ফুটবল ইতিহাসের ভয়াবহ স্টেডিয়াম বিপর্যয়গুলোতে যত মৃত্যু

    ইন্দোনেশিয়ায় ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে ১২৯ জন নিহত হয়েছে। এটিকে বলা হচ্ছে বিশ্বের ইতিহাসের সবথেকে বড় স্টেডিয়াম বিপর্যয়। শনিবার এ ঘটনা ঘটেছে ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপের কানজুরুহান স্টেডিয়ামে। ইন্দোনেশিয়ান প্রিমিয়ার লিগের খেলা হয় এদিন পারসেবায়া সুরাবাইয়া ও আরিমা মালাং দলের মধ্যে। এতে আরিমা মালাংকে ৩-২ গোলে পরাজিত করে পারসেবায়া সুরাবাইয়া। তা নিয়ে স্টেডিয়ামের ভিতরে সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত লেগে গেলে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। তবে এটিই প্রথম কোনো স্টেডিয়াম বিপর্যয়ের ঘটনা নয়। এর আগেও অনেক বার এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। আল-জাজিরার প্রকাশিত এক রিপোর্টে ফুটবল ইতিহাসের এমন বড় কয়েকটি স্টেডিয়াম বিপর্যয়ের কথা তুলে ধরা হয়েছে-

    মে ১৯৬৪, পেরু
    ১৯৬৪ সালের মে মাসে পেরুর স্তাদিও নাসিওনালে ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় ঘটেছিল। ম্যাচটি ছিল পেরু বনাম আর্জেন্টিনার। রেফারির সিদ্ধান্তে সেদিন ক্ষুব্ধ হয়ে পেরুর সমর্থকরা মাঠে নেমে আসেন।

    পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে শুরু করলে আতঙ্কিত দর্শকেরা মাঠ থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় হুড়োহুড়ি আর গাদাগাদির কারণে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যান অন্তত ৩২০ জন।
    ফেব্রুয়ারি ২০১২, মিশর
    মিশরের পোর্ট সাইদ স্টেডিয়ামের ট্রাজেডিতে সেদিন মারা গিয়েছিল ৭৩ জন ফুটবল ফ্যান। আহত হয় এক হাজারেরও বেশি। বিপর্যয় শুরু হয় যখন স্থানীয় ক্লাব আল মাসরির সমর্থকদের সাথে কায়রোর আল আহলি ক্লাবের সমর্থকদের মারামারি শুরু হয়। আল মাসরি ৩-১ গোলে জিতে গেলে তাদের হাজার হাজার সমর্থক মাঠের ভেতর ঢুকে পড়ে এবং এক পর্যায়ে আল আহলি ক্লাবের জন্য নির্ধারিত স্ট্যান্ডে লাঠিসোটা, পাথর নিয়ে হামলা চালায়। স্টেডিয়ামে সহিংসতার জন্য ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল। সরকার দু’বছরের জন্য মিশরের অভ্যন্তরীণ লীগ ফুটবল নিষিদ্ধ করেছিল।

    মার্চ ২০০৯, আইভরি কোস্ট
    আইভরি কোস্ট ও মালাউইয়ের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচের আগে ২০০৯ সালের মার্চে পদদলিত হয়ে মারা যান ১৯ জন। ঘটনাটি ঘটেছিল দেশের আবিদজান ফেলিক্স হুফোট-বইগনি স্টেডিয়ামে।

    জানুয়ারি ২০২২, ক্যামেরুন
    আফ্রিকার দেশ ক্যামেরুনের ইয়ায়ুন্ডে ওলেম্বে স্টেডিয়ামে এ বছরের শুরুতেই এই বিপর্যয় ঘটে। ‘আফ্রিকা কাপ অব ন্যাশনসে’ ক্যামেরুন বনাম কমোরোজের খেলার সময় এক সংঘর্ষে অন্তত ৮ জন নিহত হন এবং ৩৮ জন আহত হন।
    মে ২০০১, ঘানা
    ঘানার আক্রার ওহেন জান স্টেডিয়ামে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি আফ্রিকার ফুটবল ইতিহাসের সবথেকে ভয়াবহ দিন। ঘানার সবচেয়ে সফল দুটি ক্লাব আক্রা হার্টস অফ ওক এবং আসান্তে কোটাকো মুখোমুখি হয়েছিল সেদিন। খেলা শেষে বিশৃঙ্খলা শুরু হলে কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে পুলিশ। আতঙ্কিত হয়ে দর্শকেরা ছোটাছুটি করে বেরোনোর চেষ্টা করলে পদদলিত হয়ে মারা যান অন্তত ১২০ জন।

    এপ্রিল ২০০১, দক্ষিণ আফ্রিকা
    দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলাধুলোর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় ঘটেছিল ২০০১ সালের ১১ই এপ্রিল জোনাহানেসবার্গ শহরের এলিস পার্ক স্টেডিয়ামে। এদিকে পদদলিত হয়ে মারা গিয়েছিল ৪৩ জন দর্শক। স্থানীয় এক টুর্নামেন্টে সেদিন খেলা ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব কাইজার চিফস্ এবং অরলান্ডো পাইরেটসের মধ্যে।

