বেগম রোকেয়া পদকে ভূষিত হলেন চবি উপাচার্য

নারী শিক্ষায় অবদান, নারীর উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এ বছর ‘বেগম রোকেয়া পদক-২০২০’ এর জন্য মনোনীত হলেন চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক কলামিস্ট প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ১৫ নভেম্বর ২০২০ তারিখের ৩২.০০.০০০০.০৪২.২৩.০০৯.২০-২৬৩ স্মারকমূলে তাঁকে এ মনোনয়ন প্রদান করেন। প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার এ পদকের জন্য মনোনীত হওয়ায় পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার দরবারে অশেষ শুকরিয়া আদায় করেন। এ রাষ্ট্রীয় পদকের জন্য তাঁকে মনোনীত করায় মাননীয় উপাচার্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার কাছে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। একইসাথে বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এম.পি. এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন এবং মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দসহ সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। আগামী ৯ ডিসেম্বর ২০২০ সকাল ১০ টায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে তাঁকে এ পদক প্রদান করা হবে। অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত (ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে) থেকে এ পুরস্কার প্রদান করার কথা রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম নারী উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার ১৯৯১ সনে ভারতের যাদবপুর বিশ^বিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি. ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে ১৯৮১ সনে এম.এ. এবং ১৯৮০ সনে বি.এ. অনার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। এ মেধাবী-গুণী শিক্ষক-গবেষক ১৯৭৫ সনে চট্টগ্রাম মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৭৩ সনে কক্সবাজার সরকারী মহিলা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার ১ জানুয়ারি ১৯৯৬ চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেন। তিনি ২৫ জানুয়ারি ২০০৬ সনে প্রফেসর হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। এ কৃতি গবেষকের সাহিত্য বিষয়ক গবেষণা প্রবন্ধ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন খ্যাতিমান জার্ণালে প্রকাশিত হয়েছে। এরমধ্যে গল্প, উপান্যাস ও বিভিন্ন গবেষণা প্রবন্ধ উল্লেখযোগ্য। তিনি নজরুল জন্মশত বর্ষ উদযাপন পরিষদ কর্তৃক ‘চট্টগ্রাম একুশে পদক ২০১০’ পদকসহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সম্মানসূচক পদকে ভূষিত হয়েছেন। তিনি বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্যসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত আছেন। তিনি ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, সৌদিআরব, সিংগাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিশে^র বেশ কিছু দেশ সফর করেন। উল্লেখ্য, এ গুণী শিক্ষক ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ থেকে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এ ছাড়াও তিনি ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকারের অনুসন্ধান কমিটির (প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারদের নিয়োগের লক্ষ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট নাম সুপারিশ প্রদানের জন্য) সদস্য ছিলেন। তিনি নির্বাচক মন্ডলীর সদস্য হিসেবে জয়ীতার (বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ নারী নির্বাচন) সাথে কাজ করেছেন।
বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার এর স্বামীকে ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম সেনা বিদ্রোহে অন্যায়ভাবে জড়িয়ে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয় এবং তাঁকে ১০ বছর জেল দেয়া হয়। তখন রাজনৈতিক অঙ্গনে দৈন্যদশা চলছিল এবং গণতন্ত্র, প্রগতিবাদ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাও লুন্ঠিত হয়েছিল। এ চরম প্রতিকূল সময়ে ড. শিরীণ আখতার পড়াশুনা শেষ করে পিএইচ.ডি. ডিগ্রী লাভ করেন এবং তৎপরবর্তীতে শিক্ষাকতার মতো মহান পেশায় যোগদান করেন। জীবনের এহেন অনিশ্চিত ও প্রতিকূল পরিস্থিতিকে সামলে পরিবার-পরিজনকে আগলে রেখে গবেষণা ও লেখালেখিতে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। তখন তাঁর রাজনৈতিক, সামাজিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি শিল্প, সাহিত্য ও গবেষণা বিষয়ক কার্জকর্মও অব্যাহত ছিল। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিত হওয়ায় চবি শিক্ষক সমিতি, অফিসার সমিতি, কর্মচারী সমিতি ও কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথক বিবৃতিতে মাননীয় উপাচার্যকে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছেন। নেতৃবৃন্দ তাঁদের বিবৃতিতে বলেন, এ মহিয়ষী নারী তাঁর সুদক্ষ ও বলিষ্ট নেতৃত্বে দেশে নারী উন্নয়নসহ উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে আরও ব্যাপক অবদান রাখতে সক্ষম হবেন।