১ সপ্তাহের মধ্যে চতুর্থবার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালালো উত্তর কোরিয়া

উত্তর কোরিয়া শনিবার দুটি স্বল্প-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এক সপ্তাহে এই নিয়ে চতুর্থ রাউন্ড অস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে তারা। বিষয়টির প্রবল নিন্দা করেছেন তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা। প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল বিষয়টি সম্পর্কে বলেছেন যে, পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতি উত্তর কোরিয়ার “আবেগ” তার নিজের জনগণের দুর্ভোগকে আরও গভীর করছে। সেই সঙ্গে এই অস্ত্র ব্যবহার সম্পর্কে সতর্ক করে বলেছেন যে, দক্ষিণ কোরিয়া এবং মার্কিন সামরিক বাহিনী বিষয়টির দিকে নজর রাখছে ।

মি. ইউন সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে বলেছিলেন-গত ৩০ বছরে ক্রমাগত আন্তর্জাতিক আপত্তি সত্ত্বেও উত্তর কোরিয়া পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতি তার আকর্ষণ পরিত্যাগ করেনি। পারমাণবিক অস্ত্রের বিকাশ উত্তর কোরিয়ার জনগণের জীবনকে আরও বেদনায় নিমজ্জিত করবে। উত্তর কোরিয়া যদি পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করার চেষ্টা করে, তবে তারা দক্ষিণ কোরিয়া-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা একটি দৃঢ়, অপ্রতিরোধ্য প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হবে।”

মি. ইউনের মন্তব্য উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনকে ক্ষুব্ধ করতে পারে, যিনি অভিযোগ করেছেন যে মি. ইউনের সরকার আসলে “সংঘাত পাগল” এবং “গুন্ডাদের” নেতৃত্বে দেয়।

মি. কিম ইতিমধ্যেই মি. ইয়ুন-এর পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের বিনিময়ে ব্যাপক সাহায্য ও সহায়তার পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। দক্ষিণ কোরিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সাম্প্রতিক নৌ মহড়া এবং জাপানের সাথে জড়িত তাদের অন্যান্য প্রশিক্ষণের প্রতিক্রিয়া হিসাবে উত্তর কোরিয়া পরীক্ষামূলক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করলো বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ উত্তর কোরিয়া মিত্রদের দ্বারা এই ধরনের সামরিক মহড়াকে আক্রমণের মহড়া হিসেবে দেখে। শনিবার, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানি এবং মার্কিন সামরিক বাহিনী বলেছে যে, তারা উত্তর কোরিয়ার দুটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ শনাক্ত করেছে।

দক্ষিণ কোরিয়া বলেছে, উত্তর কোরিয়ার রাজধানী অঞ্চল থেকে উৎক্ষেপনের ঘটনা ঘটেছে। জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী তোশিরো ইনো বলেন, ক্ষেপণাস্ত্র দুটির একটি ৪০০ কিলোমিটার আরেকটি ৩৫০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত গিয়েছিল এবং সর্বোচ্চ ৫০ কিলোমিটার উচ্চতায় উঠেছিল।
ইনো বলেছেন, ক্ষেপণাস্ত্রগুলি সম্ভবত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এড়াতে পরিকল্পিতভাবে একটি অনিয়মিত গতিপথ ছোড়া হয়েছে। এই সপ্তাহেই উত্তর কোরিয়ার দ্বারা পাঁচটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ এক বিবৃতিতে বলেছেন, “উত্তর কোরিয়ার বারবার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ একটি গুরুতর উস্কানি যা কোরীয় উপদ্বীপে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শান্তি ও নিরাপত্তাকে ক্ষুণ্ন করে। উৎক্ষেপণগুলি উত্তর কোরিয়ার গণবিধ্বংসী বেআইনি অস্ত্র এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির “অস্থিতিশীল প্রভাব” তুলে ধরেছে।”

শুক্রবার দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোরীয় উপদ্বীপের পূর্ব উপকূলে পাঁচ বছরের মধ্যে তাদের প্রথম ত্রিপক্ষীয় অ্যান্টি-সাবমেরিন ড্রিল করেছে। এই সপ্তাহের শুরুতে দক্ষিণ কোরিয়া এবং মার্কিন যুদ্ধজাহাজ চার দিন ধরে ওই এলাকায় দ্বিপাক্ষিক মহড়া চালায়। এই সপ্তাহে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাগুলি মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসের দক্ষিণ কোরিয়া সফরের প্রতিক্রিয়া হিসেবে অনেকে চিহ্নিত করেছেন, যেখানে হ্যারিস তার এশিয়ান মিত্রদের নিরাপত্তার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

উত্তর কোরিয়া সেপ্টেম্বরে একটি নতুন আইন গ্রহণ করেছে যা কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে পারমাণবিক অস্ত্রের পূর্বনির্ধারিত ব্যবহার অনুমোদন করে। দক্ষিণ কোরিয়া ও মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, আসলে উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিম জং উন শেষ পর্যন্ত বর্ধিত পারমাণবিক অস্ত্রাগার ব্যবহার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দিতে চান। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একাধিক রেজুলেশনে উত্তর কোরিয়াকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক ডিভাইস পরীক্ষা করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। মে মাসে, চীন এবং রাশিয়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের জন্য উত্তর কোরিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা কঠোর করার জন্য মার্কিন নেতৃত্বাধীন একটি প্রচেষ্টাকে ভেটো দেয়। কিন্তু উত্তর কোরিয়া যে দমবার পাত্র নয় তা তাদের ক্রিয়াকলাপ থেকেই স্পষ্ট।