উখিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে সুপারি চাষাবাদ, রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও

কায়সার হামিদ মানিক,উখিয়া।

চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রোগবালায়ও তেমন না হওয়ায় উখিয়ায় সুপারির আশানুরূপ ফলন হয়েছে। ফসলের চাহিদা ও নায্য মূল্য পাওয়ায় সুপারির বাণিজ্যিক চাষাবাদের দিকে লোকজন আগ্রহী হয়ে পড়ছে।উখিয়ায় উৎপাদিত সুপারি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হওয়ার কারণে সুপারির চাহিদা তুলনামূলকভাবে বাড়ছে এ অর্থকরী ফসলের।

স্থানীয় কৃষকেরা জানান, অনাবাদী ও পরিত্যক্ত জমিতে সুপারি চাষাবাদ ও উৎপাদন করে শত শত গৃহস্থ পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে আসছে। কৃষি অধিদপ্তর বলছেন, পরিবেশ অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে সুপারি চাষাবাদ করে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইতিপূর্বে মিয়ানমার থেকে প্রচুর পরিমাণ কাঁচা ও শুকনা সুপারি চোরাই পথে পাচার হয়ে আসতো। বর্তমানে মিয়ানমারে থেকে চোরাই পথে সুপারি পাচার হয়ে আসা অনেকটা কমে গেছে। ফলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষকেরা সুপারির নাম্য মূল্যও পাচ্ছে। এতে বাণিজ্যিকভাবে সুপারি চাষাবাদের দিকে লোকজনের আগ্রহ বাড়ছে। অনাবাদী, অকৃষি পরিত্যক্ত জমিগুলো উৎপাদনমুখী হচ্ছে বলে দাবী কৃষকদের।

ব্যবসায়ীরা জানান, ৮০-৯০ দশকে পার্শ্ববর্তী বার্মা থেকে প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমাণ শুকনা সুপারি পাচার হয়ে আসত। এতে দেশীয় উৎপাদিত সুপারি বাজারজাত করে কৃষকেরা ন্যায্য মূল্য পেত না। ফলে স্থানীয়ভাবে সুপারি চাষাবাদে কৃষকেরা অনেকটা আগ্রহহীন হয়ে পড়ে। অনেকে বলছেন, ধান চাষাবাদের চেয়ে সুপারি চাষাবাদ করে বেশি পরিমাণ লাভবান হওয়া যাচ্ছে।
পান সুপারি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সুলতান আহমদ জানান, প্রতি মওসুমে এ উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে প্রায় ২০ – ২২ কোটি টাকার সুপারি বাজারজাত হচ্ছে। এসব সুপারি ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, কুমিল্লা সহ দেশের বিভিন্ন আড়তে চলে যাচ্ছে। পরে ওইসব সুপারি প্রক্রিয়াজাত করণের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।
তিনি জানান, অর্থকরী ফসল পান, সুপারি উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল জালিয়াপালং ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি গৃহস্থ পরিবার। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে প্রায় ৫ হাজারের মত পরিবার বাণিজ্যিকভাবে সুপারি চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে সুপারির বাম্পার উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

সুপারী উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের প্রধান মোকাম উখিয়ার সোনারপাড়া বাজারে দেখা যায় আধপাকা ও পাকা সুপারিতে বাজার সয়লাব হয়ে পড়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী আলী হোসেন ও রিদুয়ানুল করিম জানান, এ বাজার থেকে দৈনিক ১৫/২০টি ট্রাক বোঝাই সুপারি দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রসনজিৎ তালুকদার জানান, চলতি মৌসুমে প্রায় ২০ কোটি টাকা মূল্যের বেশী সুপারি উৎপাদন হয়েছে। সুপারি বাজারজাত করে নাম্য মূল্য পাওয়ায় অনেকে এলাকা ভিত্তিক বাণিজ্যিকভাবে সুপারি চাষাবাদ ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।