উখিয়ায় ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি

কায়সার হামিদ মানিক,উখিয়া।
সারাদেশের মতো উখিয়ার খাদ্যগুদামে সরকারিভাবে বোরো মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। বাজারে ধানের দাম বেশি পাওয়ায় গুদামে ধান দিতে আগ্রহী নন কৃষক। তেমনি বাড়তি দামে ধান ক্রয় করে চালের পড়তা বেশি পড়ায় চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পরও খাদ্যগুদামে চাল সংগ্রহ করেনি মিলাররা। বর্ধিত সময়েও ধান-চাল ক্রয় অভিযানের চিত্র হতাশাব্যঞ্জক দাবি করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, পারিপার্শিক বিভিন্ন নেতিবাচক পরিবেশের কারণে কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ধান গুদামজাত করেছে। যে কারণে সময়সীমা বর্ধিত করার পরও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে সক্ষম হয়নি।
রাজাপালং ইউনিয়নের দোছরী গ্রামের কৃষক আব্দু সালাম, রুহুল আমিন বলেন, খোলাবাজারে ধান-চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় সেখানে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া বাজারে সচরাচর ঘরোয়া পরিবেশে ধান-চাল বিক্রি করা সম্ভব হয়। যা খাদ্যগুদামে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সেখানে তাদের বাঁধাধরা নিয়ম-নীতি পালন করতে গিয়ে অনেক ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়। তাই খাদ্যগুদামে ধান-চাল না দিয়ে খোলাবাজারে বিক্রি করা দেয়া হয়েছে। ওই কৃষক জানান, বাজারে ভালো দামও পাওয়া গেছে। পালংখালী ইউনিয়নের কৃষক জমির আহমদ ও লোকমান হাকিম জানান, সরকার এক হাজার ৪০ টাকা মণ ধরে ধান কিনলেও ধান শুকানো, ফ্যার্নিং করা, ময়েশ্চারসহ ধানগুদামে দেয়ার পরও তারা বিভিন্ন অজুহাত তুলে কালক্ষেপণ করে থাকে। এ সমস্ত কারণে খাদ্যগুদামে ধান দেয়ার চাইতে খোলা বাজারে প্রতি মণ ৯শ’ টাকা থেকে প্রকারভেদে মণ প্রতি হাজার টাকা পেলেও তা তাদের জন্য অনেক শ্রেয় বলে কৃষকেরা দাবি করেন।
উপজেলা খাদ্যগুদামের তালিকাভুক্ত মিলার ফিরোজ সওদাগর জানান, খাদ্যগুদামে ধান-চাল ক্রয় অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে দেশে বয়ে যাওয়া করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়ে লাগাতার বর্ষণের কারণে কৃষকেরা খাদ্যগুদামের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেনি। যে কারণে মিলাররাও ধান-চাল ক্রয় করতে ব্যর্থ হওয়ায় খাদ্যগুদামের উপর প্রভাব পড়েছে। আশা করি, আগামীতে এমন প্রভাব থাকবে না। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সুযোগসন্ধানী মিলাররা কৃষকেরা কাছ থেকে কম দামে ধান চাল ক্রয় করে মজুদ করে রাখে। যা ক্রমান্বয়ে বাজারে ছেড়ে অতিরিক্ত ফায়দা লোটে। যে কারণে এসব মিলাররা খাদ্যগুদামের সাথে চুক্তিবদ্ধ থাকার পরও তারা যথাসময়ে ধান-চাল খাদ্যগুদামে সরবরাহ করেনি।
উপজেলা খাদ্য অফিস সূত্রে জানা যায়, ৩১ মে থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১ হাজার ২০ মেট্রিক টন ধানের মধ্যে ৩০৪ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হয়েছে। তাছাড়া ১ হাজার ৫০ মেট্রিক টন ধান-চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ক্রয় করা হয়েছে ৯৮৭ মেট্রিক টন।
উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (এলএসডি) সুজিত বিহারী সেন জানান, সাারাদেশব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের তার পরবর্তী ভারী বর্ষণের ফলে কৃষকেরা আতংকগ্রস্ত অবস্থায় তাদের উৎপাদিত ধান-চাল গুদামজাত করে রেখেছে। এমন পরিস্থিতির কারণে মিলাররা তৃণমূল পর্যায়ে তাদের নির্ধারিত ধান-চাল ক্রয়ে ব্যর্থ হয়েছে। পাশাপাশি নানা কারণে কৃষকেরাও খাদ্যগুদামে ধান-চাল ক্রয়ে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে। যে কারণে সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ধান-চাল ক্রয় করা সম্ভব হয়নি।