কাপ্তাইয়ে “ফুকির মুরং” ঝর্না পর্যটকদের আকৃষ্ট করেছে

রাজস্ব আয়ের ব্যাপক সম্ভাবনা

মোঃ নজরুল ইসলাম লাভলু, কাপ্তাই::
তনচংগ্যা ভাষায় “ফুকির মুরং বা ফইরা মুরং” অর্থাৎ ফকিরের কুয়া বা সাধু বাবার কুয়া। উচ্চারনের দিক থেকে একজনে এক নামে ডাকলেও প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য যেন ভর করেছে ফুকির মুরং ঝর্নায়। প্রকৃতি তার অপূর্ব রুপ, রস সব কিছু দিয়ে সাজিয়েছে এই ঝর্নাকে। তাকালে চোখ ফেরাতে মন চাইবে না কারো। পাহাড় হতে প্রবাহিত ঝিরি ঝিরি পানির শব্দ, পাখির কিচির মিচির শব্দ মূহুর্তে হারিয়ে যাবে যে কেউ অন্য এক জগতে। ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকলেও মনটা একটুর জন্যেও বিচলিত হবে না কারো। সদ্য আবিস্কৃত এই ঝর্না এলাকায় পর্যটকের ভিড় লেগেই আছে।


রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলাধীন ওয়াগ্গা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের পাগলী উপর পাড়ায় এই ফুকির মুরং ঝর্না অবস্থিত। এর আশেপাশে ছোট বড় আরো কয়েকটি ঝর্না আছে ওই স্থানে। প্রতিটি ঝর্না হতে অবিরাম ধারায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কিংবদন্তি রয়েছে, শত বছর আগে এই পাহাড়ে এক সাধক বা ফকির ধ্যান করতো, লোকজন পুজা দিতো, মানত করতো, ফকির ধ্যান করতো বলে
স্থানীয়রা এর নাম দিয়েছে ফুকির মুরং বা ফকির কুয়া।
ঘাঘড়া-বড়ইছড়ি সড়কের বটতলি এলাকার পূর্ব পাশ ধরে ৪ কিঃমিঃ পাহাড়ী পথ আর ছড়া পার হয়ে ওই স্থানে পৌঁছানো যায়। পথিমধ্যে পাগলি মুখ পাড়া, পাগলি মধ্যম পাড়া গ্রাম পার হয়ে পাগলি উপর পাড়ায় এই ঝর্নার দেখা মিলবে। এই স্থানে যেতে যেতে পর্যটকরা আরো উপভোগ করতে পারবেন পাহাড় হতে বয়ে চলা ছড়ার পানির বহমান ধারা, আশেপাশে অনেকগুলো পাহাড়ী গাছ গাছালি, পাখির কিচির মিচির শব্দ এবং ছোট বড় অনেকগুলো পাথর। যেতে যেতে মাঝে মাঝে দেখা যাবে পাহাড়ী উপজাতীয়দের ঘর আবার ছড়ার উপরে বসে এখানকার লোকজন তাদের প্রাত্যহিক স্নানের কাজ সম্পন্ন করছেন। এক কথায় প্রকৃতি তার সব কিছু উজাড় করে দিয়েছে এই স্থানটিকে।
সৌন্দর্যমন্ডিত ওই স্থানটি দেখতে গিয়ে দেখা গেছে পর্যটকদের ভিড়। তাদের মধ্য একজন হলো কাপ্তাই থানার ওসি নাসির উদ্দীন। তিনি জানান, আমি এই ঝর্নার অপরুপ সৌন্দর্য দেখে অভিভূত, এখানে যে এতো সুন্দর ঝর্না আছে, তা জানা ছিলো না। স্থানটি দেখতে আসা কাপ্তাই উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক বির্দশন বড়ুয়া, উপজেলা স্কাউটসের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হাসান বাবু, উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির যুগ্ম সম্পাদক বিপুল বড়ুয়া জানান, এক কথায় অসাধারণ এই
স্থানটি। তারা আরো জানান, যদি অবকাঠামোগত উন্নয়ন গড়ে তোলা হয় তাহলে এটা হবে কাপ্তাই তথা রাঙামাটি জেলার মধ্য অন্যতম এক পর্যটন কেন্দ্র। এখানে ঘুরতে আসা কাপ্তাই উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হাই খোকন, শিক্ষক মোঃ ইসমাইল এই প্রতিবেদককে জানান, কাপ্তাইয়ে মধ্যে এই রকম একটি দর্শনীয় স্থান আছে কেউ কল্পনাও করতে পারবেন না।
এলাকার ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সুমন বিকাশ তনচংগ্যা, ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মায়ারাম তনচংগ্যা এবং এলাকার বাসিন্দা কাপ্তাই উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক
হৃদয় তনচংগ্যার সাথে দেখা হয় এবং তিনি জানান, তাদের দাদুর আমল থেকে এই ঝর্নার কথা তারা শুনে আসছেন। এখানে একজন ফকির থাকতো, মাঝে মাঝে নাকি লোকজন তার দেখা পেত, সে থেকে এর নামকরণ করা হয় ফুকির মুরং। তাদের দাবি, সরকার যদি রাস্তাঘাট তৈরী করে দেয়, তাহলে এখানে পর্যটকের আনাগোনা বাড়বে। সরকার বিপুল রাজস্ব আয় করতে পারবে।
এছাড়া, এলাকার বয়োবৃদ্ধ নাত্তোমনি তনচংগ্যা এবং লুন্দমনি তনচংগ্যার সাথে কথা হয়, তারা জানান, শত বছর আগে এখানে তাদের পূর্ব পুরুষরা মাঝে মাঝে এক ফকিরকে দেখতো, তিনি পাহাড়ে বসে সাধনা করতো, লোকজন ওই স্থানে পুজা দিতো, মানত করতো। একসময় এই পাহাড়টা অনেক বড় ছিল, পাহাড় হতে অবিরাম ধারায় পানি প্রবাহিত হতো, বর্তমানে পাহাড় ভেঙ্গে ছোট হয়ে গেছে। তারা বলেন, সারাবছর পানি পড়ে এই ঝর্নায়।
ওয়াগ্গা ইউপি চেয়ারম্যান চিরন্জিত তনচংগ্যা জানান, যদি অবকাঠামোগত আরো উন্নয়ন হয় তাহলে এখানে প্রতিনিয়ত পর্যটক বাড়বে,এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরো বেগবান হবে।
প্রকৃতির এই অপরুপ স্থানটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এখানকার অধিবাসীরা সরকারের নিকট জোর দাবি জানান, যাতে করে এখানকার আত্মসামাজিক উন্নয়ন ঘটে।