সবচেয়ে বড় সংঘটিত অপরাধ চক্রকে আইনের আওতায় আনলো বৃটেন

এনক্রিপ্টেড ফোন সিস্টেম হ্যাক করে বৃটিশ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) ইতিহাসে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় সংঘটিত অপরাধ চক্রকে আইনের আওতায় এনেছে। গ্রেপ্তার করেছে এ চক্রের ৭ শতাধিক বসকে। উদ্ধার করা হয়েছে কমপক্ষে ৫ কোটি ৪০ লাখ পাউন্ডের বেশি নগদ অর্থ, ৭৭টি আগ্নেয়াস্ত্র। এর মধ্যে রয়েছে একটি একে- ৪৭ রাইফেল, সাব-মেশিনগান, হ্যান্ডগান, চারটি গ্রেনেড এবং ১৮ শতাধিক সরঞ্জাম। ক্লাস-এ এবং বি-মানের দুইটনের বেশি মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। একটি অবৈধ ল্যাবরেটরি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ২ কোটি ৮০ লাখেরও বেশি ইতিজোলাম পিল। এ খবর দিয়েছে বৃটেনের অনলাইন দ্য সান। এতে আরো বলা হয়, এনক্রোচ্যাট হলো মিলিটারি গ্রেডের একটি এনক্রিপটেড যোগাযোগ ব্যবস্থা।
এটা ব্যবহার করে বিশ্বের ৬০ হাজারের বেশি মানুষ। এর মধ্যে বৃটেনে রয়েছে বিপুল সংখ্যক। কিন্তু এনসিএ বলছে, এই এনক্রোচ্যাটের ব্যবহার হয়েছে অপরাধী কর্মকাণ্ডে। এটা ব্যবহার করা হয়েছে অস্ত্রের ব্যবসা, হত্যা পরিকল্পনা, অপহরণ এবং অর্থ পাচারে। তাই বৃটিশ পুলিশ চার বছর ধরে অপরাধ বিষয়ক তদন্ত চালানোর পর এই সিস্টেমকে ভেঙে দিতে সক্ষম হয়। এনসিএ’র তদন্ত বিষয়ক পরিচালক নিক্কি হল্যান্ড এ সম্পর্কে বলেছেন, দেশে প্রতিটি শীর্ষ অপরাধী গ্রুপের ভিতর তাদের কমপক্ষে একজন করে ব্যক্তিকে রেখেছিল তারা। অপারেশন ভেনেটিক থেকে বৃটিশ নারকো বা মাদক বিষয়ক মাস্টারমাইন্ডকে ধরার জন্য টার্গেট করা হয়। ৬ মাসের জন্য একটি ডিভাইসের জন্য ১৫০০ পাউন্ডে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল একটি কোম্পানি। তারা জুনের শুরুর দিকে সব ব্যবহারকারীকে একটি সতর্কবার্তা পাঠায়। তাতে বলা হয় সরকারি কোনো সংস্থা তাদের সার্ভার হ্যাক করেছে। যেহেতু ফোন অপারেশন সিস্টেম হল্যান্ডে, তাই অপরাধীদের কথোপকথন এবং বার্তা ভিলেনদের বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন এজেন্সির লোকজন।
এই চক্রটির সন্ধান পাওয়ায় কার্যত ২০০ বড় রকমের হত্যাকাণ্ড এবং অপহরণ প্রতিরোধ করা গেছে। তারা এই হত্যা প্রচেষ্টা চালায় এনক্রোচ্যাট এবং মেসেজ সিস্টেম ব্যবহার করে। এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৭০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এই চক্রের। এর মধ্যে রয়েছে পুলিশ কর্মকর্তা, আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা। উদ্ধার করা হয়েছে ৮ কোটি পাউন্ড মূল্যের মাদক, ৭৭টি বন্দুক এবং কমপক্ষে ৫ কোটি ৪০ লাখ পাউন্ড নগদ অর্থ।
এনসিএ বলেছে, বৃটেনের আইন প্রয়োগকারীরা কমপক্ষে ২০০ জীবন বাঁচাতে সক্ষম হয়েছেন। দুই প্রতিপক্ষ গ্রুপের মধ্যে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতো। এর মধ্যে রয়েছে অঙ্গহানি করা, এসিড হামলা, গুলি করা। এই চক্রটিকে উদ্ঘাটন করতে সমর্থ হওয়ার প্রেক্ষিতে আইন প্রয়োগকারীরা এনক্রিপ্টেড যোগাযোগ ব্যবস্থার বিষয়ে সতর্ক রয়েছেন। এতে আরো বলা হয়, ড্রাগ ব্যবসায়ী অ্যানড্রু ভেনা এবং ম্যাথিউ কর্নওয়াল পরিচালনা করতো গ্লুস্টোর অ্যান্ড স্ট্রোড। ২০১৯ সালের মে মাসে তাদেরকে জেল দেয়া হয়। এর আগে তারা ওই ভিডাইস ব্যবহার করতো। লিভারপুলের জন কিনসেলা এবং পল ম্যাসিকে হত্যার জন্য ২০১৫ সালে যাবজ্জীবন জেল দেয়া হয় মার্ক ফেলোস এবং স্টিভেন বয়লিকে। তারাও ওই ডিভাইস ব্যবহার করতো। হত্যা, অর্থ পাচার, মাদক ব্যবসার চুক্তি সহ অপরাধী কর্মকাণ্ডের ষড়যন্ত্র বা পরিকল্পনা করতে প্রকাশ্যে এসব সিস্টেমে তারা আলোচনা করতো বলে জানিয়েছেন মেট্রাপলিটন কমিশনার ক্রেসিডা ডিক। তিনি বলেছেন, তারা ছিল দুর্ধর্ষ। তারা মনে করতো তারা আইনের ঊর্ধ্বে। তদন্তকারীরা যে অনুসন্ধান করেছেন তা এসব অপরাধীর বিচারের জন্য এখন ব্যবহার করা হবে। তিনি আরো বলেন, সবে তো শুরু। আরো মানুষের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে। আমরা জানি তারা কারা। আমরা দেখছি, তারা কি করছেন। কার সঙ্গে করছেন। তাদেরকে বিচারের আওতায় না আনা পর্যন্ত আমরা চুপ করে থাকবো না। ন্যাশনাল পুলিশ চিফস কাউন্সিলের চিফ কনস্টেবল পিটার গুডম্যান বলেছেন, অপরাধীরা এসব ডিভাইস ব্যবহার করেছে এই ভেবে যে, আইন প্রয়োগকারীরা তাদের টিকিটিও ছুঁতে পারবে না।