গোকুলচন্দ্র নাগ

কল্লোল সম্পাদক গোকুলচন্দ্র নাগের জন্ম কলকাতায় ১৮৯৪ সালের ২৮ জুন। তাঁর বাবার নাম মতিলাল নাগ ও মা কমলা নাগ। স্কুলের ছাত্র অবস্থায়ই তিনি মা-বাবাকে হারান। মামার কাছে মানুষ হলেও তাঁর পড়াশোনা বেশি দূর এগোয়নি। ছোটবেলা থেকেই তাঁর স্বাস্থ্য ভালো ছিল না। তিনি সাউথ সুবার্বন স্কুলে পড়েছেন; কিন্তু পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়ায় প্রধান শিক্ষকের বকুনি খেয়ে পড়া ছেড়ে দেন। ছবি আঁকার দিকে ঝোঁক ছিল ছোটবেলা থেকে। সরকারি আর্ট স্কুলে ভর্তিও হন। তখন ছবি আঁকার পেশাকে ভালো চোখে দেখা হতো না। ফলে তাঁর মামাও সন্তুষ্ট ছিলেন না। আর্ট স্কুলের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ছবি এঁকে কিছু রোজগার করতে থাকেন। ১৯১৮ সালে তিনি ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব্ব বিভাগের ওয়েস্টার্ন সার্কেলে কাজে যোগ দেন; কিন্তু ভগ্নস্বাস্থ্যের জন্য কাজ ছেড়ে দিতে হয়। তাঁর আরেক মামার ফুলের দোকানেও কিছুদিন কাজ করেছেন। দোকানে কাজের মাঝেই চলত ছবি আঁকার কাজ। সুদূর বোম্বে ও পুনে থেকে তিনি অর্ডার পেতেন। সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ থাকলেও তখনো তাতে মন দিতে পারেননি। ফুলের দোকানে ফুল কিনতে আসা দীনেশরঞ্জনের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। চিত্র, সংগীত বা অভিনয়ের জন্য নয়, তিনি স্মরণীয় থাকবেন তাঁর প্রকাশিত ‘কল্লোল’ পত্রিকার জন্য। চিরাচরিত গণ্ডি ও অনুশাসন উপেক্ষা করে বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার প্রবেশ ঘটে কল্লোলের হাত ধরেই। তাঁর নাম সহসম্পাদক হিসেবে ছাপা হলেও তিনিই ছিলেন এর আসল কর্ণধার। লেখা জোগাড় করা, প্রুফ দেখা, প্রচ্ছদ পরিকল্পনা, চিঠিপত্র লেখা ইত্যাদি কাজে অমানুষিক পরিশ্রম করতে হতো তাঁকে। ১৯২৫ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান।

[উইকিপিডিয়া অবলম্বনে]