জমে উঠেছে ঈদ বাজার- ১

মির্জা ইমতিয়াজ শাওন:: জমে উঠেছে ঈদ বাজার। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিভিন্ন মার্কেট ও বিপণী কেন্দ্রে চলছে বিকিকিনি। দাম নিয়ে ক্রেতা বিক্রেতাদের মাঝে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তবে বাজারে দেশী পোষাকের চাহিদা বেশি বলে জানান বিক্রেতারা। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততোই বাড়ছে বেচা-কেনা। চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন বিপণিবিতানে চাকচিক্য আর আলোর ঝলকানিতে জমে উঠেছে ঈদের কেনা-বেচা। শেষ মুহুর্তে এসব বিপণি কেন্দ্রে পা ফেলারও জায়গা নেই। নিজেদের পছন্দমতো পোশাক কিনতে সবাই ছুটছেন। আর ঈদ কেনাকাটায় পুরুষদের চেয়ে এগিয়ে আছেন নারীরাই। চলুন দেখে নেই নগরীর মার্কেটগুলোর চিত্র-

ঈদ কেনাকাটায় নগরবাসীর আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে বিপণিবিতান। পরবর্তী সময়ে নিউমার্কেটের আশেপাশে গড়ে ওঠে রিয়াজউদ্দিন বাজার, জহুর হকার্স মার্কেট, তামাকুমুন্ডি লেইন, গোলাম রসুল মার্কেট, টেরিবাজারসহ বেশ কয়েকটি বিপণিবিতান। আছে নিত্যনতুন পণ্যের সমাহার। ফলে ঈদ কেনাকাটায় নগরবাসীর যাবতীয় আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে এই নিউমার্কেট এলাকাটি। এমনিতে নিউমার্কেটকেন্দ্রিক কেনাকাটায় নগরবাসীর আস্থা ও নির্ভরতা বজায় থাকে সারা বছরজুড়েই। এই স্থানে রোজার ঈদের কেনাকাটার ভিড় জমতে থাকে রমজানের শুরু থেকেই। বিশেষ করে পাশের জহুর হকার্স মার্কেটে কাপড় সেলাইয়ের জন্য ক্রেতাসমাগম দেখা যায় রোজার আগ থেকেই। আবার রিয়াজউদ্দিন বাজারের পাইকারি মার্কেট জমে ওঠে ঈদের আগে। চট্টগ্রামের যেকোনো শপিংমলে কেনাকাটার পর নিউমার্কেট এলাকার বিপণিবিতানগুলোতে অন্তত একবার ঢুঁ না মারলে কেনাকাটা অসম্পূর্ণ থেকে যায় ক্রেতাদের।

কী নেই এসব মার্কেটে? শাড়ি, কাপড়, ওষুধ, টয়লেট্রিজ সামগ্রী ,টেইলারিং,প্রসাধন সামগ্রী ও শোপিস সামগ্রী, তৈজসপত্রসহ গৃহস্থালি ব্যবহারের অন্য টুকিটাকি দ্রব্যাদিও।
বয়োবৃদ্ধা আমেনা বেগম তিনি বলেন, এটি দেশের প্রথম আধুনিক মার্কেট। একই ছাদের নিছে সব জিনিসের সমাহার । যা বিপনি বিতানের প্রধান বৈশিষ্ট্য। তাই এই বয়সেও এখানে ছুটে আসি। এটি সিডিএর মার্কেট । কিন্তু এর প্রতি কর্তৃপক্ষ এখানো উদাসীন। কিন্তু সিডিএ এখনো সেন্ট্রাল এসি- লিফ্ট’র ব্যবস্থা করতে পারেনি। এসব খুবই দরকার।
রিয়াজউদ্দিন বাজারে শাড়ি কিনতে আসা নব বিবাহিত সুমি হোসেনেরে সাথে কথা হলো তিনি জানান, নিজের জন্য শাড়ি এবং ভাসুরের মেয়ে দুটোর জন্য সালোয়ার-কামিজ আর জুয়েলারি কেনার করার জন্য আসছি। কালেকশন বেশ ভাল।
আবার রিয়াজউদ্দিন বাজার ঘুরে জহুর হকার্স মার্কেটে ঢুকলেন বেসরকারী চাকুওে কলিম আনোয়ার। তিনি জানান, এখনো ভিড় কম তাই আগেভাগে এসে কেনাকাটা সেরে ফেলার চেষ্টা করছি। এখানে সামর্থের মধ্যে পছন্দের কাপড়টা কিনতে আসা।
