আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিং চবির অবস্থানকে সম্মানজনক পর্যায়ে নেয়া হবে

চবি’র সিনেট এর ৩২ তম বার্ষিক সভায় প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার

চবির উপাচার্য বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক, কবি ও কলামিস্ট প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার বলেছেন, দেশে সৎ, দক্ষ, যোগ্য এবং আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর মানব সম্পদ উৎপাদন এ বিশ^বিদ্যালয়ের অন্যতম লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে মানসম্পন্ন শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে বৈশি^ক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম করে গড়ে তুলতে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন বদ্ধপরিকর। কোভিড-১৯ ভাইরাসের আক্রমনে বিশে^র প্রায় প্রতিটি দেশ বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থায়ও পড়েছে বিরূপ প্রভাব। এ সংকট কাটিয়ে উঠতে সারা বিশে^ করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশেও এ যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এই যুদ্ধে সামিল হয়ে বিশ^বিদ্যালয় পরিবারের সকলকে সাথে নিয়ে করোনা প্রতিরোধে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে এবং এর সুফল বিশ^বিদ্যালয় পরিবার পেয়ে আসছে। ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখ বেলা ১১ টায় চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের ড. এ আর মল্লিক ভবনে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দুরত্ব মেনে অনুষ্ঠিত চবি সিনেট এর ৩২ তম বার্ষিক সভায় সভাপতির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার তাঁর ভাষণের শুরুতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি রাজনীতির মহাকবি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি মহান একুশের ভাষা-শহীদ, শহীদ জাতীয় চারনেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশলক্ষ শহীদ, ’৭৫ এ নির্মমভাবে শহীদ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যবর্গের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত দু’লক্ষ জায়া-জননী-কন্যার প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করেন। শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ২১ আগস্ট বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় নির্মমভাবে শহীদ আইভি রহমানসহ শহীদদের এবং শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন মহিয়ষী নারী শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে।
তিনি বলেন, “২০২০-২০২১ বর্ষে আমরা দেশের এবং বিদেশের অনেক জ্ঞানী, গুণী, প্রজ্ঞাবান, খ্যাতিমান বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে হারিয়েছি। হারিয়েছি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের অনেককেই।” তাঁর বক্তব্যে প্রয়াত এ ব্যক্তিবর্গের স্মৃতির প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং তাঁদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ও অবদানকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন।
মাননীয় উপাচার্য তাঁর ভাষণে বলেন, দেশের অন্যতম উচ্চ শিক্ষা-গবেষণা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অক্ষুন্ন রেখে বিশ^বিদ্যালয় পরিচালনা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সম্পদের সুরক্ষা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার উপযুক্ত পরিবেশ সমুন্নত রাখতে বর্তমান প্রশাসন অঙ্গীকারাবদ্ধ। তিনি আরও বলেন, “করোনা পরিস্থিতি উন্নতির পর বিশ^বিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আরও গতিশীল করা হবে এবং বিশ^বিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনায় সর্বক্ষেত্রে সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা ও ন্যায্যতার প্রশ্নকে আগ্রাধিকার দেয়া হবে।”
মাননীয় উপাচার্য বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও অবকাঠামোগত উৎকর্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাস্তবায়নাধীন “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন” শীর্ষক প্রকল্পটি গত ০১ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় মোট ২৯৭ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ ধরে অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের অন্তর্গত ৬ষ্ঠ একাডেমিক ভবন (২য় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ ভবন), ৫ম একাডেমিক ভবন (জীব বিজ্ঞান অনুষদ ভবন), জননেত্রী শেখ হাসিনা হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল এবং ছাত্র হলের প্রভোস্ট ও হাউসটিউটরদের জন্য কোয়ার্টার নির্মাণ কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ছাত্রী হলের প্রভোস্ট ও হাউসটিউটরদের জন্য কোয়ার্টার নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে সমাপ্ত করা হয়েছে এবং তা সংশ্লিষ্টদেরকে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা হলের সামান্য অংশ বাদে সিংহভাগ ছাত্রীদের ব্যবহারোপযোগী করা হয়েছে। আশা করা যায় সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ের মধ্যে অবশিষ্ট নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে পূর্ণাঙ্গ ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া সম্ভব হবে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊীরংঃরহম গধংঃবৎ চষধহ আপগ্রেড করে ৫০ বছর মেয়াদী উরমরঃধষ গধংঃবৎ চষধহ প্রণয়নের কাজ বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
