মনের রং মিশিয়ে সাজিয়ে রাখেন আপন নীড়

বিয়ের পরে নাকি ভালোবাসা ম্লান হয়ে যায়। এই কথা কি সত্যি? অনেকেই এর পক্ষে থাকলেও বেশির ভাগ মানুষই আমৃত্যু ভালোবাসায় বিশ্বাসী। বিয়ের পরে পড়াশুনা, চাকরি, সংসার, নতুন মানুষদের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়া সব কিছু মিলিয়েই একে অন্যের জন্য সময় বের করা কঠিন হয়ে পড়ে। ভালোবাসার মানুষটির সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে যায় এবং মন কষাকষি শুরু হয়। আসছে ভালোবাসা দিবসে আপনার ভালোবাসার মানুষটিকে নতুন করে মনে করিয়ে দিতে পারেন সেই সুন্দর সময়গুলো।

আপনাদের ভালোবাসা যে এখনও আগের মতোই আছে এমনটি দেখিয়ে দেয়ার সুযোগ এখনই। আর তাই আমাদের আজকের আয়োজনে থাকছে বিবাহিত জুটির জন্য ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন।

এখন আর আগের মতো হয়তো ঘুরতে যাওয়া হয় না, বাইরে তেমন দেখা করার সুযোগ নেই, ঘরেও খুব একটা মিষ্টি আলাপচারিতা হয় না। দুজনের কথা যেন তেল-চাল-নুনেই সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে এই ভালোবাসা দিবসে সুন্দর করে ঘর সাজিয়ে ফেলুন। বাহির থেকে ক্লান্ত শরীরে ফিরে ঘরে ঢুকতেই যেন মানুষটি আপনার ভালোবাসা অনুভব করতে পারে সেভাবে সাজিয়ে তুলুন ঘরের প্রতিটি কোণা। চলুন তবে দেখে নেয়া যাক স্বল্প সময়ে এবং কম বাজেটে যেভাবে আপনি আপনার ঘর সাজিয়ে তুলতে পারেন আপনার ভালোবাসায়।

১. ঘর গুছিয়ে ফেলুন
সপ্তাহ জুড়ে নানান কাজের ব্যস্ততায় হয়তো ঘরদোর ঠিকমতো গোছানোর সময় করতে পারেননি। আজকের দিনে শুরু করে দিন এই কাজটি। টেবিলে হয়তো অনেকদিনের পুরোনো রিসিট পড়ে আছে। কলমদানিতে কলম-পেনসিল সাজিয়ে রাখা হয়নি। টেবিল জুড়ে এলোমেলো কাগজ, ল্যাপটপের উপর ধূলার স্তর, ড্রেসিং টেবিল উল্টেপাল্টে থাকা কসমেটিক্স সবই গুছিয়ে ফেলুন। প্রথমত অনেক বেশি কাজ মনে হলেও একটি একটি করে আসবাব ধরে গোছাতে শুরু করলে জলদিই ঘর গোছানো হয়ে যাবে। ফুলদানির পানি বদলে দেয়া, পর্দা বদলে দেয়া, কাপড়্গুলো একটু গুছিয়ে রাখা এভাবেই এগোতে থাকুন। কাজ কমে এলে গোছানো ঘর দেখে আপনিও তৃপ্তি পাবেন।

২. চাদর-বালিশ বদলে দিন
আগে থেকেই ভালোবাসা দিবসের রঙে কিনে আনতে পারেন বালিশের কভার এবং চাদর। পুরোনো চাদর বদলে লাল-সাদা চাদরে খাট মুড়ে নিন। সাথে রঙ মিলিয়ে বালিশের কভার অথবা একরঙা লাল বালিশের কভার ব্যবহার করতে পারেন। চাদর-বালিশের কভার কেনার বিষয়টি যদি বাজেটে না থাকে তাহলে ছোটো দুটি কুশন কিনে আনতে পাররেন। কুশনের কভার হিসাবে নজরকাড়া কোনো রঙ বেছে নিতে পারেন। তবে বিছানার চাদর এবং বালিশের কভার আজকের দিনের জন্য হলেও বদলে নিন।

৩. শিল্পকে বিকশিত করুন
আপনি হয়তো কাগজ দিয়ে সুন্দর ফুল তৈরি করতে পারেন অথবা আঁকতে পারেন সুন্দর ছবি, তবে আজকের দিনে এই শিল্পকে কাজে লাগান। বাজার থেকে লাল অথবা রংবেরঙের কাগজ কিনে বানিয়ে ফেলুন বিভিন্ন রকম ফুল। অথবা একটি ক্যানভাসে এঁকে ফেলুন প্রিয় মানুষটির মুখাবয়ব। আপনার এই সৃষ্টি দেখে ভালোবাসার মানুষটির মুগ্ধ না হয়ে উপায় কী!