বরাবরের মতো নিউমার্কেটে পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ আর জুয়েলারির দোকানের সামনে দেখা গেছে ক্রেতা সমাগম। নতুন অনেক মার্কেট গড়ে উঠলেও ব্যতিক্রমী ও মানসম্পন্ন শাড়ি এবং পাঞ্জাবির জন্য ক্রেতারা এখনো নিউমার্কেটেই আসছেন বলে জানিয়েছেন অনেকদিনের পুরোনো শাড়ির দোকান এ ওয়াদুদ ব্রাদার্সের মালিক মো: শওকত।
বিপনি বিতান মার্চেন্ট ওয়েল ফেয়ার কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সাগীর বলেন, অর্ধশতাব্দী ধরে চট্টগ্রামের মানুষের কেনাকাটায় প্রধান কেন্দ্র হয়ে আছে নিউমার্কেট। ৫১৬টি দোকান নিয়ে আমরা পসরা সাজিয়েছি। ঈদের দিন যতই ঘনিয়ে আসবে ক্রেতাদের চাপ বাড়বে। এখনো ক্রেতাদের বিরাট অংশ চাকুরিজীবিরা বেতন বোনাস হাতে পাইনি তাই।
ক্রেতাদের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়াও আমরা নিজস্ব সিকিউরিটির ব্যবস্থা রেখেছি। ৩৫টি সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে আমরা সার্বিক বিষয় মনিটরিং করছি। ফলে ক্রেতা সাধারণ স্বাচ্ছন্দে কেনাকাটা করতে পারেবে।

সমাজ কর্মী শাদ ইরশাদ জানান সব বয়েসীদের কাছে ঈদের কেনাকাটার জন্য ঐতিহ্যবাহী এতদঅঞ্চলের শত বৎসরের পুরানো রিয়াজউদ্দিন বাজার। তার কারন প্রথমত এবাজার হচ্ছে পরিধেয় বস্ত্র , খাদ্যদ্রব্য, প্রসাধন দ্রব্য হতে শুরু করে প্রয়োজনীয় সমস্ত পণ্যের পাইকারী খুচরা-বিক্রয়ের জন্য চট্টগ্রামের বৃহৎ বানিজ্যকেন্দ্র এই রিয়াজউদ্দিন বাজার। ঈদ যতো ঘনিয়ে আসছে ভিড় ততো বাড়ছে । সেহেরী সময় অবধি এখানে বিরামহীন কেনাকাটায় জমজমাট হয়ে উঠেছে ঈদ বাজার।
আর মাত্র কয়েক দিন সময় হাতে আছে, এরই মধ্যে শেষ করতে হবে ঈদের সকল কেনাকাটা। আর ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে মার্কেটলোতে ততই ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। সাধারণ মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষ কেনাকাটার জন্য রিয়াজউদ্দিন বাজারকেই বেচে নেন বরাবর।
বেনারশী ভান্ডার এর মাহাবুব আলম জানান, এই বছর ঈদ মার্কেটে ভারতের চেন্নাই, কলকাতা, ব্যাঙ্গালোর, দিল্লি ও জয়পুর থেকে বিভিন্ন রঙ ও ডিজাইনের শাড়ি এসেছে। এগুলোর মধ্যে জুট কাতানের দাম পড়ছে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা, রাজস্থান সিল্ক ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা, ভেলবেট সিল্ক ২৫ থেকে ৩৫ হাজার, চেন্নাই কাতান ১০ থেকে ১৫ হাজার, বেনারসি ১৫ থেকে ৪০ হাজার, নেটের শাড়ি ৪ থেকে ১০ হাজার, ব্যাঙ্গালোর কাতান ৫ থেকে ১০ হাজার, অপেরা কাতান ১৫ থেকে ৩০ হাজার, টাঙ্গাইল সিল্ক ৭০০ থেকে ২ হাজার এবং দেশি সুতি শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা।
