উত্তর জেলা আ’লীগের কমিটি নিয়ে কেন্দ্রে অভিযোগ

রাজনৈতিক প্রতিবেদক::
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বিতর্কিত নেতারে স্থান দেওয়ার অভিযোগ করে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করা রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিনি। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে রাজী না। অভিযোগে কোন তারিখ না থাকলেও অনুলিপি দেওয়া হয়েছে আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সবাইকে। বিষয়টি জানতে চাইলে আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, এটা জানার কিছু না। যখন সময় হবে তখন জানতে পারবেন।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম বলেন, কে বা কারা অভিযোগ দিয়েছে সেটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। অভিযোগ দেওয়ার অধিকার সকলের আছে। আফতাব খান অমি ও শামীম সরোয়াার আমার ব্যবসায়িক পার্টনার না। অমি জেলা পরিষদের সদস্য। তার পরিবার আওয়ামী পরিবার। অভিযোগ কেন্দ্র যাছাই করেই তো কমিটি দিবে।
তবে তার জানা মতে কোন বিতর্কিত ব্যক্তি কমিটিতে সুপারিশ করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, কমিটি আমি করেছি আশা করি কোন বিতর্কিত ব্যক্তি কমিটিতে স্থান পাবে না।
তবে তার দেওয়া অভিযোগের কপি প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। তাতে দেখা যায়, চট্টগ্রাম উত্তর জেলার বিভিন্ন উপজেলার ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করে তাদের বিতর্কিত কর্মকান্ডের কথা তুলে ধরেন। তার পাঠানো অভিযোগে যাদের নাম রয়েছে তাদের মধ্যে উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের একান্ত সহকারীর নামও রয়েছে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, হাটহাজারী উপজেলার নূর খান। তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জি. মোশারফ হোসেনের ব্যক্তিগত কর্মচারী। জীবনে কোনদিন আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত ছিল না। তিনি অবৈধভাবে সম্পদের মালিক এবং দুর্নীর্তিবাজ জি.কে শামীমের সাথে অবৈধ ব্যবসা করেছেন। শামীমের সমন্বয় টেন্ডার ও তদবির বাণিজ্যের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে। অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ায় দুদক তাকে অভিযুক্ত করে মামলা করেছে।
হাটহাজারীর আরেক জনের নাম আছে সেখানে। তার নাম মো. সেলিম উদ্দিন। তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে হতে অনৈতিক ব্যবসা করার কারণে সারা জীবনের জন্য সে দেশের সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়েছেন। তার নামও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে উত্তর জেলা কমিটিতে। রাউজান উপজেলার আবুল কালাম আজাদ। নিজ এলাকার সাথে কোনো সম্পৃক্ততা নাই। জীবনে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার, চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারম্যানের জন্য প্রার্থী হয়ে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। রাউজানের আরেকজন প্রিয়াংকা হাসান। তিনি কোনোদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সাথে কোনদিন সম্পৃক্ত ছিলেন না। তিনি বিএনপির নেতা আব্দুল্লাহ আল-নোমানের এজেন্ট হিসাবে ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির হয়ে কাজ করেছেন।
মিরেশ্বরাই উপজেলার এনায়েত হোসেন নয়ন। তিনি ইউনিয়ন পর্যায়ে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকলেও জীবনে উপজেলা পর্য়ায়ে কমিটিতে ছিলেন না। তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে তাকে প্রস্তাবিত উপজেলা কমিটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মিরেশ্বরাই উপজেলার আরেকজন প্রদীপ ইউনিয়ন পর্যায়ের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা না থাকলেও কোনো দিন উপজেলা পর্যায়ে কোন কমিটিতে পদ ছিল না। জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে প্রস্তাব করা হয়েছে তার নামও। আকে জনের নাম আছে তিনি আবুল বশর। তিনি বয়স্ক ও দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ।
সন্দ্বীপ উপজেলার আফতাব খান অমি। জীবনেও কোনদিন রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। শুধু মাত্র উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালামের ব্যবসায়ীক অংশীদার হওয়ায় তাকে কোষাধ্যক্ষ পদে রাখা হয়েছে।

জীবনে কোনদিন রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল না তিনি।
ফটিকছড়ি উপজেলার রুস্তম আলী চেয়ারম্যান নিজ বাসার কাজের মেয়ে হত্যা, সরকারি জায়গা দখল, গাছ কাটাসহ অসংখ্য মামলার আসামি। তাকে প্রস্তাবিত জেলা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জামায়াতের রাজনীতি করা ঈসমাইল নামের আরেক জনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে অভিযোগ করে বলা হয়, ঈসমাইলের পিতা আবসার ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা। আর এ বিএনপি নেতার পুত্রকেও রাখা হচ্ছে কমিটিতে। আখতার পারভেজ মাহমুদ জীবনে ছাত্রলীগ যুবলীগ করেননি। তার পিতা ড. মাহমুদ হাসানের মৃত্যু পর রাজনতিতে সক্রিয় না হলেও জেলা পরিষদ সদস্য হন পিতার স্থলাভিষিক্ত হিসাবে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। সীতাকুন্ডে মহসিন জাহাঙ্গীর ২০০১ সালে নৌকার বিপক্ষে থাকার কারণে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। সীতাকুন্ডে আরেকজন ইঞ্জিনিয়ার মেজবাউল আলম লাভলু। তিনি আওয়ামী লীগর কোন পদে ছিলনা। এম এ সালামের ব্যবসায়িক পার্টনার হওয়ার সুবাধে ইঞ্জিনিয়ার মেজবাউল আলম লাভলু নামের রাখা হচ্ছে।
গত ৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আ. লীগের কাউন্সিলে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ সালামকে সভাপতি ও মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শেখ আতাউর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেছেন কাউন্সিররা। উত্তর জেলার সম্মেলন ও কাউন্সিল হলেও কেন্দ্রী আওয়ামী লীগের সম্মেলনসহ নানাবিধ কারণে জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হয়নি।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে দলের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি প্রেসিডিয়াম সদস্য হওয়ার পর ফটিকছড়ির সাবেক সংসদ সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলম চৌধুরী উত্তর জেলা আ. লীগের সভাপতি হন। নুরুল আলম চৌধুরীর মৃত্যু পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। কাউন্সিললে ফজলে করিম সভাপতি প্রার্থী হলেও দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা আবদুস সালামের কাছে পরাজিত হন তিনি।

এম ইউ, এক্স