কক্সবাজার বিমানবন্দরে ফ্লাইট চালু নিয়ে অনিশ্চয়তা

কক্সবাজার বিমানবন্দরে ফ্লাইট চালু নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সেখানে কবে ফ্লাইট চালু হবে, তাও কিছু বলতে পারছেন না বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কর্মকর্তারা। মূলত বেবিচক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঠেলাঠেলিতে এই বিমানবন্দরে ফ্লাইট চালু নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

বেবিচক কর্মকর্তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) বিধি অনুযায়ী কয়েকজন চিকিৎসক ও নার্স পেলেই তারা ফ্লাইট চালু করতে পারবেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিকিৎসক ও নার্সের চাহিদা চেয়ে বহু আগে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সাড়া দিচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের।

তবে ভিন্ন কথা বলছেন কক্সবাজারের সিভিল সার্জন। তিনি বলছেন, চিকিৎসক ও নার্স চেয়ে বেবিচকের কোনো চিঠি তারা পাননি। বেবিচক চেয়ে চিঠি দিলেই তারা বিমানবন্দরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিকিৎসক ও নার্স দেবেন। বেবিচক চিকিৎসক নার্স চাইলে আমাদের দিতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তারা যদি না চান, তাহলে আমরা কীভাবে দেব?

বেবিচক এও বলছে, ফ্লাইট চলাচলে আন্তর্জাতিক সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইকাও) যেসব পূর্বশর্ত দিয়েছে, সেগুলো পূরণ করতে না পারায় এখনও কক্সবাজার বিমানবন্দরকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। আইকার বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও নার্স ছাড়া বিমানবন্দরে ফ্লাইট চালু করা যাবে না। অবশ্য সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি শেষে বিধি অনুযায়ী ১ জুন থেকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, সৈয়দপুর ও যশোর রুটের ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়।

ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট ছাড়াও সৈয়দপুর ও যশোরে স্থানীয় সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে চিকিৎসক ও নার্স পাওয়ায় ফ্লাইট চালু করা হয়েছে আগেই। তবে কক্সবাজার, রাজশাহী ও বরিশালে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে চিকিৎসক ও নার্স না পাওয়ায় চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ফ্লাইট চালুর অনুমতি দিচ্ছে না বেবিচক। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও নার্সের বেড়াজালে আটকে আছে এই তিন বিমানবন্দরের ফ্লাইট চালু কার্যক্রম।

ব্যবসায়ী, ট্যুর অপারেটর ও এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কক্সবাজারে প্রতি বছর দেশি-বিদেশি মিলে প্রায় অর্ধ কোটি পর্যটক ভ্রমণ করেন। তাদের যাতায়াতে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২টি ফ্লাইট চলে। পর্যটক সেবায় রয়েছে চার শতাধিক হোটেল-মোটেল, কটেজ ও কয়েকশ রেস্টুরেন্ট। কিন্তু এবার ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকার কারণে কোনো পর্যটক নেই। সেজন্য কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ও ধস নেমেছে। এ পর্যন্ত মোট ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে কক্সবাজার। দেউলিয়া হওয়ার শঙ্কায় কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্টসহ পর্যটন ব্যবসা।

পর্যটন নগরী কক্সবাজারে পর্যটক ছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দেশি-বিদেশি সংস্থার বহু কমকর্তা প্রতিদিন যাওয়া আসা করেন। সেক্ষেত্রে বিমানবন্দরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুই সংস্থার ঠেলাঠেলিতে বিলম্ব হচ্ছে ফ্লাইট চালু কার্যক্রম।

বেবিচক জানিয়েছে, আইকাওয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, ফ্লাইট চলাচল শুরু করতে হলে বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা ও চিকিৎসক থাকতে হবে। যেন একজন রোগী প্লেনে অসুস্থ বোধ করলে বিমানবন্দরে নেমে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে পারেন। যেসব বিমানবন্দর চিকিৎসক ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে, সেখানেই ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, প্রতি শিফটে একজন করে হলে দুই শিফটে তিন বিমানবন্দরে ছয়জন ডাক্তার এবং ১২ জন নার্স হলেই চলে। আর স্ক্রিনিং সিস্টেম থাকতে হয়, যেটা হ্যান্ড থার্মোমিটার দিয়েই যাত্রীর তাপমাত্রা মাপা যায়। তবে থার্মাল স্ক্যানার হলে ভালো হয়। না থাকলে হ্যান্ড ইকুইপমেন্ট দিয়েও চলে।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট যেহেতু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সেহেতু আমাদের স্বাস্থ্য সুবিধা পূর্ব থেকেই ছিল। আর যশোর ও সৈয়দপুরে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে চিকিৎসক ও নার্স বরাদ্দ পাওয়ায় আমরা চালু করে দিয়েছি। কিন্তু কক্সবাজার, রাজশাহী ও বরিশালে বারবার চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও কর্ণপাত করছে না স্বাস্থ্য বিভাগ।

কবে নাগাদ এ তিন বিমানবন্দর চালু হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, এ প্রশ্ন আপনারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কিংবা স্থানীয় সিভিল সার্জনকে করেন। তারা চিকিৎসক ও নার্স দিলেই তো আমরা চালু করে দেব। বারবার চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও তারা কেন দিচ্ছে না, এ প্রশ্নের জবাব তারাই ভালো বলতে পারবে। যদি আমরা চিকিৎসক ও নার্স না নিয়েই বিমানবন্দর চালু করি, তাহলে সেটা আইকাও এর বিধি লঙ্ঘন হবে। আমরা তো বিধি লঙ্ঘন করে অনুনতি দিতে পারি না।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা গত ৩০ মে দুই শিফটের জন্য পাঁচজন করে মোট ১০ জন চিকিৎসক ও নার্স দিয়েছিলাম। কিন্তু তখনও কক্সবাজার বিমানবন্দরে বেবিচক ফ্লাইট চালুর অনুমতি দেয়নি। তখন ফ্লাইট চালু না হওয়ায় সেই চিকিৎসকদের অন্যত্র দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর আর বেবিচক চিকিৎসক চেয়ে কোনো চিঠি আমাদের দেয়নি। বেবিচক চাইলে আমরা চিকিৎসক-নার্স দ্রুতই দিতে পারব। চিকিৎসক নার্স দিতে তো আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমরা তাদের কোনো চিঠি পাইনি।

ইউএস বাংলার মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজারে পর্যটক ছাড়াও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা যাতায়াত করেন। আমরা এমনিতেই লোকসানের মধ্যে আছি। এরমধ্যে যদি কক্সবাজার, রাজশাহী ও বরিশাল বিমানবন্দর খুলে দেওয়া হয়, তাহলে আমরা কিছু হলেও উপকৃত হব। আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে ফ্লাইট চালু হবে।