মেয়েদের পোশাক বিক্রেতা রুপরাজের আবু তৈয়ব জানান এবছর ভারতীয় ড্রেসেরও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। গ্রাম কিংবা শহরের সব শ্রেণির তরুণীরা ভারতীয় পোশাক লেহেঙ্গা,লাছা, গাউন খুঁজছেন। এ বছর নারী পোশাকের মধ্যে থ্রি পিসের মূল্য সর্বনিম্ন তিন হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা।
আবার ছেলেদের পোশাক বিক্রিতেও কমতি নেই, শার্ট পেন্টের পাশাপাশি পাঞ্জাবী ব্যাপক বিক্রি হচ্ছে । ইতিমধ্যে ছেলেদের পোশাকের মধ্যে পাঞ্জাবির চাহিদাই সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছেন ভিআইপি পাঞ্জাবী হাউজের মহসিন পাশা রিপন । তিনি বলেন এই প্রতিষ্ঠানে বৈচিত্র্যময় সর্বনিম্ন ১৫৫০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা দামের পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে।
শাড়ীর কিনতে আসা পাথরঘাটার ফাতেমা নেওয়াজ জানান, দোকানে বিক্রি হচ্ছে নানা কারুকাজ করা বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি শাড়ি। তবে দেশীয় সুতী শাড়ীর প্রতি আমার আকর্ষণ বরাবর। এগুলোর দামও রয়েছে মোটামুটি। শাশুড়ির জন্য শাড়ী কিনেছি এখান থেকে।
মুরাদপুর থেকে আসা ব্যবসায়ী ইয়াকুব বলেন, সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে তাই উচিত এই মার্কেটের পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করা অন্যথায় শত বছরের ঐতিহ্য হারাবে রিয়াজউদ্দিন বাজার। অনেকে সড়কের পাশে গাড়ি রেখে কেনাকাটা করতে মার্কেটে ঢুকে ফলে রাস্তায় ভয়াবহ যানজট লেগে থাকে। পার্কিং ব্যবস্থা রাখা দরকার। তা ছাড়া ক্রেতাদের জন্য কোন টয়লেট সুবিধা রাখা হয়নি। অত্যন্ত গিঞ্জি পরিবেশ। শাড়ীর দোকান মুন্নীর মালিক মোহাম্মদ রুকন জানান, এখানে বৃহত্তর রিয়াজুদ্দিন বাজার ছোট বড় ও আশপাশের মার্কেট মিলিয়ে দশ হাজারের কাছাকাছি দোকান প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার কারনে ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছে তুমুল প্রতিযোগিতা এতে সবচেয়ে লাভবান হয় ক্রেতারা। বাস্তবিক পক্ষে ৫০০ টাকা হতে লক্ষ টাকা দামের শাড়ী, ত্রিপিস, লেহেঙ্গা ইত্যাদি রিয়াজউদ্দিন বাজার থেকে সারা চট্টগ্রামে সরবরাহ হয়ে থাকে। ২০০ টাকা হতে ২০০০০ টাকা দামের পাঞ্জাবী রিয়াজ উদ্দিন বাজার হতে সারা চট্টগ্রামের বিভিন্ন শপিং ব্যবসায়ীরা নিয়ে যায়।
রিয়াজউদ্দিন বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম জানান, যেহেতু ক্রেতাদের স্বাভাবিক চাহিদা হচ্ছে ভাল পন্য অপেক্ষাকৃত স্বল্পমূল্যে ক্রয় করা। নগরীর সকল মার্কেটের সাথে চ্যালেঞ্জকৃত স্বল্প মূল্যে ভাল পণ্য সরবরাহ করে এখানকার ব্যবসায়ীরা। কারন এখানে বংশানুক্রমে যারা ব্যবসা করেন তারা শুধু চট্টগ্রামের নয় সারা দেশেরই খ্যাতিমান ও জাত ব্যবসায়ী। নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের