সূরা ফাতিহার বৈশিষ্ট্য ও ফজিলত

পুরো কুরআন শরীফের গুরুত্বপূর্ণ সূরা ফাতিহা। এ সূরার মাধ্যমেই সূচনা হয়েছে পবিত্র কুরআনের। সূরাটিকে আল কুরআনের সার সংক্ষেপও বলা হয়। এ সূরা নাজিল হয়েছে মানুষের সার্বিক কল্যাণ মুক্তি ও পথপ্রদর্শক হিসেবে। সূরাটি ফজিলত ও বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে অন্য সব সূরার আলাদা।

সূরা ফাতিহার বৈশিষ্ট্য :
১) এই সূরা কুরআনের সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ সূরা। তাওরাত, জবুর, ইনজিল, কুরআন কোনো কিতাবে এই সূরার তুলনীয় কোন সূরা নেই। বুখারি, মিশকাত : ২১৪২

২) এই সূরা এবং সূরায়ে বাকারা’র শেষ তিনটি আয়াত হল আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত বিশেষ নূর, যা ইতিপূর্বে কোনো নবীকে দেওয়া হয়নি। মুসলিম শরীফ : ৮০৬
৩) যে ব্যক্তি নামাজে সূরা ফাতিহা পাঠ করল না, তার ছালাত অপূর্ণাঙ্গ। রাসূলুল্লাহ (সা.) এ কথাটি তিনবার বললেন। মিশকাত : ৮২৩

৪) আবু সা‘ঈদ খুদরী রা. বলেন, একবার এক সফরে আমাদের এক সাথী জনৈক গোত্রপতিকে শুধুমাত্র সূরায়ে ফাতিহা পড়ে ফুঁ দিয়ে সাপের বিষ ঝাড়েন এবং তিনি সুস্থ হন। বুখারি শরীফ : ৫৪০৫

সুরা ফাতিহার বিশেষ মর্যাদা হলো, আল্লাহ এটিকে নিজের ও নিজের বান্দার মধ্যে ভাগ করে নিয়েছেন। একে বাদ দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সম্ভব নয়। সেজন্যই এর নাম দেয়া হয়েছে ‘উম্মুল কুরআন’। পবিত্র কুরআন মূলত তিনটি বিষয়ে বিন্যস্ত। তাওহীদ, আহকাম ও নছীহত। সূরায়ে ইখলাছে ‘তাওহীদ’ পূর্ণাঙ্গভাবে থাকার কারণে তা কুরআনের এক তৃতীয়াংশের মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু সূরায়ে ফাতিহায় তিনটি বিষয় একত্রে থাকার কারণে তা ‘উম্মুল কুরআন’ হওয়ার মহত্তম মর্যাদা লাভে ধন্য হয়েছে। তাফসীরে কুরতুবী : ১৪৮

সূরা ফাতিহার ফজিলত :
সুরা ফাতিহার ফজিলত অপরিসীম। এর ফযীলত সম্পর্কে অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি নিন্মরূপ।

১) উবাই ইবনু কা‘ব (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ উম্মুল কুরআনের মত তাওরাত ও ইনজিলে কিছু নাযিল করেননি। এটিকেই বলা হয়, ‘আস-সাব‘উল মাছানী’ (বারবার পঠিত সাতটি আয়াত), যাকে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। আর আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, সে যা চাইবে’। নাসায়ী শরীফ : ৩১৯

২) আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, তোমরা সূরা ফাতিহা পড়। কোন বান্দা যখন বলে, আলহামদুলিল্লাহি রাবিবল আলামীন, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। যখন বলে, আর-রহমা-নির রহীম, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার গুণ বর্ণনা করেছে। বান্দা যখন বলে, মালিকি ইয়াউমিদ্দীন। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার মর্যাদা বর্ণনা করেছেন। বান্দা যখন বলে, ইয়্যাকানা’বুদু ওয়া ইয়্যা কানাস্তাইন, আল্লাহ বলেন, এ হচ্ছে আমার ও আমার বান্দার মাঝের কথা। আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, যা সে চায়। বান্দা যখন বলে, ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকিম.. (শেষ পর্যন্ত)। আল্লাহ বলেন, এসব হচ্ছে আমার বান্দার জন্য। আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, যা সে চায়। মুসলিম শরীফ : ৩৯৫

৩) ইবনে আববাস (রা.) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে জিবরাঈল (আ.) উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ জিবরাঈল (আ.) ওপর দিকে এক শব্দ শুনতে পেলেন এবং চক্ষু আকাশের দিকে করে বললেন, এ হচ্ছে আকাশের একটি দরজা যা পূর্বে কোনদিন খোলা হয়নি। সে দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা অবতীর্ণ হলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে এসে বললেন, ‘আপনি দু’টি নূরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন। যা আপনাকে প্রদান করা হয়েছে। তা আপনার পূর্বে কোন নবীকে প্রদান করা হয়নি। তা হচ্ছে সূরা ফাতিহা এবং সূরা বাকারার শেষ দু’আয়াত। মুসলিম শরীফ : ৮০৬

সূরা ফাতিহার সর্বাধিক পরিচিত নাম ‘সূরাতুল ফাতিহা’। তারপরও সূরা ফাতিহার স্থান, মর্যাদা, বিষয়বস্তু, ভাবভাষা, প্রতিপাদ্য বিষয় ইত্যাদির প্রতি লক্ষ্য রেখে এর বিভিন্ন নাম দেওয়া হয়েছে এবং প্রত্যেক নামের সাথেই সূরাটির সামঞ্জস্য বিদ্যমান। এই সূরাটির ফযীলত ও গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহ যেন আমাদের সকলকেই সূরা ফাতিহার প্রতি আমল করে সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফীক দান করেন। আমীন!