্দ নেয়া হয়েছিল তখন ফেসবুক বাংলাদেশে অতটা জনপ্রিয় মাধ্যম হিসেবে পরিচিত ছিল না। আর ডোমেইন বরাদ্দ নিয়ে তখন বিটিসিএলের নীতিমালাও ছিল না। এখন আমাদের যে নীতিমালা আছে সেখানে পরিচিত কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে ডোমেইন বরাদ্দ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, বিষয়টি আলোচনার পর আমরা ওই ডোমেইনের কাগজপত্র ফাইল থেকে সংগ্রহ করে রেখেছি। সেখানে ফেসবুকের লিখিত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এখন ফেসবুক যদি আমাদের কাছে কোনো ধরনের অভিযোগ দেয় কিংবা আদালত থেকে যদি কোনো ব্যাখা জানতে চায় তাহলে আমরা তা উপস্থাপন করবো। তিনি বলেন, এখন কোনো ডোমেইন বরাদ্দ দিলে তা তিন মাসের নোটিশ পিরিয়ড রাখা হয়। এর মধ্যে যদি কেউ অভিযোগ দেয় তাহলে বরাদ্দ দেয়া ডোমেইন বাতিল করা হয়। বিটিসিএল’র ওয়েবসাইটে ডোমেইন সার্চ করে দেখা গেছে, ফেসবুক ডটকম ডটবিডি নামের সক্রিয় ডোমেইনটির নিবন্ধন এস কে শামসুল আলমের নামে। ২০০৮ সালের ৭ই ডিসেম্বর ডোমেইনটি সক্রিয় করা হয়। এর মেয়াদ আছে আগামী বছরের ৪ঠা ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর অনলাইন সার্চ ইঞ্জিনে ইংরেজিতে ফেসবুক ডটকম ডটবিডি লিখে সার্চ দিলেই বিক্রির বিজ্ঞাপন ভেসে উঠছে। লেখা আছে ‘ফেইসবুক ডটকম ডটবিডি’ ডোমেইনটি বিক্রি করা হবে। ছয় মিলিয়ন ডলার দাম ঘোষণা করে আগ্রহীদের ধ১ংড়ভঃধিৎবষঃফ@মসধরষ.পড়স ই-মেইলে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। ফেসবুকের নিয়োগ দেয়া আইনজীবীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফেসবুক লিগ্যাল টিম একটি মেইল পাঠিয়েছে। যেখানে তারা বলছে, বাংলাদেশে ভধপবনড়ড়শ.পড়স.নফ ব্যবহার করে কেউ একজন একটি ডোমেইন কিনেছে এবং এটি ৬০ লাখ ডলারে বিক্রি করতে চায় এবং তা বিটিসিএল অনুমোদিত। আর তা বন্ধে আইনি লড়াই করবে তারা। আমরা ফেসবুকের পক্ষ থেকে ওই ওয়েবসাইট বন্ধে একাধিকবার লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছি। কিন্তু সেটা বন্ধ করা হয়নি। ফেসবুকের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোকছেদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ইতিমধ্যে ৭০০ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট আমাকে সরবরাহ করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। আগামী সপ্তাহে ঢাকার নিম্ন আদালতে ক্ষতিপূরণের মামলা করা হবে। একই সঙ্গে ওই ওয়েবসাইট পরিচালনার ওপর নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হবে আদালতের কাছে, যাতে এর মাধ্যমে কেউ প্রতারণার শিকার না হন। ওই আইনজীবী জানান, শুনেছি প্রতিষ্ঠানটির নামে গুলশানে একটি অফিস রয়েছে। আমরা সেখানে খোঁজ নিয়ে দেখবো। বর্তমানে বাংলাদেশে ৪ কোটির বেশি মানুষ এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি ব্যবহার করছেন। আর বিশ্বব্যাপী ফেসবুকের প্রায় ২৪৫ কোটি ব্যবহারকারী আছেন যারা মাসে অন্তত একবার ফেসবুক ব্যবহার করেন। এই গ্রাহক প্রতি বছর ৯ শতাংশ হারে বাড়ছে। বাংলাদেশের ডিজিটাল স্বাক্ষরতা নিয়ে কাজ করতে ফেসবুক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ জানায়। প্রতিষ্ঠানটি শিশুদের অনলাইন সুরক্ষা নিয়ে ২০১৮ সালে ইউনিসেফের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রচারণা শুরু করেছে। ফেসবুক (সংক্ষেপে ফেবু নামেও পরিচিত) বিশ্ব-সামাজিক আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থার একটি ওয়েবসাইট, যা ২০০৪ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটিতে বিনামূল্যে সদস্য হওয়া যায়। এর মালিক হলো ফেসবুক ইনক। ব্যবহারকারীগণ বন্ধু সংযোজন, বার্তা প্রেরণ এবং তাদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলী হালনাগাদ ও আদান- প্রদান করতে পারেন, সেই সঙ্গে একজন ব্যবহারকারী শহর, কর্মস্থল, বিদ্যালয় এবং অঞ্চলভিক্তিক নেটওয়ার্কেও যুক্ত হতে পারেন। মার্ক জাকারবার্গ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন তার কক্ষনিবাসী ও কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ের ছাত্র এডুয়ার্ডো স্যাভেরিন, ডাস্টিন মস্কোভিৎ?স এবং ক্রিস হিউজেসের যৌথ প্রচেষ্টায় ফেসবুক নির্মাণ করেন। ওয়েবসাইটটির সদস্য প্রাথমিকভাবে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু পরে সেটা বোস্টন শহরের অন্যান্য কলেজ, আইভি লীগ এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সমপ্রসারিত হয়। আরো পরে এটা সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, হাই স্কুল এবং ১৩ বছর বা ততোধিক বয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।