সহায়তায় সাদা পোষাকধারী পুরুষ ও মহিলা পুলিশের সার্বক্ষণিক টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে পকেটমার, ছিনতাইকারী ও বখাটেদের উৎপাত থেকে ক্রেতা সাধারণ যেন রক্ষা পায়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নিজস্ব সিকিউরিটি গার্ডও রাখা হয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেল অন্য মার্কেটের মতো তামাকুমন্ডি লেইনেও এখন ঈদের কেনাকাটার ধুম। দোকানিদের চোখে মুখে হাসির ঝিলিক। ঘরে টানাপোড়েন থাকলেও সাধ আর সাধ্যের লড়াইয়ে ঈদ কেনাকাটায় পিছিয়ে নেই নি¤œ মধ্যবিত্তের পছন্দের উক্ত মার্কেটগুলোতে। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সঙ্গতি রেখে তারাও শামিল হয়েছেন ঈদের কেনাকাটায়। খুশি বিক্রেতারাও। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীও সদা তৎপর নগরবাসী যেন সাচ্ছন্দ ঈদ কেনাকাটা করতে পারে।
ছেলেদের ভিড় দেখা গেল সেলিম পাঞ্জাবী দোকানে । দোকানের মালিক নুর মোহাম্মদ জানান, এখানে দেশীয় কাপড় থেকে শুরু করে ইন্ডিয়ান পাঞ্জাবী রয়েছে। ডিজাইনের মধ্যেও ভেরিয়েশন আছে। এমব্রডায়রি, কারচুপি কাজের ভারত ও পাকিস্তানের এক্সক্লুসিভ নকশার কিছু পাঞ্জাবির চাহিদাও রয়েছে। কাপড় ও নকশাভেদে ১৫০০ থেকে ৫০০০ টাকার মধ্যে পড়ছে পাঞ্জাবির দাম। এ ছাড়া শেরওয়ানি কাটের পাঞ্জাবির বিক্রিও ভালো। এখানে কথা হলো চকবাজার থেকে আসা তরুণ মো: ফোরকানের সাথে তিনি বলেন, এটি যেহেতু শুধুই পাঞ্জাবীর দোকান তাই কাপড় ও নকশাভেদে পচ্ছন্দের পাঞ্জাবীটা বেছে নিতে খুব সহজ হয়।

গাজী টাওয়ারের শাড়ী ও ত্রিপিচের দোকান আল মদিনার মালিক ছমির উদ্দিন জানান, বিক্রি বেশ জমে উঠেছে। আমার দোকানে দেশী বিদেশী কাপড় রয়েছে। পাশাপাশি হাল ফ্যাশনের কাপড়ের দিকে আমরা নজর রেখেছি। তরুণীদের মাঝে জয়পুরি ড্রেসটার বেশ চাহিদা রয়েছে। বিক্রেতারা আরো জানান, এবারের ঈদে নেটের ওপর কাজ করা শাড়ি, কাতান, পাথর ও চুমকির কাজ করা জর্জেট, সিল্ক, মসলিন, ক্র্যাপ এসব বেশি চলছে। এসব শাড়ি ৫ হাজার থেকে ২০হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মহিলা ক্রেতারা বলছেন, এবারের ঈদে শাড়ির দাম সবচেয়ে বেশি। আবার শাড়ির দাম তেমন বাড়েনি বলে মন্তব্য বিক্রেতাদের।

তামাকুমুন্ডিলেইন বণিক সমিতির আওতায় বেশ কটি মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় । শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবি, শার্ট-প্যান্ট, জুতা, গয়না ইত্যাদির নিত্য নতুন সমাহার প্রতিটি মার্কেটে। এছাড়া কসমেটিকস পণ্যের দোকানগুলোতেও ভারতীয় প্রসাধনীর আধিক্য বেশী দেখা গেছে। শাড়ি, কসমেটিকসের দোকানের পাশাপাশি শার্ট, প্যান্ট, জুতা, স্যান্ডেল এবং তৈরি পোশাকের দোকানেও যথেষ্ট ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বাহার