সরে দাঁড়ালেন আহমদ শফী, ছাত্র আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা

হাটহাজারী প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালকের পদ থেকে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী।

আজ বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে মাদরাসার মজলিসে শুরার বৈঠকে আল্লামা শফী তার এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। বৈঠক শেষে মজলিসে শুরার একাধিক সদস্য এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।

ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে আল্লামা আহমদ শফি মুহতামিমপদ থেকে পদত্যাগ করে মাদরাসার দায়িত্ব মজলিসে শূরার হাতে অর্পণ করেছেন। আন্দোলনরত ছাত্রদের দাবী বাস্তবায়ন হওয়ায় আন্দোলনের সমাপ্তিও ঘোষনা দেয়া হয়েছে।
উক্ত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, আল্লামা শাহ আহমদ শফী, আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, মাওলানা শেখ আহমদ, মাওলানা নোমান ফয়েজি, মাওলানা সালাহউদ্দিন নানুপুরী, মুফতী নুর আহমদ, মাওলানা শোওয়াইব, মাওলানা ওমর, মাওলানা কবির আহমদ, মাওলানা আহমদ দিদার, মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী। বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো হলো, আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার মুহতামিমের পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করায় শূরা কমিটি আল্লামা আহমদ শফিকে সদর মুহতামিম হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আনাস মাদানীকে স্থায়ী ভাবে বহিষ্কার ও গতকালের সব সিদ্ধান্ত বলবত রেখে মাওলানা নুরুল ইসলাম কক্সবাজারিকে সব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এবং পরবর্তী মুহতামিম নির্ধারণের দায়িত্ব শূরা কমিটিকে দেওয়া হয়েছে।

 

বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে বেশকিছু দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন হাটহাজারী মাদরাসার ছাত্ররা। তারা মাদরাসার সব কটি ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়। মাওলানা আনাস মাদানীসহ কয়েকজন শিক্ষকের কক্ষে ভাঙচুর করা হয়।

ছাত্ররা মাদরাসার ভেতরে বিক্ষোভের সময় বিভিন্ন প্রচারপত্র বিলি করেন। সেখানে তারা প্রথমে দাবি করেন, মাওলানা আনাসকে মাদরাসা থেকে অব্যাহতির। অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- আনাস কর্তৃক অব্যাহতি দেওয়া তিনজন শিক্ষককে পুনর্বহাল করা, আনাস কর্তৃক নিয়োগ করা সব অযোগ্য শিক্ষককে ছাঁটাই করা, ছাত্রদের ওপর জুলুম-হয়রানি বন্ধ করা। আল্লামা আহমদ শফী বয়স্ক হওয়ায় মহাপরিচালকের পদ থেকে অব্যহতি দিয়ে উপদেষ্টা বানানো এবং শুরা কমিটির সদস্য মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, মাওলানা নুরুল আমীন ও মাওলানা আবুল কাসেম ফেনীসহ বিতর্কিতদের বাদ দেওয়া।

ছাত্রদের বিক্ষোভের একপর্যায়ে বুধবার রাতে জরুরি শুরা কমিটির বৈঠক ডাকেন আল্লামা শফী। রাত সাড়ে ১০টার দিকে বৈঠক শেষ হয়। বৈঠক শেষে শুরা কমিটির সদস্য মাওলানা নোমান ফয়েজী ছাত্রদের বলেন, আল্লামা আহমদ শফীর সভাপতিত্বে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে আনাসকে অব্যাহতি দেওয়ার। ছাত্রদের হয়রানি করা হবে না। বাকি সিদ্ধান্ত শনিবার মাদরাসার শুরার বৈঠকে নেওয়া হবে। এরপর ছাত্ররা শান্ত হন।

মাওলানা আনাস হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষাসচিব, মাদরাসার মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীর ছেলে। সেই সঙ্গে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের প্রচার সম্পাদক।

বিক্ষোভের শুরু থেকেই ছাত্ররা মাদরাসার মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দিলে আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কায় মাদরাসার বাইরে গেটের সামনে অবস্থান নেন র‍্যাব ও পুলিশের সদস্যরা।

বৃহস্পতিবারও মাদরাসা ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। মাদরাসার সবগুলো ফটকে তালা ও ক্লাস বন্ধ ছিল।