আনারসের চিপস

রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার আনারসের আলাদা কদর রয়েছে সারাদেশে। দেশের বিভিন্ন জেলায় ও বিদেশে রফতানি করার জন্য ব্যবসায়ীরা এ উপজেলা থেকে আনারস কিনে নেন।

তবে সংরক্ষণের অভাবে বছরে হাজার-হাজার আনারস পচে যায়। কৃষকরা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পান না।

আনারস চাষিদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ২০১৩-২০১৪ সালে আনারস দিয়ে চিপস তৈরির একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং ২০১৫ সালে চিপস কারখানা তৈরির জন্য রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার হর্টিকালচার কর্তৃপক্ষকে এর জন্য একটি জায়গা নির্বাচন করার নির্দেশ দেয়। এরপর কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব জায়গায় কারখানা তৈরির জন্য জায়গা নির্বাচন করে।

   ২০১৮ সালের দিকে কারখানা তৈরির কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ২০১৯ সালে। ২০২০ সালের প্রথম দিকে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে আনারস দিয়ে সম্পূর্ণ কেমিক্যাল মুক্ত চিপস তৈরি শুরু হয়। ‘আনানাস’ নাম দিয়ে দৃষ্টিনন্দন প্যাকেটে ভরে বাজারজাত করা হচ্ছে সেই চিপস। প্রতি প্যাকেট ‘আনানাসের’ দাম ধরা হয়েছে ৩০ টাকা।

নানিয়ারচর হর্টিকালচার সেন্টারের কর্মকর্তারা বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আওতাধীন ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় পরীক্ষামূলকভাবে চিপস তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি সরকারি। এর মূল উদ্দেশ্য হলো- উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা। শুধু আনারস নয়, পাশাপাশি এবার কাঁঠাল, মিষ্টি আলু, কাঁচাকলা দিয়েও চিপস তৈরির পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। আনারস দিয়ে চিপস তৈরির পদ্ধতি শেখাতে সেন্টারের পক্ষ থেকে প্রায় এক হাজার দুইশ’ কৃষককে বিভিন্ন মেয়াদে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া হর্টিকালচার সেন্টার থেকে পাহাড়ে উৎপাদিত টক ফল যেমন-তেঁতুল, জলপাই, আমলকি ইত্যাদি দিয়ে হরেক রকম আচার তৈরি করা হচ্ছে বলেও জানান কর্মকর্তারা।

নানিয়ারচর উপজেলার কৃষক ঝন্টু চাকমা জানান, এ উপজেলায় সবচেয়ে ভালো আনারস উৎপন্ন হয়। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে বছরে হাজার হাজার পিস আনারস নষ্ট হয়। সরকার চিপস কারখানা তৈরি করায় এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করায় আমাদের ভাগ্যের নতুন দোয়ার উন্মোচন হলো।

নানিয়ারচর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রকল্প পরিচালক ড. মেহেদী মাসুদের সহযোগিতায় ২০২০ সালের শুরু থেকে এ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। চিপস যাতে দীর্ঘদিন ভালো থাকে, সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। প্যাকেটে নাইট্রোজেন প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। চেষ্টা সফল হলে প্যাকেটটির মেয়াদ হবে তিন মাস।

শফিকুল ইসলাম আরও জানান, উপজেলায় উৎপাদিত আনারসের মধ্যে জায়ান্টকিউ এবং হানিকুইন জাত অন্যতম। প্রথমে জায়ান্টকিউ দিয়ে চিপস তৈরি করলেও সলিড মেটেরিয়াল কম হওয়ায় এখন হানিকুইন দিয়ে চিপস তৈরি করা হচ্ছে। চিপস তৈরিতে কোনো কেমিক্যাল ব্যবহার করা হচ্ছে না। মেশিনের মাধ্যমে কেটে পরিষ্কার করে শুকিয়ে চিপস তৈরি করা হচ্ছে। আনারস কাঁচা হলে অল্প চিনি মেশানো হচ্ছে।

নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমা বলেন, আনারসের চিপস কৃষকদের জন্য সুসংবাদ বটে। ব্যক্তি উদ্যোগে যদি এখানে কারখানা তৈরি করা যায়, তাহলে আনারসের পচন রোধ ঠেকানো যাবে, কৃষক লাভবান হবেন। বেকার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রকল্প পরিচালক ড. মেহেদি মাসুদ বলেন, আমাদের প্রকল্প যখন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাস হয়, তখন আমরা একশ’ প্যাকেট আনারসের চিপস প্রধানমন্ত্রীর কাছে দিয়েছিলাম। এটা তিনি পছন্দ করেছিলেন।

তিনি আরও বলেন, এ প্রকল্পের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে ৪২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মূলত তরুণ উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। কেউ ব্যক্তিগত পর্যায়ে শুরু করলে আশা করি, লাভবান হবেন এবং বিদেশে রফতানিও করতে পারবেন।