মাননীয় উপাচার্য আরও বলেন, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কর্তৃক রাজস্ব বাজেটের গবেষণা মঞ্জুরী খাতে বরাদ্দকৃত ৭৫.০০ লক্ষ টাকা গবেষণা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন বিভাগ/ইনস্টিটিউটের সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের মধ্যে অনুদান মঞ্জুরী দেয়া হয়েছে। তাছাড়া, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে উন্নয়ন ও রাজস্ব বাজেটের আওতায় বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রী (মাষ্টার্স/পিএইচডি) কোর্সে অধ্যয়ন এবং বিদেশে সেমিনার ও কনফারেন্সে যোগদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে ২৭.১০ লক্ষ টাকা অনুদান মঞ্জুরী দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ^ব্যাপি করোনভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করায় শুরু থেকে চবি মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা সেবা বৃদ্ধিসহ এ সেন্টারকে আধুনিকায়ন করতে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। চ.বি. চিকিৎসা কেন্দ্রের সকল ডাক্তার ও সেবাদান কার্যক্রমে নিয়োজিত সকলকেই স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান, ঈঙঠওউ-১৯ আক্রান্ত রোগীর সেবাদান কল্পে ১৩ (তের) শয্যা বিশিষ্ট ঈঙঠওউ-১৯ চৎরসধৎু ঈধৎব ঈবহঃৎব স্থাপন কার্যক্রম, ঈঙঠওউ-১৯ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশিক্ষিত ডাক্তারসহ অন্যান্য জনবল নিয়োগ, ০২ টি নতুন এ্যাম্বুলেন্স সংযোজন এবং প্যাথলজিক্যাল ল্যাবের আধুনিকায়নের কাজ অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও দিন রাত ২৪ ঘন্টা সেবা প্রদানসহ রোগীদের জন্য ২৪ ঘন্টা এ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিং-এ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানকে একটি সম্মানজনক পর্যায়ে উন্নীত করতে গবেষণার মান ও পরিমাণ বাড়ানোর বিষয়ে ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রম বেগবান ও ত্বরান্বিত করতেও প্রশাসন নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে।” তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি সকল মহলের আন্তরিক সহযোগিতা একান্ত অপরিহার্য।” মাননীয় উপাচার্য তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণ করতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার ছাড়াও জাতীয়-স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, শিক্ষাবিদ-সুধীমহল, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা ও র‌্যাব, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, ট্রাফিক, বিদ্যুৎ, ওয়াসা, সড়ক ও জনপথ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।
সভায় ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৩৪১১৫.০০ লক্ষ টাকা সংশোধিত এবং ২০২০-২০২১ অর্থবছরের ৩৫১৮৫.০০ লক্ষ টাকা মূল বাজেট উপস্থাপন করেন চ.বি. রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর এস এম মনিরুল হাসান। সিনেট সভায় এ বাজেট অনুমোদিত হয়।
মাননীয় উপাচার্যের ভাষণ ও বাজেটের ওপর প্রাণবন্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন চবি সম্মানিত সিনেট সদস্য মাননীয় সাংসদ জনাব ওয়াসিকা আয়েশা খান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় অতিরিক্ত সচিব জনাব এখলাসুর রহমান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জননিরাপত্তা বিভাগের মাননীয় সচিব জনাব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের মাননীয় অতিরিক্ত সচিব (বিশ^বিদ্যালয়) জনাব আফতাব হোসাইন প্রামাণিক, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক জনাব হাবীবুল্লাহ সিরাজী, সিনেট সদস্য প্রফেসর ড. মো. দানেশ মিয়া, প্রফেসর এ বি এম আবু নোমান, প্রফেসর সিরাজ উদ দৌল্লাহ, প্রফেসর ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী, প্রফেসর বেনু কুমার দে, প্রফেসর ড. মো. মাহবুবুর রহমান, প্রফেসর জমির উদ্দিন আহমদ, ড. মোহাম্মদ মঞ্জুর-উল-আমিন চৌধুরী, প্রফেসর এম এ গফুর, জনাব এস এম ফজলুল হক, প্রফেসর ড. কাজী এস এম খসরুল আলম কুদ্দুসী, জনাব গোলাম সাব্বির সাত্তার, প্রফেসর মনসুর উদ্দিন আহমদ এবং প্রফেসর ড. মোহাম্মদ নাসিম হাসান। এছাড়াও সিনেট সভায় সম্মানিত সিনেটরবৃন্দ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।