বিদেশ ফেরত যাত্রীরা ২০ ভরি স্বর্ণ আনতে পারবেন

আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাগেজ রুলে বড় পরিবর্তন হচ্ছে। বিনা শুল্কে ১০০ গ্রাম স্বর্ণালংকার আনার পাশাপাশি বিদেশফেরত যাত্রী বা প্রবাসীরা ব্যাগেজ রুলের আওতায় নামমাত্র শুল্ক দিয়ে আরও স্বর্ণালংকার (সর্বোচ্চ ২০ ভরি) আনতে পারবেন।

মূলত দেশে অবৈধ স্বর্ণের লাগাম টানতে ও জুয়েলারি শিল্পকে শৃঙ্খলায় আনতে এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, আগে একজন বিদেশফেরত যাত্রী বা প্রবাসী বিদেশ থেকে দেশে আসার সময় বিনা শুল্কে ১০০ গ্রাম বা সাড়ে ৮ ভরি (এক ভরিতে ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ওজনের স্বর্ণালংকার ও ২০০ গ্রাম ওজনের রূপার গহনা আনতে পারতেন। এ ক্ষেত্রে এক প্রকারের অলংকার ১২টির বেশি আনা যেত না। আগামী বাজেটেও এ সুবিধা বহাল রাখা হচ্ছে। তবে এর সঙ্গে নতুন সুবিধা দেয়া হচ্ছে।

সূত্র আরও জানায়, ১০০ গ্রাম স্বর্ণালংকারের পর চাইলে যে কেউ বৈধ পথে আরও স্বর্ণালংকার বা স্বর্ণের বার আনতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে তাকে ভরিপ্রতি এক হাজার টাকা শুল্ক দিতে হবে। সর্বোচ্চ ২৩৪ গ্রাম স্বর্ণের বার বা ২০ ভরি স্বর্ণালংকারে এ সুবিধা পাওয়া যাবে। অর্থাৎ ২০ ভরি স্বর্ণালংকারের জন্য ২০ হাজার টাকা শুল্ক দিতে হবে। এর বেশি কেউ স্বর্ণের বার বা স্বর্ণালংকার আনলে তাকে ৩৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।

অর্থাৎ আগে ১০০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণালংকার শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনতে পারত বিদেশফেরত যাত্রী বা প্রবাসীরা। এরপর বাড়তি স্বর্ণের বার আনতে ভরিপ্রতি ৩ হাজার টাকা দিতে হতো। আগামী অর্থবছর থেকে ১০০ গ্রামের পর আরো ২৩৪ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের বার বা স্বর্ণালংকার ভরিপ্রতি এক হাজার টাকা শুল্ক দিয়ে আনতে পারবেন। অবশ্য এক বছরে ৩ বারের বেশি ব্যাগেজ রুলের এ সুবিধা পাওয়া যাবে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, সরকার জুয়েলারি ব্যবসাকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে চায়। নীতিমালা না থাকার অজুহাতে অবৈধ স্বর্ণের রমরমা বাণিজ্যে অনেকে ফুলে ফেঁপে উঠেছে। এখনও বেশির ভাগ ব্যবসায়ী অবৈধ স্বর্ণের ব্যবসা করেন। বৈধভাবে স্বর্ণ আমদানিকে উৎসাহিত করতে এবং রাজস্ব আদায় বাড়াতে ব্যাগেজ রুলে পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

তারা আরও বলেন, সম্প্রতি অবৈধ স্বর্ণকে বৈধতা দিতে এনবিআর থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এর আওতায় জুলেয়ারি ব্যবসায়ীদের ভরিপ্রতি স্বর্ণালংকারে এক হাজার টাকা, ক্যারেটপ্রতি হীরার অলংকারে ৬ হাজার ও রুপায় ৫০ টাকা আয়কর দিতে হবে। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে অঘোষিত ও মজুদ করা সোনা, রুপা ও হীরা সম্পর্কে ঘোষণা দিয়ে কর দিতে হবে। করের চালান সংশ্লিষ্ট ডিলার, ব্যবসায়ী বা স্বর্ণালংকার প্রস্তুতকারীর আয়কর রিটার্নের সঙ্গে দাখিল করতে হবে।

জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন জুয়েলারি সমিতির (বাজুস) নেতারা জানান, সরকার এ সুযোগ দেয়ায় স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের ‘অবৈধ ব্যবসার’ বদনাম ঘুচবে। ইতিমধ্যে সংগঠনের সব সদস্যকে এ সুযোগ গ্রহণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলিপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, এনবিআর ও বাজুসের উদ্যোগে আগামী ২৩ থেকে ২৫ জুন একটি মেলার আয়োজন করা হবে। যেখানে ব্যবসায়ীরা তাদের অঘোষিত স্বর্ণের ঘোষণা দিতে পারবেন। তার আগে ১২ জুন বাজুসের সব সদস্যকে নিয়ে রাজধানীর একটি হোটেলে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হবে।