ধর্ম নিরপেক্ষ চেতনা প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী বাধাগ্রস্থ করছে

৫২’র ভাষা আন্দোলন, দীর্ঘ মুক্তিসংগ্রাম ও একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃষ্টান ধর্মের মানুষের মিলিত রক্তস্রোতে এদেশ স্বাধীন হলেও মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও ধর্ম নিরপেক্ষ চেতনা বারবার প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী দ্বারা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পূজা উদযাপন পরিষদ।

আসন্ন শারদোৎসবকে সামনে রেখে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগর চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে। এতেলিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিষদের সভাপতি এড. চন্দন তালুকদার।

এসময় উপস্থিত ছিলেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্রীপ্রকাশ দাশ অসিত, সাবেক সভাপতি সাধন ধর, বিমল দে, মুক্তিযোদ্ধা অরবিন্দ পাল অরুন, সহ সভাপতি অধ্যাপক অর্পন কান্তি ব্যানর্জী, রানা বিশ্বাস, লায়ন দুলাল চন্দ্র দে, সুমন দেবনাথ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিথুন মল্লিক, দক্ষিণ জেলা পূজা পরিষদের সাধারন সম্পাদক পরিমল দেব, উত্তর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এড. নিখিল কুমার নাথ, সিনিয়র সদস্য বাবুল ঘোষ বাবুন, অরূপ রতন চক্রবর্ত্তী, বিপ্লব চৌধুরী, প্রদীপ শীল, সাংগঠনিক সম্পাদক সজল দত্ত, সহ-কোষাধ্যক্ষ বিপ্লব সেন, দপ্তর সম্পাদক দোলন দেব, প্রচার সম্পাদক এড. টিপুশীল জয়দেব, শিক্ষা ও গবেষনা সম্পাদক সুকান্ত মহাজন টুটুল, সহ প্রচার সম্পাদক ষ্ট্যালিন দে, সহ পূজা বিষয়ক সম্পাদক সঞ্জয়িতা দত্ত পিংকী, সদস্য দীপ্ত সিংহ, সাজু চৌধুরী, কোতোয়ালী থানা পূজা পরিষদের সভাপতি লিটন শীল, সদস্য অয়ন ধর।
লিখিত বক্তব্যে বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতাসহ সকল প্রকার বৈষম্য ও বিভেদ নীতির অবসানের দাবী জানানো হয়। বর্তমান সরকার মৌলবাদী গোষ্ঠীর উত্থান আপাতত সামাল দিতে পারলেও তাদের গোপন কার্যক্রম এখনো চলছে। এছাড়াও প্রতিনিয়ত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নানাভাবে নির্যাতনের খবর বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে যার জন্য সনাতন সম্প্রদায় শংকিত। তাছাড়াও আসন্ন শারদোৎসবের নিরাপত্তা নিয়ে সরকারের গৃহীত একটি সিদ্ধান্তে অর্থাৎ পূজা মন্ডপে নিরাপত্তা রক্ষায় স্থায়ী পুলিশ-আনসার না দেয়ার সিদ্ধান্তে পূজা কমিটিগুলো উদ্বিগ্ন এবং সনাতন সম্প্রদায়ের জনগণ আরো শংকিত বলে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়। নেতারা বলেন, প্রতিবছর শারদোৎসব চলাকালীন পূজা মন্ডপের পাহারায় স্থায়ীভাবে ৪-১০ জন পুলিশ-আনসার এবং ৫-১০ জন ভিডিপি নিয়োগ দেয়া হতো, কিন্তু এবার শুধু টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে নিরাপত্তা কতটুকু হবে তা সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য জোড় দাবী জানানো হয়।
লিখিত বক্তব্যে সরকারকে সাধুবাদ ও পূর্ণ সমর্থন জানান- নারী ধর্ষক ও মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পাশাপাশি দাবী করেন, সাম্প্রদায়িক উস্কানিদাতা, মদদদাতা, সনাতন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ভাংচুরকারী সনাতন জনগোষ্ঠীর জায়গা সম্পত্তি দখলকারী ও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে সহ অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য। লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, বৈশ্বিক মহামারী করোনা দুর্যোগের কারণে এবারের শারদোৎসবের বিভিন্ন কর্মসূচী সংক্ষিপ্ত করেছে মহানগর ও আঞ্চলিক পূজা কমিটিগুলো। পূজার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হবে স্বাস্থ্য বিধি মেনে। জৌলুস পূর্ণ আলোক সজ্জা, মন্ডপের সাজসজ্জা, থিম, আলোচনা সভা, সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান, আরতি প্রতিযোগিতা, সাউন্ড সিস্টেম বর্জন করা হবে এবং এগুলো থেকে যে অর্থ সাশ্রয় হবে তা করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ গরীব ও অনাথালয়ে বিতরণ করা হবে। পূজামন্ডপে ও বিসর্জন অনুষ্ঠানে লোক সমাগম বেশি না হবার জন্য সকলকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে এবং ভক্ত ও দর্শনার্থীরা যাতে সুরক্ষিত থাকে তার জন্য সকলের প্রতি ২৬ দফা নির্দেশনা দিয়ে লিফলেট প্রচার করা হয়। পরিষদের নেতৃবৃন্দেরা মনে করেন মানুষ আবার ঘুরে দাঁড়াবে, করোনাকে জয় করে আগামী বছর আনন্দ উদ্দীপনায় এ উৎসব সকলের অংশ গ্রহণের মাধ্যমে পালন করা হবে।
এবার জে.এম.সেন হল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠান মালার মধ্যে রয়েছে বোধন, অধিবাস, সপ্তমী পূজা, অষ্টমী পূজা, সন্ধি পূজা, নবমী পূজা, দশমী পূজা, বস্ত্রদান, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, জাগরন পুঁথি পাঠ, প্রতিদিন সন্ধ্যারতি এবং ২৬ অক্টোবর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে বিসর্জন অনুষ্ঠান। তবে সব কিছু স্বাস্থ্য বিধি মেনে করা হবে। এবার বিসর্জন স্থান পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে অলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও শোভাযাত্রা না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এছাড়া লিখিত বক্তব্যে ৭২ এর সংবিধানের আলোকে সম অধিকার নিশ্চিত, শারদীয়া দুর্গাপূজায় ৪ দিন সাধারণ ছুটি, বিভিন্ন বাহিনীসহ প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে আনুপাতিক হারে সনাতন সম্প্রদায়ের জনগণকে নিয়োগ প্রদান, সরকারী সংস্কৃত কলেজ স্থাপন, হিন্দু কল্যাণ ট্রাষ্টকে ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা, রাজনীতি ও নির্বাচনে ধর্মীয় এবং সাম্প্রদায়িকতার ব্যবহার নিষিদ্ধ করার দাবীসহ মোট ১২টি দাবী জানানো হয়।