মর্কেটের মাস্ক কর্পোরেশনের মঈনুল হাসান জানালেন, ক্রেতারা এখন বেশ সচেতন, বিশেষ করে তরুণীরা পার্শ¦ প্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে ত্বকের জন্য যাচাই বাচাই কওে বিদেশী আসল পণ্যটা কিনছেন। উক্ত দোকনে কথাহলো গৃহিণী জোহার জাহানের সাথে। তাঁর অভিমত, তামাকুমন্ডি লেই সারা বছর ক্রেতাদের প্রথম পছন্দ। এখানে এতো জমজমাট ব্যবসা গড়ে ওঠার পরও ক্রেতাদের কল্যাণে তেমন কোন উদ্যোগ নেই। গাড়ি পার্কিংয়ের কোন ব্যবস্থা নেই। আমতলা গোলাম রসুল মার্কেটের নিচে যে পার্কিং আছে তাতে শুধু মোটর সাইকেল রাখা যায়। পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় ক্রেতারা চরম দূর্ভোগের শিকার হয়।
তামাকুমুন্ডিলেইন বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমদ কবীর দুলাল বলেন স্টেশন মার্কেট থেকে শুরু করে এদিকে গোলাম রসুল মার্কেট পর্যন্ত আমাদের সমিতির আওতায় রয়েছে ১১০টি মার্কেটে ১৩ হাজার দোকান। এই বাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতির বিশেষ কারণ রয়েছে। তা হচ্ছে, মানুষে চাহিদা অনুযায়ী কাপড়ের পাশাপাশি জীবন সাজানোর প্রয়োজন নানা অনুষঙ্গ রয়েছে এখানে। চাহিদার সব প্রয়োজন মিটানোর জন্য চট্টগ্রামে এই বাজার অদ্বিতীয়। দামেও অন্যান্য মার্কেটের তুলনায় কম। এখন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দোকান খোলা রাখা হয়। দিনকয়েক পর মার্কেট রাত দিন খোলা থাকবে। আর নিরাপত্তার ব্যাপারে বলেন, পুলিশ প্রশাসন বেশ সহযোগিতা করছে। পাশাপাশি বণিক সমিতি আইন শৃঙ্খলা কমিটি করে স্থায়ী অস্থায়ী কর্মী বাহিনী দিয়ে সার্বিক নিরপত্তায় সচেষ্ট আছে।

রোজার মাস শুরুর পর থেকে নতুন রূপে সেজেছে চট্টগ্রামের কাপড়ের বৃহত্তম পাইকারি বাজার টেরিবাজার। সবকটি দোকানে বেচাকেনার অবস্থা রমরমা। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কাপড়ের এই পাইকারি বাজারের প্রতিটি দোকানে চলছে পুরোদমে বেচাকেনা। নগরীর অন্যান্য বিপণি কেন্দ্রের তুলনায় সাশ্রয়ী মূল্যে সব ধরনের কাপড় বিক্রির জনশ্রুতি থাকায় এখানে ৮২টি মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় বেশ চোখে পড়ার মত ।
টেরিবাজার ঘুরে দেখা গেল, দোকানগুলোতে শাড়ি, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি, শার্ট-প্যান্ট, পর্দা, বেডসিট, লুঙ্গি, গামছা, মশারিসহ যাবতীয় কাপড়ের পাইকারি ও খুচরাবাজার জমে উঠেছে আসন্ন ঈদ ঘিরে। ঈদের জন্য বাহারি ও দামি জামা, শাড়ি, পাঞ্জাবি, শার্ট-প্যান্ট, স্যুটের কাপড়, থানকাপড় থেকে জাকাতের কাপড় সব মানের ও মূল্যের পোশাক ও কাপড় পাওয়া যায় টেরিবাজারে।