৪. ক্যান্ডেল লাইট
মোম এমন একটি সজ্জা যেটি আপনি ব্যবহার না করা পর্যন্ত বুঝতে পারবেন না। রুমের জন্য বিভিন্ন রঙের মোম কিনে আনতে পারেন। মোমগুলো হতে পারে সুগন্ধি মোম। বিভিন্ন সুপার শপে বা অনলাইনে মন মাতানো সুবাসের মোম পাওয়া যায়। সাইড টেবিল, টি-টেবিল, উইন্ডো-ফোল্ড এসব জায়গায় মোম জ্বালিয়ে রাখতে পারেন।

এখনও আবহাওয়া যেহেতু হালকা ঠাণ্ডা তাই ফ্যানের বাতাসে মোম নিভে যাবে না এবং আপনিও মোম জ্বালিয়ে রাখতে পারবেন যতক্ষণ ইচ্ছা। আজকের দিনে না হয় বৈদ্যুতিক বাতিকে ছুটি দিয়ে দিন।

৫. আলোকসজ্জা
ছোট ছোট ফেয়ারি লাইট জ্বালিয়ে দিতে পারেন জানালা এবং বিছানা ঘেঁষে। বিভিন্ন রঙের এবং আকারের ফেয়ারি লাইট যে কোনো ইলেকট্রনিক্সের দোকানে পাওয়া যাবে। দেয়ালের রঙ, পর্দা এবং বিছানার রঙ মাথায় রেখে ঘর সাজিয়ে ফেলতে পারেন নানান ফেয়ারি লাইটে।

৬. বাথরুমের সাজ
প্রশ্ন আসতে পারে বাথরুম কীভাবে সাজানোর জায়গা হতে পারে। আপনার এত সুন্দর সাজানো ঘর দেখার পর বাথরুমের অবস্থা দেখে কারও মুড বিগড়ে দেয়ার ঝুঁকি নেবার প্রয়োজন আছে কি? বাথরুমের তোয়ালে বেছেন নিতে পারেন লাল রঙের। হ্যান্ডওয়াশ এবং এয়ার ফ্রেশনার হিসাবে গোলাপের ফ্লেভার বিবেচনায় রাখতে পারেন। সামনের পাপোসটিও না হয় বদলে দিন। আর বাথরুমের ফ্লোর এবং বিভিন্ন টাইলসও মুছে দিতে পারেন সুগন্ধি ক্লিনার দিয়ে।

৭.খাবার ঘর
আজকের দিনে যদি বাইরে খেতে যাবার পরিকল্পনা না থাকে তাহলে সুন্দর করে ডাইনিং টেবিল সাজিয়ে ফেলুন। টেবিল ম্যাট বদলে দিতে পারেন। প্লেট, ডিশ এবং সাজানোর স্টাইলে থাকতে পারে ভালোবাসা দিবসের ছোঁয়া। খাবারের তালিকায় দুজনের পছন্দের খাবার রাখতে পারেন। ডাইনিং রুমের কাছে ছোট সাউন্ড সিস্টেম বসিয়ে মৃদু ছন্দের গান বাজাতে পারেন।

৮. অন্যান্য আসবাব
অন্যান্য আসবাবপত্রেও ভিন্নতা আনতে পারেন। চেয়ারের উপর লাল তোয়ালে বা টেবিলে ভারি লাল টেবিল ক্লথ বিছিয়ে দিতে পারেন। বসাত টেবিলের ফুলদানিতে ফুল সাজিয়ে দিতে পারেন। আপনার ঘরের আসবাবপত্র অনুযায়ী উপরে কভার বদলানো বা ছোট শোপিস সাজিয়ে রেখেও সেখানে দিতে পারেন ভালোবাসার ছোঁয়া।

সব শেষে নিজে সাজুন। আপনাদের ভালোবাসা যে এখনও আগের মতোই আছে এবং এখনও যে আপনাদের জীবন কতটা সুন্দর হতে পারে তার একটুখানি ঝলক থেকে যাক আজকের সমস্ত গোছগাছে। ভালোবাসার মানুষটিকে আরও ভালোবাসুন এবং ভালোবাসায় ভরে যাক আপনাদের এই শান্তির নীড়।