মানবসেবায় ব্রতচারী সাংবাদিক

এমএইচ সোহেল

সব ফুলে যেমন পূজো হয়না তেমনি অনেকে সম্পদশালী হলেও মানবসেবায় ব্রত হওয়ার সৌভাগ্য সবার হয়না। এর জন্য দরকার কোমল হৃদয়, উদার মন-মানসিকতা ও সষ্ট্রার কৃপা। মানবসেবা মানেই প্রভুর দর্শন। তাইতো জ্ঞানতাপস ফকির লালন সাইজীর লিখেছেন- ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ আসলেই মানবসেবার মাধ্যমেই খাঁটি মানুষ হওয়া সম্ভব। এবং স্বয়ং আল্লাহকে পাওয়ার পথ সুগম হয়। আর এই মানবসেবাকে ইবাদত হিসেবে গন্য করে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন একজন ব্যক্তি। গত মার্চ মাসের শেষের দিকে মহামারী করোনার লকডাউনের মধ্যে সবাই যখন করোনা ভয়ে অাতঙ্ক, জীবনের মায়ায় কেহ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হননি কিন্তু ঠিক তখনই জীবন মৃত্যুর শঙ্কার মাঝেও ঘর থেকে বের হয়ে আসেন একজন যুবক। তিনি রাস্তাঘাটে বসবাসরত ভাসমান, অসহায় মানুষের কাছে রান্নাকরা খাবারের প্যাকেট নিয়ে ছুটে গেছেন। তিনি হলেন করোনাকালের মানবিক বীর মুহাম্মদ মহরম হোসাইন। পেশায় একজন সাংবাদকর্মী। করোনাকালে এই মানবপ্রেমী যুবক প্রতিনিয়ত ছুটে গেছেন ভূখা অসহায় ভাসমান মানুষদের মাঝে। নিজের কষ্টে অর্জিত অর্থ দিয়ে প্রতিদিন দুপুর ও রাতে চট্টগ্রাম নগরির বিভিন্ন স্হানে ভাসমান মানুষদের হাতে রান্না করা খাবার তুলে দিচ্ছেন। যুবকটির মাঝে এক অন্যরকম মানবিক প্রেম পরিলক্ষিত হয়। পথেঘাটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভাসমান মানুষদের হাতে খাবার তুলে দিতে পারলেই যেন তিনি সবচেয়ে বেশি খুশি হন। মনে হয় মানবসেবা যেনই তার ইবাদত। এছাড়াও নিম্ন ও অসহায় মানুষদের মাঝে দফায় দফায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ, ভাসমান মানুষদের মাঝে রোজাতে ইফতার ও সেহেরীর খাবার বিতরণ, ঈদুল ফিতর ও কুরবানীর ঈদে একটানা তিনদিন করে ভাসমান মানুষদের মাঝে ঈদের বিশেষ খাবার বিতরণ করেন।

ভাসমান মানুষদের রান্নাকরা খাবার বিতরণের কার্যক্রম পরিচালনার মাঝেও তিনি আবার করোনায় আক্রান্ত রোগীদের কথা চিন্তা করে হালিশহরে করোনা আইসোলেশন সেন্টার চট্টগ্রাম স্হাপনে প্রথম সারির উদ্যোক্তা হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

তাকে দেখলে মানবতার এক অনুপম দৃশ্য দু’চোখ ভরে অবলোকন করা যায়। অতুলনীয় মানবতার স্বাক্ষর রেখে এভাবেই নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) নির্বাহী সদস্য মুহাম্মদ মহরম হোসাইন।

চলমান করোনাকালে এ পর্যন্ত তিনি ব্যাক্তিগত তহবিল থেকে আর্তমানবতা মূলক সামাজিক সংগঠন মুসাফির ও আস্তানায়ে জহির ভান্ডার এর মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে প্রায় ১০,০০০ হাজার ভাসমান মানুষ ও এতিমদের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করেছেন এবং ২০০ জন কর্মহীন, মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং অসহায় পরিবারের মাঝে ত্রাণ (উপহার) সামগ্রী তুলে দিয়েছেন।

অবিবাহিত সাংবাদিক মুহাম্মদ মহরম হোসাইন ছোট বেলা থেকে স্বপ্ন দেখতেন বড় হয়ে অসহায় মানুষদের মুখে কিভাবে একবেলা খাবার তুলে দেওয়া যায়। সেই থেকে মানব সেবায় তার এগিয়ে চলা। স্কুল জীবন থেকে তিনি বিভিন্ন আর্তমানবতা মূলক সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িয়ে পড়েন। চটগ্রামে পোলিও রোগ নিমূলে জাতীয় পোলিও টিকা দিবসের (ইপিআই) কার্যক্রমে ১৯৯৯ সাল থেকে টানা ১২ বছর সেচ্ছাসেবক ও টিম লিডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মানবিক সাংবাদিক মুহাম্মদ মহরম হোসাইন এ বিষয়ে তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, অদৃশ্য করোনার ভয়ে মানুষ দিশেহারা। আয় রোজগার বন্ধ। বিপাকে পড়ে রাস্তার ধারে পড়ে থাকা অসহায় ভাসমান মানুষগুলো। অনাহারে অধাহারে ক্ষুধার সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে তারা। দেখলেই চোখে নোনা জল আসে। নিজের গলা দিয়ে খাবার নামে না। তাই তাদের মুখে একমুঠো খাবার তুলে দেওয়াকে আমি ইবাদত মনে করি। কারণ তারা আপনার আমার মত সষ্ট্রার সৃষ্ট শ্রেষ্ঠজীব। তারা অনাহারে আছে এটা ভাবলেই মন কেঁদে উঠে। তাদের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমি গর্ববোধ করছি। তিনি আরো বলেন, অসহায়রা হাতে খাবারের প্যাকেট পাওয়ার পর তাদের চোখ-মুখ যে হাসি ফুটে উঠে এতে মনে হয় স্বয়ং বিধাতা খুশি মনে হাসছেন।

উল্লেখ্য, সাংবাদিক মুহাম্মদ মহরম হোসাইন আধ্যাত্মিক কামেল পুরুষ হযরত শাহসূফী মো. জহিরুল হক মাইজভান্ডারী ও মোসাম্মদ হাফেজা বেগমের কনিষ্ঠ পুত্র। ব্রাহ্মণবাড়িয়া আস্তানায়ে জহির ভান্ডারের সাজ্জাদানশীন পীরজাদা। তিনি অনলাইন টিভি চ্যানেল ‘টিভি আমার’ এ চীফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া মানবিক সংগঠন মুসাফির এর প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ও ধমীয় গবেষণা মূলক আধ্যাত্মিক সংগঠন আল হাসনাইন মিশন বাংলাদেশ, সৃজন সাংস্কৃতিক সংগঠন এর উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দায়িত্বপালন করেছেন শতদল ক্লাব অংশ নেওয়া সিরাজ মহানগরী কিশোর ফুটবল লীগ টিম পরিচালানা কমিটিতে।

লেখকঃ সাংবাদিক