শাড়ি ও ত্রি-পিস বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ‘পরশমণি’র অন্যতম পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, পাইকারি দামের কাছাকাছিতেই আমরা খুচরায়ও কাপড় বিক্রি করি। পাশাপাশি বাছাই করে পোশাক কেনার সুযোগ টেরিবাজারে বেশি। তাই ক্রেতারা এখানে বেশি আসেন। শাড়ি-লুঙ্গি-পাঞ্জাবি-থ্রি-পিস সব সম্ভার নিয়ে সেজে উঠেছে তিন তলা মাসুম ক্লথ স্টোর। এখানে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেল বেশ।
টেরিবাজারে শাড়ি ও ত্রি-পিসের জন্য এখানে বেশ কিছু শো রুম গড়ে উঠেছে। তারমধ্যে রয়েছে আল ফয়সাল, রূপন্তী, জাবেদ ক্লথ স্টোর, মৌচাক, বড়বাজার, মাসুম ক্লথ স্টোর, জিএম মেগামার্ট, চিটাগাং শাড়ি হাউস, মনে রেখ, বৈঠক বাজার, শাড়ি কালেকশন, নিউ আজমির, ইত্যাদি। এছাড়া কসমেটিকস সামগ্রী ও বাচ্চাদের পোশাকের জন্য রয়েছে স্টার প্লাস, আলপনা প্লাস, আলী ট্রেডাস,তাজমহল রাজস্থান শপিং সেন্টার ও নবারুন ট্রেডাস ইত্যাদি। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক ও বিক্রয়কর্মীরা জানান, এবারের ঈদকে সামনে রেখে ক্রেতাদের চাহিদার কথা ভেবে রাখা হয়েছে ঢাকা, টাঙ্গাইলের দেশজ পোশাক ছাড়াও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তান, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশের পোশাক।
রাজপরী শপিং মলে দেখা মিলল পটিয়া থেকে আসা ক্রেতা কদম আলীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, এখানে থান কাপড় থেকে শুরু করে সব ধরণের পোশাক কিনতে পাওয়া যায় একসাথে । এমনকি পরিবারের সবার জন্যই বিভিন্ন পোশাকের সম্ভার রয়েছে। কাপড়ের কালেকশনও বেশ ভালো। তুলনামূলক দামও কম বলে এখানে ছুটে আসি।
আবার ক্রেতা হাসনাত জানান, এখানে সব পোশাক, থান কাপড় একসঙ্গে কিনা যায়। এমনকি নারী-পুরুষ সবার জন্যই বিভিন্ন পোশাকের সম্ভার রয়েছে। কাপড়ের কালেকশনও বেশ ভালো। তুলনামূলক দামও কম তাই ছুটে আসা।
আবার ‘মনে রেখ’ দোকানের ব্যবস্থাপক মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, এখন তরুণী থেকে মাঝ বয়সী মহিলারাও শাড়ির চেয়ে কামিজ পড়তে বেশি পচ্ছন্দ করেন। এ জন্য শাড়ি কাপড়ের চাহিদা কমছে। সে তুলনায় সালোয়ার ও কামিজের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ক্রেতার চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে মেয়েদের জন্য কামিজ এবং ছেলেদের জন্য লুঙ্গি বিক্রি করা হচ্ছে।
টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমেদ হোছাইন জানান, এবার ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের নিরাপত্তার স্বার্থে টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি নিজস্ব কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। টেরিবাজার সড়ক দিয়ে খাতুনগঞ্জের পণ্যবাহী ট্রাক এখন প্রবেশ করছেনা বিকল্প সড়ক ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যার ফলে র্নিঞ্জাট কেনাকাটা করতে আসতে পারছে প্রতিটি ক্রেতা ।