কাজলকে হাতকড়া পরানো পুলিশের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবেনা কেন?

সাংবাদিক কাজল নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে তার স্ত্রীর চকবাজার থানায় দায়ের করা মামলার চলমান থাকা অবস্থায় সেটি তদন্ত না করে হাতকড়া পরানোটা রীতিমতো অন্যায় বলেছেন আইনজীবীরা।
হাতকড়ার ব্যবহার নিয়ে আইন আছে পুলিশ প্রবিধান বা পিআরবিতে। ওই বিধির ৩৩০ ধারায় বলা হয়েছে, ‘…বিচারাধীন বন্দীকে তাহাদের পলায়ন বন্ধ করিবার জন্য যাহা প্রয়োজন তাহার চাইতে বেশি কড়াকড়ি করা উচিত নহে। হাতকড়া বা দড়ির ব্যবহার প্রায় ক্ষেত্রেই অপ্রয়োজনীয় এবং অমর্যাদাকর। বয়স বা দুর্বলতার কারণে যাহাদের নিরাপত্তা রক্ষা করা সহজ ও নিরাপদ তাহাদের ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি করা উচিত হইবে না।’
যশোরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আইন মেনেই শফিকুল ইসলাম কাজলকে হাতকড়া পরানো হয়েছে। আমি স্থানীয় পুলিশের সঙ্গেও কথা বলেছি। আদালতে আসামি তোলার সময় হাতকড়া পরিয়ে নিতে হবে, এটি পুলিশ রেগুলেশন অব বাংলাদেশে (পিআরবি) আছে।’
এসপি সাহেবের কাছে প্রশ্ন, কাজল রহস্যজনক ভাবে নিজ কার্যালয় থেকে নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি আপনি জানতেন কিনা?
কাজলের স্ত্রী তার স্বামী নিখোঁজ হয়েছে মর্মে ঢাকার চকবাজার থানায় যে অভিযোগ দিয়েছেন তার ভিত্তিতে তিনি আসামী নয় ভিকটিম।
সাংবাদিক কাজল পুলিশ হেফাজত থেকে পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবতা কতটুকু। যে কারনে আপনি তাকে পিচমোড়া করে হাতকড়া পরানো যুক্তিযুক্ত মনে করলেন।
বিশিষ্ট আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বিবিসিকে বলেন,
আইনে বলা আছে যে, যদি পুলিশ মনে করে যে আসামী পালিয়ে যেতে পারে তাহলে তার পালানো ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে,”।
নারীদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে তাদের ক্ষেত্রে হাতকড়া পড়ানোর দরকার নাই।
সাংবাদিক মি. ইসলামের বিষয়টি উল্লেখ করে মি. বড়ুয়া বলেন, সব বিষয় বিশ্লেষণ করে বলা যায় যে, তাকে আসলে হাতকড়া পড়ানোটা অপ্রয়োজনীয়।
“সাংবাদিক কাজলের বিষয়টা একটু অড,” তিনি বলেন।
তিনি বলেন, মি. ইসলামের পরিবারের পক্ষ থেকে চকবাজার থানায় একটি মামলা করা হয়েছিল যেখানে বলা হয়েছে যে ১০ই মার্চ থেকে তিনি নিখোঁজ। সেই মামলায় কোন অগ্রগতি নেই। সেই মামলাটি চলমান ছিল। তার মানে সে কারো না কারো কাস্টডিতে ছিল।
এ বিষয়ে স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে একাধিক সংবাদও প্রকাশ করা হয়। আর তাই তাকে পাওয়া যাওয়ার পর তার বিষয়ে খোঁজ-খবর করাটা উচিত ছিল বলে মনে করেন তিনি।
মি. বড়ুয়া বলেন, “পাসপোর্ট আদেশ ১৯৭৩ এর ১১ এর ৩ ধারায় গ্রেফতার করা হলো। আর গ্রেফতারের পর তাকে যেভাবে নিয়ে যাওয়া হলো সেটা অপ্রয়োজনীয় ছিল।”
এডভোকেট মনজিল মোরশেদ সারাবাংলাকে বলেন,
কাউকে শারীরিক কিংবা মানসিক নিপীড়ন করা যাবে না। যশোরের পুলিশ শফিকুল ইসলাম কাজলের সঙ্গে যা করেছেন, তা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। এটি কোনোভাবেই করা যাবে না। এভাবে হাতকড়া পরানোর ঘটনা অসম্মানজনক।’
‘পিঠমোড়া করে হাতকড়া পরাতে হবে, এটি নাকি আইনে আছে’- এ বিষয়টি উল্লেখ করলে মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘আমার মনে হয় পুলিশ পিআরবি আইনের অপব্যাখ্যা দিয়েছে। রাষ্ট্র ক্রমশ উদার ও মানবিক হচ্ছে, আমরা এটা বিশ্বাস করতে চাই। আগে হাতকড়া দিয়ে হাত বাঁধা হতো, এখন পিঠমোড়া করে বাঁধবে- এটা বিশ্বাস করা যায় না। রাষ্ট্র এতটা পিছিয়ে যাবে? যারা এই আচরণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’
আলীউর রহমান
সাধারণ সম্পাদক, রিপোটার্স ফোরাম চট্টগ্রাম