প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
এস এম ফখরুল ইসলাম নোমানী: মহান এই রবিউল আউয়াল মাস, এই মহিমান্ডিত মাসেই মানবতার মুক্তির দিশারী আমাদের প্রিয় নবী সাইয়েদুল মুরসালীন শফিউল মুজনেবীন রহমতুল্লিল আলামীন আহমদ মুজতবা মুহাম্মদ মুস্তফা সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া আসহাবিহি ওবারাকা ওয়াসাল্লাম এর আগমনে সারা জাহান খুশীর আনন্দে মাতোয়ারা।
যিনি সমগ্র সৃষ্টি জগতের মধ্যে সর্বোত্তম, যিনি মহত্তম আদর্শের অধিকারী, যিনি সমগ্র মানব জাতির জন্য শ্রেষ্ঠতম পথিকৃৎ, যিনি ¯্রষ্টা ও পালনকর্তা আল্লাহপাকের প্রিয়তম রসুল, পেয়ারা হাবীব, বিশ^ সভ্যতায় যাঁর অবদান সর্বাধিক। যিনি সমগ্র বিশ^ মানবের কল্যানের জন্য প্রেরিত। যাঁর আগমনের অপেক্ষা করেছেন লক্ষাধিক আম্বিয়ায়ে কেরাম যুগযুগ ধরে। যিনি সাইয়্যেদুল মুরসালীন, খাতেমুন নবিয়্যীন, যাঁর দিদার লাভ না হলে ব্যাকুল হতেন ফেরেশতাদের দলপতি হযরত জিব্রাঈল (আঃ), যাঁর দরবারে জিব্রাঈলকে ২৩ বছরে ২৪ হাজার বার হাজির হতে হয়েছে, যিনি আল্লাহপাকের দিদার লাভ করেছেন শবে মে’রাজে।
যিনি সর্বপ্রথম মহাশূণ্য পরিভ্রমন করেছেন, সারা বিশে^ আজ দুই শত কোটি মানুষ যাঁর অনুসারী। যাঁর আদর্শ মহান, অতুলনীয়, অদ্বিতীয়, চিরস্বরনীয়, চির অনুকরনীয়, চির সংরক্ষিত, চির প্রশংসিত, তিনিই তো সেই অনন্য অসাধারণ ”যে ফুলের খুশবুতে সারা জাহান মাতোয়ারা”
যাঁর সম্পর্কে বিখ্যাত সাহাবী হযরত আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন ঃ আমি কোনো কস্তরী, কোনো আম্বর এবং কোনো সুগন্ধি বস্তু হযরত রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামের চেয়ে অধিকতর খুশবুদার পাইনি।
যদিও কারও সঙ্গে পেয়ারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মোসাফাহা (করমর্দন) করতেন তবে সমস্ত দিন ঐ ব্যক্তির হাতে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মোসাফাহার খুশবু লেগেই থাকতো। আর যদি কখনও কোনো শিশুর মাতায় তিনি হাত বুলিয়ে দিতেন তবে খুশবুর কারণে ঐ শিশু হাজারো শিশুর মাঝে অত্যন্ত সহজে পরিচিত হতো। হায়াতুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার হযরত আনাসের (রাঃ) গৃহে বিশ্রাম করছিলেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেহ মোবারক ঘর্মাক্ত হয়ে উঠল। হযরত আনাসের মাতা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওসাল্লামের দেহ মোবারকের ঘাম একটি শিশিরে পুরে নিচ্ছিলেন। হুজুর সাল্লাল্লাহ আলায়হে ওয়াসাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন ঃ তুমি কি করছো ? তিনি জবাব দিলেন ঃ হুজুর আমরা এগুলোকে আমাদের সুগন্ধির সঙ্গে মিশ্রিত করবো। কেননা, আপনার এই ঘাম সর্বোত্তম সুগন্ধি।
ইমাম বোখারী (রঃ) হযরত যাবের (রাঃ) এর সুত্রে “ তারীখে কবীর” গ্রন্থে উল্লেখ করেন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি কোনো দলের সঙ্গে কোথাও গমন করতেন, যদি কেউ তাঁর অনুসন্ধান করতো তবে সে শুধু খুশবুর কারনেই তাঁর সন্ধান লাভ করতো।
তাই, তিনি সেই অপূর্ব বিশ্ময়কর ফুল-
“যে ফুলের খুশবুতে সারা জাহান মাতোয়ারা”
বিশ^ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ প্রদত্ত ওয়াহির আলোকে মানব সমাজকে ইসলামের দাও’আত দেন। ইসলামের আলোকে আলোকিত হয়ে সাহাবিগণ পৃথিবীর শ্রেষ্ট মানুষে পরিণত হন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শে ঔদ্বুদ্ধ হয়ে সাহাবিগণ ইসলামের আলো সারা বিশে^ ছড়িয়ে দেন।
