অর্ধডজন প্রতারণা ও লুটপাটের নেপথ্য নায়ক প্রতারক সাইফুল

বন্দরের কন্টেইনার ও পণ্য লোপাট চক্রের হোতা প্রতারক ধরাছোয়ার বাইরে ব্যবসায়িক পার্টনারের ৭০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার জন্য অপহরণ নাটক সাজিয়েছে চট্টগ্রামের কথিত সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী ও মিরসরাই এলাকার প্রতারক সাইফুল ইসলাম (সাইফ)।
অপহরণের নাটক সাজিয়ে ৭০ কোটি টাকার দেনা থেকে রেহাই পেতে গিয়ে এবার নিজেই ফেঁসে যাচ্ছেন কথিত এই ব্যবসায়ী।
আওয়ামী লীগ নেতা ও চট্টগ্রামের বিশিষ্ট সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী নওশাদ মাহমুদ রানার ৭০ কোটি টাকাসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর শত কোটি টাকা মেরে দিয়ে রাতারাতি কয়েকটি গাড়ী বাড়ির মালিক বনে যাওয়া প্রতারক সাইফুলের বিষয়ে অনুসন্ধানে চালালে কেঁচু কুড়তে সাপ বেরিয়ে এসেছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানীকৃত পণ্য ও কন্টেইনার গায়েব চক্রের মূল হোতা সাইফুলের বিরুদ্ধে রয়েছে অন্তত অর্ধডজন প্রতারণা ও লুটপাটের মামলা ও একডজন সাধারণ ডায়রি।
ঢাকার কেরাণীগঞ্জের আমদানীকারক মো. আল-আমিন চৌধুরী জানান, ২০১৮ সালের বিদেশ থেকে সুলভ মূল্যে কসমেটিকস ও চশমা সামগ্রী আমদানী করেন। সাইফুলের মালিকানাধীন সিএন্ডএফ এর মাধ্যমে খালাস করার জন্য চুক্তি হয়। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে উত্তরা ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা ও আল আরাফা ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা থেকে মোট ১১ কোটি ১৯ লাখ দিই। এই টাকার বিপরীতে তারা (সাইফুল গং) মালামালের ট্যাক্স, কমিশন শিপিং চার্জ ও পোর্ট চার্জসহ মোট ৪ কোটি ৭ লাখ ৫ হাজার ৯শ টাকার বিদেশী মালামাল ডেলিভারী দেয়।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দুই চালানের মালামাল খালাস করার জন্য ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার ডকুমেন্ট তার ব্যাসায়ীক পার্টনারের মাধ্যমে (মামলা ২ নং আসামী) মো. রাজিব খানের পল্টন মডেল থানার রাজিব এন্টারপ্রাইজে জমা নেয়।
পরবর্তিতে বন্দর থেকে মালামাল খালাসের কথা বলে আরও ৫০ লাখ টাকা নেয়। টাকা নেয়ার পর আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় প্রতারক সাইফুল ও তার পার্টনাররা।
কিন্তু পরবর্তিতে আমার আমদানীকৃত মালামাল তারা খালাস করে আত্মসাৎ করে। এ ব্যাপারে সাইফুল ইসলামকে প্রধান আসামী ৫ জনের বিরুদ্ধে গত ২৭ জানুয়ারী ডবলমুরিং থানায় মামলা করা হয়।
এদিকে প্রতারক ব্যবসায়িক পাটনার ও বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা নওশাদ মাহমুদ রানার ৭০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে পালিয়ে থাকা সাইফুল সে টাকা না দিতে মুলত একটি অপহরণ নাটক সাজিয়েছে।
গত শুক্রবার সাইফুলের ব্যবসায়িক পাটনার, ফাহমিদা কর্পোরেশনের সত্বাধিকারী ও নগর আওয়ামী লীগ নেতা নওশাদ মাহমুদ রানার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপহরণের নাটক সৃষ্টি করে রাতেই সে নিজে বিরোধ নিস্পত্তির জন্য প্রভাবশালী এক আওয়ামী লীগ নেতার বাসায় বৈঠক করেন এবং সেখানে তিনি অঙ্গিকার করেন সোমবারের মধ্যে তিনি রানার টাকা ফেরত দেয়ার।
