হালদায় মা মাছের পরিমান বাড়াতে হাটহাজারীতে মডেল পুকুর

মির্জা ইমতিয়াজ ও ইউনুস মিয়া:

দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে মা মাছের পরিমাণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার অভিনভ পদ্ধতি হাতে নিয়েছে। এ পদ্ধতি পরীক্ষামূলক ভাবে গেল বছর বাস্তবায়ন করার পর চলিত মৌসুমে সফলতা পাওয়া যায়। এরই ফলশ্রুতিতে মৎস্য অধিদপ্তরের সাথে সমন্বয় করে এবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় হাটহাজারীতে মডেল পুকুর নির্বাচন করা হয়েছে।

নির্বাচিত এ মডেল পুকুরে হালদা থেকে আহরিত ডিম ফুটিয়ে রেণু অবমুক্ত করা হচ্ছে। এ সব রেণু দেড়/দু’মাসে নির্দিষ্ট আকৃতিতে পৌঁছলে বড় পোনায় পরিনত হবে (অর্থাৎ,প্রতি কেজিতে ১০/১২ টি)। এ বিষয়ে হালদার রেণু পুনঃরায় হালদায় অবমুক্ত করতে একটি মডেল পুকুর নির্বাচন করা হয়েছে। এ পুকুরে এক কেজি ৬’শ গ্রাম রেনু কেনা হয়েছে। এবার ৫০ হাজার পোনা অবমুক্ত করা হবে। গেল বছরে প্রায় এক লাখ পোনা ছাড়ার পরিকল্পনা নেয়ার পরেও সবটুকু অবমুক্ত করা হয়েছিল। এই পোনা অবমুক্তের ফলে মাছের জ্বীনগত বৈশিষ্ট্য ঠিক থাকবে এবং ৪/৫ বছর পর মা মাছ হিসেবে ডিম ছাড়বে। তখন ডিমের পরিমান বাড়বে ; এটা সুদূরপ্রসারী একটা উদ্যোগ। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়,প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র এ হালদায় উন্নত জ্বীন সম্মৃদ্ধ মা মাছের ডিম, ডিম থেকে রেণু , রেণু থেকে বড় আকৃতির (৪-২৫ কেজি) ওজনের মাছ উৎপাদন পূর্বক ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছতে ইতিমধ্যে প্রতি বছর সরকারী রাজস্ব পাওয়া যায় আনুমানিক ৮’শ কোটি টাকা। সরকার উল্লিখিত পদ্ধতি অব্যাহত রাখলে,দুষণ রোধ, বালু উত্তোলন বন্ধ,-ইঞ্জিন চালিত নৌকা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ সহ নিরাপত্তা জোরদার করা হলে রাজস্ব আয় আরো ৩০-৪০ শতাংশ বেড়ে যাবে। এমনটাই ধারনা মৎস্য বিজ্ঞানীদের।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন জানান, জেলা প্রশাসক স্যারের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গতবারের মত এবারেও মডেল পুকুরে হালদার পোনা পরিচর্যা করে মা মাছ অবমুক্ত করা হবে। উপজেলা মৎস্য অফিসার এর পরামর্শ নেয়া হবে এবং তাদের সহায়তা নেয়া হবে। এতে হালদার বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ণ থাকবে এবং হালদায় মা মাছের স্টক বাড়বে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, আমরা বিষয়টিকে সাধুবাদ জানাই। তবে অবশ্যই এ মডেল পুকুরে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। যাতে করে এ পুকুরের মাছের সাথে অন্য কোন কৃত্রিম পোনা যুক্ত হতে না পারে। তাতে করেই মাছের জ্বীনগত বৈশিষ্ট্য ঠিক থাকবে এবং ৪/৫ বছর পর মা মাছ হিসেবে ডিম ছাড়বে। মনে রাখতে হবে হালদা হচ্ছে রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালবাউশের প্রকৃতিক একটা জ্বীন ব্যাংক।

এদিকে হাটহাজারী উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুদা জানান ৩১ মে তিন দিনের ৮-৮ দিন বয়সী রেণু কেজিতে ধরেছে প্রায় ১ লাখ। শুক্রবার (২৯ মে) ৬-৭ দিন বয়সী রেণু কেজিতে ধরেছে প্রায় ২ লাখ।  ৪ দিনের রেণু একটু বড় হওয়ায় সংখ্যাটি কমে দাঁড়ায় ৩ লাখে। ১ কেজি রেণুতে মাছের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ লাখ। এরপর যত দিন বাড়বে তত সংখ্যা কমতে থাকে।

তিনি জানান, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারি ছুটি চলাকালে সারা দেশের মাছচাষি বা রেণু সংগ্রহকারীরা যাতে নির্বিঘ্নে হালদার পোনা নিয়ে যেতে পারে সে লক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়েছে। রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার মদুনাঘাট, শাহ মাদারী, মাছুয়াঘোনা, মোবারকখীলের সরকারি মৎস্য হ্যাচারির সব রেণু বিক্রি হয়ে গেছে। স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারীরা মাটির কুয়ায় (গর্তে) যেসব রেণু ফুটিয়েছেন সেগুলোর বিক্রিও শেষ পর্যায়ে। এবার হাটহাজারীতে ৭৩টি ও রাউজানে ৭৫টি মাটির কুয়ায় রেণু ফোটানো হয়েছে।

ডিম সংগ্রহকারীরা জানান, সরকারি হ্যাচারির রেণু তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হলেও মাটির কুয়ায় ব্যক্তি উদ্যোগে ফোটানো রেণু ৫০-৭০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যান্য বছর প্রথম দিকে ১ লাখ টাকা বিক্রি হলেও পরে রেণুর দাম পড়ে যেতো দ্রুতগতিতে। এবার তা হয়নি।