    অক্টোবর ১৯৯৬, গুয়াতেমালা
    ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের খেলায় সেদিন মুখোমুখি হয়েছিল গুয়াতেমালা ও কোস্টারিকা। গুয়াতেমালা সিটির এস্তাদিও মাতেও ফ্লোরেসে সেদিন খেলার মধ্যেই হুড়োহুড়ি শুরু হয়। এতে নিহত হন অন্তত ৮০ জন, আহত হন ১৪৭ জন।

    মে ১৯৯২, ফ্রান্স
    মার্শেই–বাস্তিয়ার খেলা শুরুর আগেই বাস্তিয়া ফুরিয়ানি স্টেডিয়ামের একটি স্ট্যান্ড ধসে পড়ে। এতে মারা যান ১৮ জন এবং আহত হন ২৩০০ জন।

    জানুয়ারি ১৯৯১, দক্ষিণ আফ্রিকা
    ওপেনহেইমের স্টেডিয়ামে প্রাক্–মৌসুম ম্যাচের সময় পদদলিত হয়ে মারা যান ৪২ জন। দক্ষিণ আফ্রিকার খনি-শহর অর্কনিতে সেদিন মুখোমুখি হয়েছিল কাইজার চিফস এবং দ্য অরলান্ডো পাইরেটস। এক পাইরেট সমর্থক ছুরি নিয়ে কাইজার সমর্থকদের ওপর হামলা চালালে সংঘাত শুরু হয়।

    এপ্রিল ১৯৮৯, ইংল্যান্ড
    ১৯৮৯ সালের ১৫ এপ্রিল এফএ কাপের সেমিফাইনালে লিভারপুল ও নটিংহাম ফরেস্টের খেলায় পদদলিত হয়ে মারা গিয়েছিল ৯৬ জন। শেফিল্ডের হিলসবরো স্টেডিয়ামে সেদিন খেলা দেখতে স্টেডিয়ামের বাইরে জড়ো হয়েছিলেন অসংখ্য লিভারপুল সমর্থক। চাপ কমাতে একপর্যায়ে নিরাপত্তারক্ষীরা দর্শকদের ভেতরে ঢোকার জন্য স্টেডিয়াম থেকে বাইরে বের হওয়ার একটি ফটকও খুলে দেন। যার ফল হয়েছে আরও ভয়াবহ। স্রোতের মতো দর্শক ঢুকতে শুরু করেন ভেতরে, যার ফলে পদদলিত হয়ে মারা যান প্রায় ১০০ মানুষ। সেই সময়ে মস্তিষ্কে আঘাত পাওয়া একজন গত জুন মাসে মারা যান।

    মার্চ ১৯৮৮, নেপাল
    নেপালের দশরথ স্টেডিয়ামে ১৯৮৮ সালের ১২ মার্চ ভয়াবহ এক দুর্ঘটনায় মারা যান ৯০ জন। শিলাবৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য হুড়োহুড়ি করে স্টেডিয়াম থেকে বেরোতে গিয়ে এই অবস্থা হয় দর্শকদের।

    মে ১৯৮৫, বেলজিয়াম
    ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনালে জুভেন্টাস–লিভারপুল ম্যাচ ঘিরে সমর্থকদের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনায় মারা যান ৩৯ জন এবং আহত হন ছয় শতাধিক। ব্রাসেলসের হেইসেল স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরুর আগেই শুরু হয় সংঘর্ষ।

    মে ১৯৮৫, ইংল্যান্ড
    ব্র্যাডফোর্ডের ভ্যালি প্যারেড স্টেডিয়ামে এক দুর্ঘটনায় ১৯৮৫ সালের ১১ মে অন্তত ৫৬ জন নিহত হন। এতে আহত হয়েছিলেন দুই শতাধিক মানুষ। তৃতীয় বিভাগের ম্যাচে ব্রাডফোর্ডের মুখোমুখি হয়েছিল লিংকন সিটি। খেলার মধ্যে স্টান্ডের নিচে আগুন লেগে গেলে এতগুলো প্রাণ ঝড়ে যায়।

    অক্টোবর ১৯৮২, রাশিয়া
    ২০ অক্টোবর ১৯৮২ সালে উয়েফা কাপের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল রাশিয়ার ক্লাব স্পার্তাক মস্কো ও ডাচ ক্লাব এইচএফসি হার্লেম। এ দুর্ঘটনায় পদদলিত হয়ে সেদিন মারা গিয়েছিলেন ৬৬ জন দর্শক। সোভিয়েত কর্মকর্তারা বহুদিন ঘটনাটি প্রকাশ্যে আনা থেকে বিরত ছিলেন। এরপর তারা দাবি করেন সেদিন ৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও আসল সংখ্যা ৩৪০ হতে পারে বলে ধারণা করা হয়।