কৃষকের জমি জবর-দখলের অভিযোগ

লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি :
আমার শ্বশুড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, আমি জজ ও আমার বন্ধু-বান্ধব অনেকে ম্যাজিষ্ট্রেট ও জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট। আমাদের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়া কুল পাইবেন না। আমি কাউকে পরোয়া করি না। পথ হবে। বেশি বাড়াবাড়ি করিলে আজীবনভর মামলার বোঝা বইতে বইতে কবরে যাইতে হইবে। চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় পশ্চিম কলাউজানের হাছন আলী মিয়াজী পাড়ার অসহায় কৃষক মোহাম্মদ আয়ুবের ভোগদখলীয় চাষের জমির মাঝখানে জোর পূর্বক চলাচলের পথ নির্মাণসহ ১১ শতক জায়গা জবর-দখল কাজে নেতৃত্ব দেয়া আব্বাস উদ্দিন নামের এক সহকারী জজ ঠিক এমনই দম্ভোক্তি প্রকাশ করার অভিযোগ তুলেছেন ভূক্তভোগী অসহায় কৃষক মো : আয়ুব।

৮ আগষ্ট (শনিবার) দুপুরে লোহাগাড়ার একটি রেষ্টুরেন্টে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ অভিযোগ তুলেন তিনি। এছাড়াও সহকারী জজ আব্বাস উদ্দিন ছাত্র থাকালীন সময়ে ইসলামী ছাত্র শিবিরের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বিভিন্ন পদে দায়িত্বশীল ছিলেন বলে জানান তিনি। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মো : আয়ুব। এ সময় তাঁর ছোট ভাই নুরুল আবছার ও রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে কৃষক মোহাম্মদ আয়ুব বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় জামায়াত নেতা জামাল উদ্দিন ইউসুফের সাথে জমির সীমানা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিলো। হঠাৎ গত ১২ জুলাই সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাঁর দীর্ঘদিনের ভোগ দখলীয় জমির ওপর বিনা প্রয়োজনে পথ নির্মাণ করার চেষ্টা চালান জামাল উদ্দিন ইউসুফ ও আব্বাস উদ্দিনের নেতৃত্বে স্থানীয় ফরিদুল আলম, জোবাইর হোসেন প্রকাশ যুবরাজ আদি, শাহাব উদ্দিন, মো : ফারুক, নাছির উদ্দিন, মো : ইউনুছ ও মহিউদ্দিন মো : ফারুক। এ ঘটনায় তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দাযের করলে উপ-পরিদর্শক দুলাল বাড়ৈ ঘটনাস্থলে গিয়ে পথ নির্মাণকাজ না করার নির্দেশ দেন। একইদিন বিকেল ৩টার দিকে এ নির্দেশ অমান্য করে আব্বাস উদ্দিনের নেতৃত্বে বিভিন্ন অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে জোরপূর্বক চলাচলের পথ নির্মাণ করেন । এ সময় বাঁধা দিলে জোবাইয়ের হোসেন কোমড় থেকে পিস্তল বের করে, “এক কদম সামনে আগালে বুক ঝাঁঝড়া করে ফেলিব” মর্মে হুমকি দেয়। পরে জোরপূর্বকভাবে পথ নির্মাণ করে ফেলেন। এ ঘটনায় গত ২০ জুলাই অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মিছ মামলা নং- ৫৩২/২০২০ দায়ের করলে আদালত ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫ ধারামতে উভয়পক্ষকে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আদেশ দেন। কিন্তু এ আদেশ অমান্য করে গত ২৪ জুলাই বিকেল ৩টায় স্বসস্ত্র সন্ত্রাসী নিয়ে ১১ শতক জায়গা জবর-দখল করেন। আব্বাস উদ্দিন নিজেকে একজন সহকারী জজ হিসেবে ক্ষমতা দেখাইয়া সকল অভিযুক্তদের অবৈধ অস্ত্রে-সস্ত্রে সজ্জিত হওয়ার নির্দেশ দিয়ে নিজেই ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থেকে এ রাস্তা নির্মাণের নির্দেশনা প্রদান করেন।
কে এই আব্বাস উদ্দিন?
আব্বাস উদ্দিন (৩২)। পিতা মোহাম্মাদ আনিস। চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার কলাউজান ইউনিয়নের পশ্চিম কলাউজানের হাছন আলী মিয়াজী পাড়ায় তাঁর বাড়ী। ২০০৩ সালে কলাউজান ডা : এয়াকুব বজলুর রহমান সিকদার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। আব্বাস ছিলেন ২০০১ সালে উক্ত স্কুল শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারী এবং ২০০৩ সালে সভাপতি । ২০০৫ সালে ঢাকা কর্মাস কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। সে সময় তিনি কমার্স কলেজ শাখা ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাথী পর্যায়ের নেতা ছিলেন। ২০০৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। ঢাবি ইসলামী ছাত্র শিবিরের আইন বিভাগ শাখার বিভিন্ন পদে দায়িত্বশীল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ জুড়িসিয়্যাল সার্ভিসে যোগদান করেন। বর্তমানে সহকারী জজ হিসেবে কর্মরত। সম্প্রতি লন্ডন থেকে প্রশিক্ষণশেষে দেশে ফিরে করোনাকালীন সময়ে বর্তমানে লোহাগাড়ার পশ্চিম কলাউজান হাছন আলী মিয়াজী পাড়ার গ্রামের বাড়ীতে অবস্থান করছেন।
সেই আব্বাস উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ বিভিন্ন দপ্তরে :
বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের সহকারী জজ পদে কর্মরত থেকেও নিজ গ্রামে এসে ক্ষমতার অপব্যবহার, নিজে উপস্থিত থেকে জোরপূর্বক জায়গা জবর-দখলে নেতৃত্ব দেওয়া ও গ্রামের অসহায় কৃষকদের ভয়-ভীতি দেখানোসহ
আরো বিভিন্ন অভিযোগে আব্বাস উদ্দিনসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে গত ১৫ জুলাই মাননীয় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী, স্বরাষ্ট মন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, মহাপুলিশ পরিদর্শক, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার, অধিনায়ক-RAB-7 সহ সরকারের কয়েকটি সংস্থার কাছে লিখিত অভিযোগ দাযের করা হয়েছে।
সহকারী জজের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাই ভূক্তভোগী কৃষকের কোরবানীর পশু জবাই করেনি ইমাম :
ঘটনা এখানেই শেষ নয়, আব্বাস উদ্দিনের অপকর্মের বিচার চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর বাবা মোহাম্মদ আনিস ও জামায়াত নেতা জামাল উদ্দিন ইউসুফসহ কয়েকজন মিলে গত পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে স্থানীয় মসজিদের ইমামকে অসহায় কৃষক আয়ুবের পরিবারের কোরবানীর গরু জবাই করতে নিষেধ করার অভিযোগ ওই কৃষকের। এছাড়াও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, সাংবাদিক সম্মেলনে অসহায় কৃষক মো : আয়ুবের লিখিত অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে সহকারী জজ আব্বাস উদ্দিনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। আপনারা এলাকায় এসে তদন্ত করে সঠিক রিপোর্ট তুলে ধরুন।