এ ব্যাপারে নওশাদ মাহমুদ রানা বলেন, নগরীর ঈদগাঁ বউ বাজার দুলহান কমিউনিটি সেন্টার বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে শুক্রবার বিকালে ব্যবসায়ি সাইফুল ইসলামকে কথিত অপহরণের বিষয়ে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা ডাহা মিথ্যা ও তার পরিবারের সাজানো নাটক।
ব্যবসায়ী রানা বলেন, সাইফুল একজন আমার ব্যবসায়িক পাঠনার ছিল। আমরা যৌথভাবে এস. এন ট্রেড, আর. এস কর্পোরেশন এবং ফাহমিদা কর্পোরেশন নামে বিগত ৮ বছর ব্যবসা পরিচালনা করতাম। আমি আমার এক মাত্র সন্তানের চিকিৎসা নিয়ে বছরের বেশিরভাগ সময় দেশের বাইরে থাকতে হত। আমি পার্টনার হিসেবে তাকে বিশ্বাস করতাম। সে কারণে ব্যবসাকৃত ৭ হাজার বিল অব এট্রির বিপরীতে আমদানীকারকদের সকল লেনদেনের টাকা পার্টনার সাইফুলের হিসেবে জমা হতো।
মাঝে মধ্যে কিছু খরচের টাকা আমি নিলেও লাভের সমুদয় টাকা সাইফুলের হিসেবে জমা থাকতো। পরবর্তিতে আমি ব্যবসার চুড়ান্ত হিসেব চাইলে আজ দিবে কাল দিবে বলে হিসাব না দিয়ে তালবাহনা করতে থাকে।
প্রতারণা মামলায় সাইফুলের বিরুদ্ধে আদালতে পুলিশের চার্জশীট।
আমি অফিস কর্মচারীদের মাধ্যমে ৭ হাজার বিল অব এট্রির বিপরীতে হিসেব মতে ৭০ কোটি টাকা পাওনা হই। সাইফুল পাওনার কথা স্বীকার করলেও দিতে গড়িমসি করতে থাকে। এ নিয়ে অনেক শালিশ দরবার হয়েছে।
ইতোমধ্যে প্রশাসনের মধ্যস্থতায় এক কোটি ৩০ লাখ টাকা দিলেও বাকি টাকা শিঘ্রই ফেরত দেয়ার অঙ্গিকার করে।
কিন্ত গত তিন বছর বাকি টাকা না দিয়ে আত্মগোপন করে চলছিল। এ নিয়ে নগরীর বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে ৩/৪টি জিডি করা হয়েছে।
গত শুক্রবার দুলহান ক্লাবে একটি বিয়ের দাওয়াতে গেলে তার দেখা পেয়ে তাকে পাওনা টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে সে আবারও মিথ্যা আশ্বাস দেয়। এ নিয়ে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। তখন তাকে বিয়ের আসরে ঝগড়া না করে কমিউনিসেন্টারের বাইরে যেতে বললে আমরা কয়েকজন কথা বলার জন্য রাস্তার পার্শ্বে গলিতে গিয়ে কথা বলতে থাকি।
এ অবস্থায় তার স্ত্রী শোর-চিৎকার করতে থাকলে লোকজন জমে যায় এবং কয়েকজনের প্ররোলচনায় দ্রুত হালিশহর থানায় গিয়ে কান্নাকাটি করে তার স্বামীকে অপহরণ করা হয়েছে বলে মিথ্যা অভিযোগ করে।
প্রকৃত অর্থে তাকে (সাইফুল) কেউ অপহরণ করেনি। পরে রাতে এনিয়ে নগর আওয়ামী লীগ নেতা ও মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম সাহেবের বাসায় বৈঠক হয়। সেখানে সাইফুল তার কাছে আমার টাকা পাওয়ার কথা স্বীকার করে এবং আগামী সোমবারের মধ্যে টাকা ফেরত দেয়ার অঙ্গিকার করে। সেখানে তার স্ত্রীও উপস্থিত ছিল।
অপহরণের বিষয়ে হালিশহর থানার ওসি রফিকুল আলম জানান, সাইফুলের স্ত্রীর লিখিত অভিযোগের ভিক্তিতে একটি অপহরণ মামলা হয়েছে। ভিকটিমকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ব্যবসায়িক বিরোধের জেরে এ ঘটনা। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।