আরাফার ময়দান

মির্জা ইমতিয়াজ শাওন:: ৯ জিলহজ (বাংলাদেশ সময় ৮ জিলহজ)। হাজীরা বাদ ফজর মিনা থেকে আরাফার ময়দানের দিকে রওনা হয়েছেন এবং অনেকে এরি মাঝে পৌছে গিয়েছেন। হজের ফরজগুলোর মাঝে এ ময়দানে অবস্থান করা অন্যতম। এ ময়দানে নির্ধারিত দিনে হাজীদের অবস্থান না করলে হজই আদায় হবে না। এতেই স্থানটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য ফুটে উঠে। ‘আরাফার ময়দানে অবস্থানই হচ্ছে হজ’।
যেখানে আরাফার ময়দান: পবিত্র নগরী মক্কা থেকে ১৩-৪৪ কিলোমিটার পূর্বে জাবালে রহমতের পাদদেশে আরাফার ময়দান অবস্থিত। এর দৈর্ঘ এবং প্রস্থ যথাক্রমে দুই কিলোমিটার। ঐতিহাসিক এ ময়দানটি তিন দিকে পাহাড় বেষ্টিত। এ ময়দানের দক্ষিণ পাশ ঘেঁষে রয়েছে মক্কা-হাদাহ-তায়েফ রিং রোড। এ রোডের দক্ষিণ পাশেই আবেদি উপত্যকায় মক্কার ঐতিহাসিক ‘উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়’ অবস্থিত। উত্তরে সাদ পাহাড়। সেখান থেকে আরাফার ময়দানের সীমানাও প্রায় ১ কিলোমিটার। সেখান থেকে দক্ষিণে গিয়ে মসজিদে নামিরায় আরাফার ময়দানের সীমানা শেষ হয়েছে।

আরাফা ময়দানের ইতিহাস: আরাফার ময়দানের ইতিহাস হজরত আদম (আ.) ও বিবি হাওয়া (আ.) এর সঙ্গে জড়িত। আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) মহান আল্লাহর নির্দেশে বেহেশত থেকে বের হওয়ার পর পৃথিবীতে সর্বপ্রথম তাদের পরস্পর সাক্ষাৎ এই আরাফাত ময়দানে হয়। আদম (আ.) আরাফাত ময়দানে জাবালে রহমতের ওপর বিশ্রাম নেওয়ার উদ্দেশ্যে অবস্থানকালে দেখতে পান, হাওয়া (আ.) জেদ্দার দিক থেকে আরাফাতের ময়দানের দিকে আসছেন। তখন আদম (আ.) দৌঁড়ে যেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরেন এবং অঝোরে কাঁদতে থাকেন। এ সময় আদম ও হাওয়া (আ.) আসমানের দিকে তাকান।

অত:পর মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের দৃষ্টি থেকে পর্দা ওঠিয়ে দিলে তাদের দৃষ্টি আল্লাহর আরশের ওপর গিয়ে পড়ে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অত:পর আদমকে তার প্রতিপালক কতিপয় বাক্য শিক্ষা দেন। এতে রব তার প্রতি মনোযোগী হন, নিশ্চয়ই তিনি তওবা কবুলকারী ও দয়ালু।’ (সূরা বাকারা : ৩৭)।

এছাড়াও আমাদের নবী (সা.) বিদায় হজের ভাষণ এ ময়দান সংলগ্ন জাবালে রহমত পাহাড়ে দাঁড়িয়ে দিয়েছিলেন। একারণেও স্থানটি উম্মতে মুহাম্মদি কাছের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক স্থান।

আরাফার ময়দানে অবস্থানের বিধান: হাজীদের জন্য আরাফার ময়দানে অবস্থান করা ফরজ। ৯ জিলহজ্ব সূর্য ঢলা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফার ময়দানে হজের নিয়তে কিছুক্ষণ অবস্থান করলেই এ ফরজ আদায় হয়ে যাবে। তবে সূর্যাস্তের আগে কোনোভাবেই আরাফার ময়দানের সীমানা ত্যাগ করা যাবে না। না হয় দম আদায় ওয়াজিব হবে। নির্ধারিত সময়ের আগে ও পরে আরাফার ময়দানে অবস্থান করলে হজের বিধান পালন হবে না। তবে আরাফাহ দিবসের রাতে আরাফার ময়দানে অবস্থান করা সুন্নত।

আরাফাতে অবস্থান কী ও কেন: মহান আল্লাহ চান সব মুসলমান একতাবদ্ধ হয়ে থাকুক। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা, সপ্তাহে এক দিন জুমাবার একসঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করা, দুই ঈদে একসঙ্গে ঈদের নামাজ পড়া, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত লোকদের সঙ্গে আরাফাতে অবস্থান করা মুসলমানদের একতার ইঙ্গিত বহন করে। আরাফাতের মাঠে অবস্থানকেই হজ বলা হয়েছে। অথচ এ মাঠে নির্দিষ্ট কোনো ইবাদত নেই। আরাফাতে অবস্থান হজের শ্রেষ্ঠ রুকন। কারণ আরাফাতের ময়দান যেন বিশ্ব সম্মেলন। এ সম্মেলন থেকে মুসলমানদের ঐক্য, শৃঙ্খলা ও শান্তির বার্তা সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
ছবি- Babul Kaba Hajj Kafela