শিক্ষকের বিরুদ্ধে ডজন অভিযোগ অনিয়ম তদন্তে কমিটি গঠন

নবম দশম শ্রেণির ছাত্রীদের শারীরিক মানসিক নির্যাতন, ক্লাসে উপস্থিত না থাকা, সহকর্মীদের সাথে খারাপ আচরণ সর্বশেষ স্কুলের দফতরীকে মেরে আহত করাসহ ১২ অভিযোগ জমা হয়েছে চসিক প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে। গত দুই বছর ধরে অভিযোগের পর অভিযোগ জমা হওয়ায় চলতি মাসে শাস্তি স্বরূপ তাকে অন্য বালিকা বিদ্যালয়ে বদলী করা হয়েছে। চসিকের উদ্যোগে গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। কাপাসগোলা সিটি কর্পোরেশন কলেজের অধ্যক্ষ মনোয়ারা জাহান বেগমকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন পোস্তারপাড়া আসমা খাতুন সিটি কর্পোরেশন কলেজের সহকারী অধ্যাপক রুপনা দাশ, সরাইপাড়া সিটি কর্পোরেশন কলেজের সহকারী অধ্যাপক এবিএম মাহাবুবুল হক। এইসব অনিয়মের বিষয়ে চসিক প্রশাসক খোরশেদুল আলম সুজন বলেন, অভিযোগ পাওয়ায় উক্ত শিক্ষককে বদলী করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। চট্টগ্রাম কতোয়ালী থানাধীন কৃষ্ণকুমারী সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহকারী শিক্ষক তানসেন দেওয়ানজী। নিজের হাত অনেক লম্বা বলে সহকর্মী ও ছাত্রীদের মধ্যে খারাপ আচরন করতেন হরহামেশা। যকন তখন ছাত্রীদের গায়ে হাগ তুলেছেন। তার মারধর থেকে রেহায় পায়নি ৫৭ বছর বয়স্ক দপ্তরি। নিজের প্রভাব খাটিয়ে গত ১০ বছর ধরে স্কুলের ১৩শত ছাত্রীকে টিফিন সরবরাহকারী কমিটির আহবায়ক তিনি। গত দশ মাসের লক ডাউনে গনিত পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও একদিনও স্কুলের অনলাইন প্লাটফর্মে ক্লাস নেননি। স্কুলের ভুক্তভোগী ছাত্রী ও অভিভাবকরা জানান, কৃষ্ণ কুমারী উচ্চ বিদ্যালয়ের গনিত এবং পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক তানসেন দেওয়ানজী ঠিক মতো ক্লাস নিতেন না। স্কুলের অদূরে নিজ বাসায় ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করতেন। অনিয়মিত ক্লাসে এসে তার কাছে প্রাইভেট পড়তে না যাওয়া ছাত্রীদের শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। ৭ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে স্কুলের প্রধান শিক্ষক বরাবরে লিখিত অভিযোগে একজন অভিভাবক জানান, নির্বাচনি পরীক্ষা গনিত বিষয়ে পরীক্ষার দিন তানসেন দেওয়ানজীর নির্দেশে প্রশান্ত কুমার নামে অপর শিক্ষক আমার মেয়েসহ ১১জন ছাত্রীর খাতা সোয়া একঘন্টা আটকে রাখে। অভিভাবক এই বিষয়ে কথা বলতে গেলে তাকে অপমান করে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়। শিক্ষক অন্যায়ভাবে খাতা আটকে রাখা ও বাবাকে অপমান করায় সেই ছাত্রী মানসিক সমস্যাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। যে কারনে সে পরবর্তী এসএসসি পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল করে। উক্ত স্কুলের দুইজন আয়া একজন দপ্তরি তাদের শারীরিক নির্যাতন করে আহত করেছে মেয়র ও প্রধান শিক্ষক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। দপ্তরি ৫৭ বছর বয়সি মুক্তিযোদ্ধা সন্তান অজয় দাশ বলেন, চা নিয়ে তানসেন স্যারের কক্ষে গেলে অনুমতি না নেওয়ার অভিযোগে আমাকে কিল-ঘুষি ও লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেন। আমি আগে থেকে অসুস্থ। তানসেন দেওয়ানজীর আঘাতের কারনে এখন চলাফেরা করতে সমস্যা হয়। কাপাসগোলা কলেজের অধ্যক্ষ মনোয়ারা জাহানকে প্রধান করে চসিক গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গত মঙ্গলবার সকালে স্কুলে অভিযোগের তদন্ত করতে আসেন। ওই দিন সরেজমিন স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচজন ছাত্রী, তাদের অভিভাবক নিয়ে, চারজন অভিভাবক তানসেন দেওয়ানজীর বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগের সাক্ষী দিতে এসেছেন। নবম শ্রেনীর এক ছাত্রী জানান, স্যার পূর্ব থেকে আমাকে ওনার কাছে প্রাইভেট পড়তে বলতেন। আমি প্রাইভেট না পড়ায় একদিন ক্লাসে আমাকে চড় থাপ্পড় মারেন। ছাত্রীটির মা বলেন, আমরা কখনও মেয়েকে টোকা পর্যন্ত দি নাই। তানসেন মেয়েকে মারার পর সে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। আমরা তদন্ত কমিটি কাছে এই অভিযোগের সাক্ষী দিতে এসেছি। তদন্তের বিষয়ে অধ্যক্ষ মনোয়ারা জাহান বলেন, আমরা তদন্ত শুরু করেছি। অভিভাবক ছাত্রীরা এসেছেন সাক্ষী দিতে। তদন্তে যা পাওয়া যাবে তা চসিক প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে প্রদান করবো। অভিযুক্ত শিক্ষক তানসেন দেওয়ানজী বলেন, আমি শিক্ষার স্বার্থে ছাত্রীদের শাসন করি। স্কুল থেকে নির্বাচিত করায় গত ১০ বছর টিফিন কমিটির আহবায়ক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি।