ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর ঘোষণার পর রাশিয়া জুড়ে বিক্ষোভ, গ্রেপ্তার ১৩০০

যুদ্ধবিরোধী কয়েকশ’ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে রাশিয়া। ইউক্রেনে নতুন করে আরও সেনা পাঠানোর ঘোষণার পরই এই বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে আসে। তবে বরাবরের মতোই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয় পুলিশ। রুশ মানবাধিকার সংস্থা ওভিডি-ইনফো’র হিসেবে প্রায় ১৩০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বুধবার। শুধুমাত্র মস্কো এবং সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকেই এত মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া ইরকুতস্ক এবং অন্য সাইবেরিয়ান শহরগুলোতেও কয়েক ডজন করে বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

আল-জাজিরা জানিয়েছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বুধবার এই সেনা সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন। এরপরই অনেক রুশ নাগরিক দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রাশিয়া থেকে বাইরের দেশে যাওয়ার বিমানের সকল টিকিট সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি হয়ে যায়। সীমান্তগুলোতেও মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। গুগলে ‘কীভাবে রাশিয়া ছাড়বো’ এমন প্রশ্ন লিখে সার্চ করতে দেখা গেছে প্রচুর মানুষকে।

যদিও ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে রুশ আইনপ্রনেতা ও সাধারণ মানুষের একাংশ।
এর আগে স্থানীয় সময় বুধবার ভোরে টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ‘আংশিক সেনা সমাবেশের’ ঘোষণা দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম রাশিয়া এ ধরনের সেনা সমাবেশ করতে যাচ্ছে। এই আংশিক সেনা সমাবেশে ৩ লাখ রিজার্ভ সৈন্যকেও ডাকা হবে। একই সঙ্গে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জয় পেতে আরও সেনা পাঠাতে চান বলে ঘোষণা দেন তিনি। এসময় তিনি পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি হুমকি দিয়ে বলেন, আমাদের দেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতা যদি হুমকির মধ্যে পড়ে, রাশিয়া এবং এর জনগণকে রক্ষা করার জন্য আমরা সবরকমের পদক্ষেপ নেবো।
তিনি আরও বলেন, যারা পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে আমাদের ব্ল্যাকমেইল করতে চায়, তাদের জানা উচিত যে, পাল্টা বাতাস তাদের দিকেও যেতে পারে। পশ্চিমা দেশগুলো প্রমাণ করেছে যে, তারা চায় না রাশিয়া আর ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি বজায় থাকুক। এমন সময়ে পুতিন এ ভাষণটি দিলেন, যখন মস্কো পূর্ব এবং দক্ষিণ ইউক্রেনে রাশিয়ার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা বিরাট অঞ্চলে মস্কো অনুগত নেতারা গণভোটের ডাক দিয়েছে। ওই গণভোট ডাকার পরদিনই তিনি রিজার্ভ সেনাদের ডাকার নির্দেশ দিলেন।
এমন ঘোষণার পরেই রাশিয়ায় প্রায় ডজনেরও বেশি শহরে বিক্ষোভে নেমেছেন যুদ্ধবিরোধীরা। রাশিয়া প্রথম থেকেই এই যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনকারীদের পশ্চিমাপন্থী বলে আসছে। বুধবার মস্কোর প্রসিকিউটরের কার্যালয় থেকে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে কঠিন বার্তা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এ ধরণের আন্দোলনে যোগ দিলে ১৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। একইসঙ্গে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘গুজব’ ছড়ানোর অভিযোগেও তাদের বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তারপরেও যুদ্ধবিরোধী সংগঠন ভেসনা দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে। নিজেদের টেলিগ্রাম চ্যানেলের মাধ্যমে তারা প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে।