সিঙ্গাপুরে “প্রেসিডেন্ট’স এওয়ার্ড-২০২০” পেলেন ওমর ফারুকী শিপন

সিঙ্গাপুরে সর্বোচ্চ সম্মানিত “প্রেসিডেন্ট’স ভলান্টিয়ারিজম এন্ড ফিল্যানট্রফি এওয়ার্ড” পেলেন বাংলাদেশের গর্ব ওমর ফারুকী শিপন। তিনি “পিপলস অব গুড” ক্যাটাগরিতে এই এওয়ার্ডটি জিতে নেন। আজ বেলা তিনটায় ইসথানা ভবনে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মহামান্য প্রেসিডেন্ট হালিমা ইয়াকুব এই সম্মানিত পদকটি তার হাতে তুলে দেন।

ভালো কাজ মানুষকে বরাবরই সম্মানিত করে তুলে। যার প্রমাণ দিলেন বাংলাদেশ চাঁদপুর জেলার, মতলব উত্তর থানার গর্ব ওমর ফারুকী শিপন। যিনি ২০১০ সালে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করে জীবীকার অন্বেষে সিঙ্গাপুরে পারি জমান। বর্তমানে তিনি একটি বহুজাতিক সনামধন্য কোম্পানিতে কর্মরত।

এই দূর্যোগপূর্ণ বছরে কোভিড-১৯ শুরু হওয়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে গৃহবন্দী প্রবাসী শ্রমিকদেরকে নানাভাবে সহযোগিতা করার জন্য তিনি আজ সরকার ঘোষিত ৩১ জন সম্মানিত ব্যাক্তিদের মধ্যে একজন। এ শুধু সিঙ্গাপুর প্রবাসীদের গর্ব নয়। সারা বিশ্বের সকল প্রবাসীদের গর্ব। বলা যায় এ এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন তিনি।

সমগ্র পৃথিবী এক অদৃশ্য শত্রু করোনা ভাইরাসের তান্ডবলীলায় যখন উলোট পালোট হয়ে যাচ্ছিলো তখন এর বিস্তার থেকে সিঙ্গাপুরও বাদ যায়নি। একজন দুইজন করে হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হয় বিশ্বের রোল মডেল এই আধুনিক শহর সিঙ্গাপুরে। নিমিষেই ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ের মতো চারদিকে আতংক ছড়িয়ে পরেছিলো। মানুষের মনে মৃত্যুভয় ডুকে যায়। এক অসহনীয় সময় কেটেছে প্রতিটি প্রবাসী শ্রমিকের।

ওমর ফারুকী শিপন এ দেশে প্রায় এক লক্ষ তিরিশ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিকদের মধ্যে তিনিও একজন খেটে খাওয়া প্রবাসী। আজ থেকে পাঁচ বছর আগে “সিঙ্গাপুরে আমরা প্রবাসী বাংলাদেশী” বা “Bangladeshi Migrant Workers in Singapore” নামে একটি ফেইজবুক পেইজ খুলেন তিনি। যেখানে এ দেশের প্রবাসী শ্রমিকদের বিভিন্ন অনুভূতিগুলো তুলে ধরেন। এই দেশের আইন কানুনসহ শ্রমিকদের নানান সমস্যা তার কলমে উঠে আসে। পাশাপাশি সমসাময়িক সকল স্থানীয় নিউজ পত্রিকাগুলো থেকে বঙ্গানুবাদ করে তিনি তার পেইজে আপডেট দেন। ফলে প্রবাসীরা সহজেই পেইজটির প্রতি মনযোগী হয়ে উঠে এবং কোভিড-১৯ চালকালিন সময় সারাবিশ্বের মহামারীর সঠিক তথ্য সেই পেইজ থেকে মানুষ জানতে পারে।

শুধু তাই নয়, এই মহামারী থেকে প্রবাসীদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে পেইজে নানান রকম বিষয় নিয়ে লাইভ অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। তাছাড়াও ঐ সময়টায় তিনি প্রতিদিন এক থেকে দুইশ শ্রমিকদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যাবস্থা করে দিয়েছেন। তাকে সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন এ দেশের সরকারী বেসরকারি নানান সংস্থা এবং কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। একটি ফেইজবুক পেইজের মাধ্যমে যে প্রবাসীদেরকে নিঃস্বার্থভাবে উপকার করা যায় তা তিনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন।

আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সাধারণত নিজেদের প্রচারণা নিয়েই ব্যাস্ত থাকি। ফ্রেন্ড ফলোয়ার দুই অংক থেকে তিন অংক হলেই শুরু করি কেক কাটাকাটি, আনন্দ উচ্ছাস। অথচ মানুষের কল্যানে আমরা কতটুকু কাজ করতে পেরেছি তার হিসাব রাখিনা। তবে আমরা হিসাব না রাখলেও সিঙ্গাপুরের সরকার ঠিকই নজর রেখেছে। তারা মনিটরিং করেছে সিঙ্গাপুরের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় কার ভূমিকা কেমন ছিলো। দুর্যোগপূর্ণ সময়ে কে কি ধরনের কাজ করেছে। আর সব কিছু বিবেচনায় একটি পেইজের নামই বারবার উঠে এসেছে সেটা হলো “সিঙ্গাপুরে আমরা প্রবাসী বাংলাদেশী” যার এডমিন ওমর ফারুকী শিপন। যে নিঃস্বার্থভাবে শ্রমিকদের সমস্যা নিয়ে কাজ করেছে। যার ধরুন আয়োজকরা তাকে এই সম্মানজনক পুরষ্কারে ভূষিত করতে কার্পন্য করেনি।

একজন ওয়ার্ক পারমিট হোল্ডার হয়েও দেশের ক্রান্তিলগ্নে প্রবাসীদের পাশে থেকে নিঃস্বার্থ ভাবে সহযোগিতা করার জন্য এই সম্মানিত পুরষ্কার গ্রহণ করে তিনি শুধু বাংলাদেশের মুখ উজ্জলই করেননি তিনি এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত একজন ওয়ার্ক পাশ হোল্ডার হিসেবে এই প্রথম পুরষ্কারটি গ্রহণ করেন।

কর্মজীবনের পাশাপাশি তিনি একজন লেখক ও সাংবাদিক। ২০১৯ সালে Migrant Life; Stories of reverist নামে ইংরেজী ভাষায় একটি বই প্রকাশিত হয় যা বর্তমানে সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল লাইব্রেরীতে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

সকল প্রবাসীদের পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও প্রাণঢালা ভালোবাসা রইলো।

শরীফ উদ্দিন, সিঙ্গাপুর প্রবাসী।