মেসকাত শরীফে তিরমিযি শরীফের সূত্র থেকে হযরত আব্বাস (রাঃ) এর বিরবণ সংকলিত হয়েছে যে, আখেরী জামানার শেষ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন ঃ আমি মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবদুল্লাহর পুত্র, আবদুল মোত্তালেবের পৌত্র। আল্লাহপাক সমগ্র সৃষ্টি জগতের মাঝে আমাকে সর্বোত্তম হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ মানব রুপে সৃষ্টি করেছেন, মানুষকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন, আরব এবং আজম। আমাকে উত্তম ভাগ অর্থাৎ আরবের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন। আর আরবের মধ্যে কয়েকটি গোত্র রয়েছে। আমাকে উত্তম গোত্র অর্থাৎ কোরাইশ গোত্রে সৃষ্টি করেছেন। আর কোরাইশদের মধ্যেও কয়েকটি বংশ সৃষ্টি করেছেন। আমাকে সর্বোত্তম বংশ বনি হাশেম বংশে সুষ্টি করেছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে উত্তম আর বংশের দিকেও আমি সর্বোত্তম সুবহানাল্লাহ।
হযরত আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, বিশ্বনবী হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি একবার আমার প্রতি দরুদ পাঠ করে আল্লাহপাক তার প্রতি দশটি রহমত নাজেল করেন এবং তার দশটি গুনাহ ক্ষমা করেন এবং তার দশটি মরতবা বুলন্দ করেন।
হযরত এবনে মাসউদ (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন ঃ কিয়ামতের দিন সে ব্যক্তি আমার সর্বাধিক নৈকট্য লাভ করবে, সে যত বেশী পরিমানে আমার প্রতি দরুদ প্রেরণ করবে।
হক্কানী ওলামায়ে কেরাম হাদীসের পরিপ্রেক্ষিতে বলেন যে, দয়াল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র নাম শ্রবনের পর প্রথমবার দরুদ পাঠ করা ওয়াজেব। তৎপর সেই মজলিশে যতবার তাঁর মহান নাম শ্রবন করবে ততবার দরুদ পাঠ করা মোস্তাহাব।
নবীর প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে আশেকে রাসুল, বিভিন্ন মনিষী ও লেখকগণ নাতে রাসুল, গজল ও কবিতা লিপিবদ্ধ করেন। নি¤েœ কিছুটা উল্লেখ করা হলো।
“ত্রিভুবনে প্রিয় মুহাম্মদ এলোরে দুনিয়ায়
আয়রে সাগর আকাশ বাতাস দেখবে যদি আয়
নিখিল দরুদ পড়িল এনাম সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম”
“ছবছে আওলা ও আ‘লা হামারা নবী
ছবছে বালা ও ওয়ালা হামারা নবী,
আপনে মওলাকা পেয়ারা হামারা নবী,
দোনো আলমকা দুলহা হামারা নবী”
“নুর নবী এসেছে নুর নিয়ে এসেছে
সেই নুরেতে সারা জাহান আলোকিত হয়েছে
আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ
আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া হাবিবাল্লাহ”
“মক্কা মদীনার ফুল, সেই ফুলেরই খুশব হলো মুহাম্মদ রসুল (সা:)
আরবেরই মরুভুমিতে, ফুটিলো একটি ফুল,
সেই ফুলেরই নাম রাখিল মুহাম্মদ রসুল (সা:)”
কামলিওয়ালা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন যেমনী বিনয়ী, তেমনি মিষ্টভাষী, অতিরাগের মুহুর্তেও তিনি কোনদিন কাউকে কটুকথা বলেননি। তার মধুময় ব্যবহারে শত্রæও মুগ্ধ হয়ে যেতো। অসতর্ক মুহুর্তেও তার মুখ থেকে কোনদিন মিথ্যা কথা বের হয়নি। সত্যবাদিকতার জন্যই আরববাসীরা তাকে “আল-আমিন” “আস সাদিক” উপাধিতে ভুষিত করেছিল। অভাবগ্রস্থকে তিনি কখনো হতাশ করেননি। নিজে না খেয়েও তিনি গরীব মুসাফির ও ক্ষুধার্তের ক্ষুধা নিবৃত্তি করেন। শত্রæ-মিত্র, স্বজন-পরজন সকলের জন্য তার করুনা সমভাবে বর্ধিত হতো। বিপদের মুহুর্তেও তিনি কোন দিন অসৎ পন্থা অবলম্বন করেননি বা মিথ্যার আশ্রয় নেননি। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন দৃঢ় মনোবল ও অসীম ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তিনি ছিলেন ক্ষমার মূর্ত প্রতীক। তিনি আমাদের জন্য অনুকরনীয় অনুসরনীয় একমাত্র ‘উসওয়াতুন হাসানাই’- ‘সর্বোত্তম মহান আদর্শ’। তিনি ছিলেন মানবতার মুক্তির দূত। তাহার আদর্শ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আসতে পারে ইহকালে শান্তি ও পরকালে মুক্তি।
আসুন আমরা সবাই এই মহান রবিউল আউয়াল মাসকে আখেরীও বিশ^ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমন উপলক্ষ্যে স্বাগত জানাই এবং আল্লাহর হাবীবের শানের উপর বেশী বেশী দরুদ শরীফ পাঠ করি আল্লাহ তায়ালা পেয়ারা হাবীরের মহব্বতের ফয়েজ আমাদের সকলের হৃদয়ে আসুক। আমীন।
লেখক::
এস এম ফখরুল ইসলাম নোমানী
হেড অব ফাইন্যান্স এন্ড একাউন্টস
এপিক হেলথ কেয়ার লিমিটেড