পাগলা মসজিদ: এবার রেকর্ড ৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক থেকে এবার রেকর্ড ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৮২ টাকা পাওয়া গেছে। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় গণনা শেষে বিপুল পরিমাণ দানের এই টাকার হিসাব পাওয়া যায়। যা পাগলা মসজিদে দানের হিসাবে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ। বিপুল পরিমাণ এই নগদ টাকা ছাড়াও বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রা ও দান হিসেবে অনেক স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গেছে।
এর আগে গত ১২ই মার্চ দান সিন্দুক থেকে সর্বোচ্চ ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার ২৯৫ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। এবার মাত্র ৯১ দিনে পাগলা মসজিদের দান সিন্দুকে জমা পড়েছে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৮২ টাকা। সে হিসেবে প্রতিদিন মসজিদটির দানবাক্সে ৪ লাখ ২৮ হাজারেরও বেশি টাকা দান হিসেবে জমা পড়েছে। এর আগে সর্বশেষ গত ২রা জুলাই দান সিন্দুক থেকে ৩ কোটি ৬০ লাখ ২৭ হাজার ৪১৫ টাকা পাওয়া গিয়েছিল।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গতকাল সকাল ৯টায় জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণের উপস্থিতিতে মসজিদের ৮টি দান সিন্দুক খোলা হয়। তবে ৮টি দান সিন্দুকের মধ্যে ৪টি দান সিন্দুকই খোলার অন্তত ১৫ দিন আগেই পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। দান সিন্দুক থেকে টাকা খুলে প্রথমে বস্তায় ভরা হয়। এবার বড় বস্তার ১৫ বস্তা টাকা হয়েছে।

এরপর শুরু হয় দিনব্যাপী টাকা গণনা। টাকা গণনায় মসজিদ মাদ্রাসার ১৩২ জন ছাত্র, রূপালী ব্যাংকের ৭০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ৩৪ জন মসজিদ মাদ্রাসার কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মোট ২৩৬ জন মানুষ অংশ নেন।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এটিএম ফরহাদ চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার জোহরা সুলতানা যূথী, মোছা. নাবিলা ফেরদৌস ও সুশান্ত সিংহ, পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত উদ্দীন ভূঞা, রূপালী ব্যংকের এজিএম মো. রফিকুল ইসলাম, পাগলা মসজিদ কমিটির সদস্য সিনিয়র সাংবাদিক সাইফুল হক মোল্লা প্রমুখ টাকা গণনার কাজ তদারকি করেন। টাকা গণনার এই এলাহী কাণ্ড নিজ চোখে অবলোকন করতে শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ মসজিদে ছুটে যান।
পাগলা মসজিদের মালামাল সংরক্ষক মো. বিল্লাল হোসেন জানান, প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ মসজিদের দান সিন্দুকগুলোতে নগদ টাকা-পয়সা ছাড়াও স্বর্ণালঙ্কার দান করেন। দান সিন্দুকে দান করা ছাড়াও মসজিদের নিলাম ঘরে প্রতিদিন মানুষ নানা ধরনের জিনিসপত্র দান করেন। এসবের মধ্যে রয়েছে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, ফল-ফলাদি, কোরআন শরীফ ইত্যাদি। নিলাম ঘরে প্রতিদিন এসব নিলামে বিক্রি করে দেয়া হয়।
পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত উদ্দীন ভূঞা জানান, সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ এ মসজিদে দান করেন। তাদের বিশ্বাস, এখানে দান করলে রোগ-ব্যাধী থেকে মুক্তির পাশাপাশি মনের বাসনা পূরণ হয়। এই বিশ্বাস থেকেই দূর-দূরান্তের মানুষও এখানে দান করতে ছুটে আসেন। মজার বিষয় হচ্ছেÑ দান সিন্দুক খুললে চিঠি-পত্রও পাওয়া যায়। সেসব চিঠিতে দানকারীরা নিজেদের মনের বাসনার কথা লিখে দেন।
ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ জানান, পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক খুলে পাওয়া টাকাগুলো রূপালী ব্যাংকে জমা করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাগলা মসজিদের দান সিন্দুকে জমা পড়েছে। ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, আমরা এখানে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মসজিদ ও ইসলামিক কমপ্লেক্স করবো। এ লক্ষ্যে কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে।
কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এই মসজিদটি গড়ে উঠেছিল। সময়ের বিবর্তনে আজ এ মসজিদের পরিধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে এর খ্যাতি ও ঐতিহাসিক মূল্যও। মসজিদকে কেন্দ্র করে একটি অত্যাধুনিক ধর্মীয় কমপ্লেক্স এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রসারিত হয়েছে মূল মসজিদ ভবন। দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত মসজিদটিকে পাগলা মসজিদ ইসলামী কমপ্লেক্স নামকরণ করা হয়েছে। এ মসজিদের আয় দিয়ে কমপ্লেক্সের বিশাল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মসজিদের আয় থেকে বিভিন্ন সেবামূলক খাতে অর্থ সাহায্য করা হয়।