তাঁবুর নগরী মিনা

মির্জা ইমতিয়াজ শাওন::পবিত্র মক্কা নগরীর পূর্ব দিকে পাথুরে পাহাড়বেষ্টিত একটি এলাকা মিনা। মক্কা ও মুজদালিফায় যাওয়ার পথে এর অবস্থান। পবিত্র মসজিদুল হারাম থেকে ৬ কিলোমিটার দূরত্বে এটি অবস্থিত। এর উত্তর-পূর্বে ‘জামরায়ে আকবা’ এবং দক্ষিণ-পূর্বে ‘ওয়াদিয়ে মাহসার’ রয়েছে। শরয়িভাবে এটি ১৬.৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।

হজ্বের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগে সকালে পবিত্র মক্কার মিনায় পৌঁছে হাজিরা মিনায় অবস্থান করেন। সৃষ্টিকর্তার আনুগত্য ও পাপমুক্তির আশায় আজ সারাদিন তাঁবুর নগরী মিনায় অবস্থান করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় ও ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকেন আল্লাহর মেহমানরা। পরদিন ভোরে হাজিরা হজের মূল অনুষ্ঠানস্থল আরাফাতের ময়দানে চলে যান।

‘মিনা’ নামটি যেভাবে এলো: অনেকের মতে, সেখানে অধিক পরিমাণে জবাই করা হয়, তাই এ স্থানকে মিনা বলা হয়। কারো কারো মতে, আরবরা কোনো স্থানে বেশি মানুষের সমাগম হলে সেটিকে ‘মিনা’ বলে অভিহিত করে। মোট কথা হলো, যেহেতু এ স্থানে অধিক পরিমাণে কোরবানির জন্তু জবাই করা হয় এবং লাখ লাখ হাজি অবস্থান করে, তাই এটি ‘মিনা’ নামে পরিচিত।

আরাফাতের ময়দানে হজের মুল খুতবা এবং জোহর ও আসর নামাজ একসাথে আদায় করেন। সন্ধ্যায় মুজদালিফায় গিয়ে আবারো মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন এবং পাথর সংগ্রহ করবেন। রাতে মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করবেন হাজিরা। ফজরের নামাজ আদায় করে মুজদালিফা থেকে আবার মিনায় ফিরে আসবেন। মিনায় এসে জামারায়ে আকাবায় (বড় শয়তানকে) কঙ্কর বা ছোট পাথর মারা, কোরবানি ও মাথা মুড়িয়ে বা চুল ছেঁটে মক্কায় কাবা শরিফ তাওয়াফ করবেন।

হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষে যারা আগে মদিনায় যাননি তারা মদিনায় যাবেন। সেখানে হাজিরা সাধারণত ৪০ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। এর পর শুরু হয় হাজিদের দেশে ফেরার পালা। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন।

এদিকে হাজিদের সেবায় মিনায় কিছুদূর পরপরই রয়েছে হাসপাতাল। সেখানে চলছে সার্বক্ষণিক সেবাদান। হাজিদের যেন কষ্ট না হয় সে জন্য মিনায় যাওয়ার সব রাস্তা যানজটমুক্ত রাখা হয়েছে। এছাড়া হাজিরা চৌচালা ঘরের মতো যে তাঁবুগুলোয় থাকছেন তার ভেতর রয়েছে পর্যাপ্ত আলো ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা। এসব তাবুতে রয়েছে শৌচাগার, পানির কল, এমনকি টেলিফোন সংযোগও। আর এবারে যুক্ত হয়েছে স্বাস্থবিধি, মহামারী করোনা থেকে হাজিদের সুরক্ষিত রাখতে নানা ধরনের ব্যবস্থা এবং সতর্কতা।
ছবি Babul Kaba Hajj Kafela টিম