এবার মুহূর্তের মধ্যে বিমানে হাজার মাইল পাড়ি

একবার ভাবুন তো, আপনি এমন একটা প্লেনে চেপে বসেছেন, যা প্রশান্ত কিংবা আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিতে পারে মাত্র কয়েক মিনিটে? অথবা এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হলো, মুহূর্তের মধ্যে পাড়ি দিতে ইচ্ছে হলো হাজার মাইল? এমন ভাবনার ক্ষেত্রে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মনে একটা কথাই বাজবে, চাইলেই কি আর সব পারা যায়?

সুপারসনিক প্লেন এসে অন্তত জানান দিয়েছে, এখন না পারলেও ভবিষ্যতে কোনো এক সময় ঠিকই মুহূর্তের মধ্যে হাজার মাইল পাড়ি দিতে পারবো আমরা। অত্যাধুনিক এ প্লেন ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১ হাজার ২৩৬ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে।

তবে খুব সম্ভবত আর বেশিদিন অত্যাধুনিকের তালিকায় থাকতে পারবে না সুপারসনিক প্লেন। এরই মধ্যে স্ক্রিমর জেটের ধারণা দিয়ে চারিদিকে সাড়া ফেলে দিয়েছেন কানাডীয় প্রকৌশলী চার্লস বম্বার্ডিয়ার।

গত অক্টোবরে স্ক্রিমর জেটের ধারণা দেওয়ার সময় চার্লস দাবি করেছিলেন, এই প্লেনে চেপে আটলান্টিক মহাসাগরকে মনে হবে একটা লেকের মতো। এ জেট প্লেন ম্যাচ-ফোর গতিতে ছুটতে পারবে।

ম্যাচ নাম্বার হচ্ছে পদার্থবিজ্ঞানের একটি টার্ম, যার মাধ্যমে কোনো স্থানে পদার্থের গতি আর সেখানকার পরিবেশের পরিপ্রেক্ষিতে শব্দের গতির অনুপাতকে বোঝায়।

তবে স্ক্রিমর জেটের ধারণা বাস্তব রূপ নেওয়ার আগেই আরও অত্যাধুনিক স্ক্রিমর জেট প্লেনের ধারণা নিয়ে এসেছেন চার্লস বম্বার্ডিয়ার। ঘণ্টায় ২০ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিতে সক্ষম এ প্লেনে চেপে নিউইয়র্ক থেকে লন্ডন যাওয়া যাবে বলতে গেলে চোখের নিমিষে।

বিস্ময়ের ধাক্কা লাগলেও ঘটনা সত্যি। অন্তত চার্লস বম্বার্ডিয়ার তাই মনে করছেন। ১০ জন আরোহী নিয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ-২৪ গতিতে ছুটতে পারবে ‘অ্যান্টিপড’ নামের এ জেট প্লেন। যার গতি হবে স্ক্রিমরের চেয়ে দ্বিগুণ আর কনকর্ড প্লেনের চেয়ে ১২ গুণ বেশি।

নিউইয়র্ক থেকে লন্ডনের দূরত্ব ৩ হাজার ৪৫৯ মাইল (৫ হাজার ৫৬৬ কিলোমিটার) । আর অ্যান্টিপডের গতি ঘণ্টায় ১২ হাজার ৪৩০ মাইল (২০ হাজার কিলোমিটার)। সে হিসাবে নিউইয়র্ক থেকে লন্ডন পাড়ি জমাতে এর সময় লাগবে মাত্র ১১ মিনিট।

এ ব্যাপারে চার্লস বলেছেন, আমি এমন একটা প্লেন তৈরি করতে চেয়েছিলাম, যা যতো দ্রুত সম্ভব গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারবে।

তিনি বলেন, স্ক্রিমর জেটের মতোই এই প্লেনটিকেও চৌম্বকীয় রেলগান ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রথমে আকাশে ছোঁড়া হবে। এ ধরনের ব্যবস্থায় রেললাইনের মতো সমান্তরাল একটি ব্যবস্থার ওপর বসিয়ে শক্তিশালী তড়িচ্চুম্বকীয় ক্ষেত্রের মাধ্যমে একে ছোঁড়া হবে আকাশে। আকাশে ওঠার সময় এর সর্বোচ্চ গতি হবে ম্যাচ-১০ এর সমান।

এরপর তরল অক্সিজেন বা কেরোসিন রকেট আকাশে এর গতি আরও বাড়িয়ে দেবে। সবশেষে স্ক্রিমজেট ইঞ্জিন চলতে শুরু করবে এবং প্লেনটি সর্বোচ্চ গতিতে পৌঁছাবে বলে জানান চার্লস।

তবে অক্টোবরে ধারণা দেওয়া স্ক্রিমর জেট প্লেন সাধারণত সব জায়গা থেকে উড্ডয়ন করতে পারবে না। এখানেই স্ক্রিমর জেটের সঙ্গে অ্যান্টিপডের পার্থক্য। পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট বুস্টারের মাধ্যমে অত্যাধুনিক ডিজাইনের এ প্লেন যেকোনো জায়গা থেকে উড্ডয়ন করতে পারবে। শুধু তাই নয়, ছয় হাজার দৈর্ঘ্যের রানওয়ে পেলেই এটি অবতরনও করতে পারবে।

আকাশে ওঠার সময় যে রকেটগুলো কাজ করবে, সেগুলো লাগানো থাকবে অ্যান্টিপডের ডানায়। এই রকেটের মাধ্যমে এটি ৪০ হাজার ফুট পর্যন্ত উপরে উঠবে। প্লেনটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় উঠার পর রকেটগুলো ডানা থেকে আলাদা হয়ে পুনরায় এয়ারফিল্ডে ফিরে আসবে। রকেটগুলো বিচ্ছিন্ন হওয়ার সময় প্লেনের কম্পিউটার সুপারসনিক রামজেট ইঞ্জিন চালু করবে, যা এর গতিকে ম্যাচ-২৪ এ উন্নীত করবে।

প্লেনের ডিজাইনার চার্লস বম্বার্ডিয়ারের দাবি, অ্যান্টিপড ব্যবসায়ীক ও সামরিক- উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যাবে।

তবে গতির মতোই অ্যান্টিপড তৈরির খরচটাও ব্যাপক হবে বলে ধারণা চার্লসের। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, যদি চাহিদা থাকে, তাহলে হয়তো অ্যান্টিপড তৈরির কাজে হাত দেওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে খরচ পড়বে অন্তত ১৫০ মিলিয়ন ডলার (১ হাজার ১৭৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা)। সেই সঙ্গে প্রয়োজন আরও গবেষণার।