ই-বর্জ্য নিয়ে আসছে ব্যাপক পরিবেশ বিপর্যয়

শাহরিয়ার হোসেন তিনটি মোবাইল ব্যবহার করেন- এর একটি অনেক আগের মডেল, প্রায় বিকল। সেটি তিনি ফেলে দেন ডাস্টবিনে। শাহরিয়ার হোসেনের মতো অনেকেই বিকল হয়ে যাওয়া ইলেকট্রনিকস পণ্য ব্যবহারের অনুপোযুক্ত হলে ফেলে দেন।

ই-বর্জ্য হচ্ছে ইলেকট্রনিকস সেসব পণ্য যেগুলো ব্যবহার উপযোগিতা শেষে ফেলে দেয়া হয়। বিশেষ করে অব্যবহৃত মোবাইল, কম্পিউটার, টিভি, ল্যাপটপ, ভিসিআর, ডিভিডি, প্রিন্টার, কি-বোর্ড ও মাউসের মতো ইলেকট্রনিকস পণ্যগুলোকে ই-বর্জ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া এসব ই-বর্জ্য বিশেষ করে নষ্ট হয়ে যাওয়া চিপগুলো পোড়ানো হলে সেখান থেকে টক্সিন ও ডায়াটক্সিনের মতো বিষাক্ত পদার্থ ধোঁয়ার মাধ্যমে বাতাসে মিশে বায়ু দূষণ করে। আর যারা এসব দ্রব্য পোড়ায় বিশেষ করে কর্মরত মেথর ও সংশ্লিষ্টরা, এরা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে এ ধোঁয়া গ্রহণ করে বলে নানা ধরনের ফুসফুসজনিত রোগ-ব্যধিতে ভুগে থাকে।

ইলিটাসের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, যেখানে ই-বর্জ্য পোড়ায় সেখান থেকে আরও কয়েক মাইল পর্যন্ত এর বিষাক্ত উপাদানগুলো বাতাসে ভাসতে থাকে, যা গ্রহণ করলে ক্যান্সার হওয়ার মতো ঝুঁকি থাকে। কেবল মানুষ না, যেসব এলাকায় ই-বর্জ্য পোড়ানো হয় তার আশপাশের জীব পরিবেশ মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে থাকে।

এছাড়া ই-বর্জ্য না পুড়িয়ে যদি মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়, তাতেও রয়েছে নানা ধরনের ঝুঁকি। বিশেষ করে ধাতুসমৃদ্ধ এসব বিষাক্ত দ্রব্য মাটির নিচে ভুগর্ভস্থ পানি ও ফসলের সরাসরি ক্ষতি করে থাকে। বহুদিন ধরে মাটির নিচে ই-বর্জ্য থাকলে এর দূষিত ক্ষুদ্রকণাগুলো মাটিতে মিশে মাটির গুণাগুণ নষ্ট করে দেয়- যা মাটির ঊর্বরতা নষ্ট করে।

এসব ইলেকট্রনিকস পণ্য পারদ, লিথিয়াম, লেড ও বেরিয়ামের মতো ভারি ধাতুসমৃদ্ধ হওয়ায় তা পানিতে ফেললে তলদেশে গিয়ে জমা হয় এবং সংশ্লিষ্ট জলাশয়ের নাব্যতা কমিয়ে ফেলে। বহুদিন ধরে পানিতে থাকলে এসব পণ্যের প্রভাবে পানি বিষাক্ত হয়ে ওঠে। এতে করে জলাশয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত উদ্ভিদ ও প্রাণী বড় রকমের ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।

ইলিটাসের গবেষণায় দেখা যায়, ক্যাডমিয়াম, পারদ ও লিথিয়ামের মতো পণ্যগুলো মানুষের কিডনি, যকৃত, মস্তিষ্ক ও হাড়ে বড় রকমের ক্ষতি করে থাকে। সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে এসব পণ্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আওতায় না আনলে থেকে যায় বড় রকমের ক্ষতির সম্ভাবনা।

গত এক দশকের হিসাব থেকে দেখা যায়, বড় রকমের ডিজিটালাইজেশনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশের প্রায় ৬০ মিলিয়ন মোবাইল ফোন গ্রাহক রয়েছে, রয়েছে প্রতিটি অফিস ও বাসা-বাড়িতে ইলেকট্রনিকস নানা পণ্য। এতে করে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে ই-বর্জ্য।

পিউর আর্থের এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতি বছর কয়েক হাজার টন ই-বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যা ব্যবস্থাপনায় নেই বিশেষ কোনো ব্যবস্থা। ৯৭ শতাংশ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা এসব পণ্যের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করে থাকে। যারা ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে আছেন তারা অনেকেই নিজেদের এবং বাকিদের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন না। যে হারে দেশে ই-বর্জ্যের পরিমাণ বাড়ছে, এতে করে দ্রুত কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে, বিজ্ঞানের এ আশির্বাদ অভিশাপ হয়ে ধরা দিতে পারে।