মিথ্যা মামলায়, মিথ্যা সাক্ষী: দুই এসআইয়ের বিরুদ্ধে বিচারকের মামলা

উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা মামলা দায়ের, মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ায় অভিযোগে দুই পুলিশের উপ পরিদর্শকের (এসআই) বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বিচারক। আসামিরা হলেন- পতেঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন ও সুবীর পাল।

মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে মামলার আবেদন করেন শিশু আদালত এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ চট্টগ্রামের বিচারক ফেরদৌস আরা।

বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর পিপি খন্দকার আরিফুল আলম।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল শুল্ক ফাঁকি দিয়ে দুইটি সোনার বার পাচারের অভিযোগে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকার বাটারফ্লাই পার্ক থেকে মো. নাজমুল হাসান জুয়েল নামে এক শিশুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পরের দিন ওই শিশুর বিরুদ্ধে এসআই আনোয়ার হোসেন বাদি হয়ে সোনার বার পাচারের মামলা করে। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় পতেঙ্গা থানার এসআই সুবীর পাল। তদন্ত শেষে শিশু নাজমুলকে অভিযুক্ত করে একই বছরের ৩ অক্টোবর আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। পরে দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে চলতি বছরের গত ৪ সেপ্টেম্বর শিশুটি নির্দোষ বলে রায় দেন আদালত।

শিশুটির আইনজীবী আজমুল হুদা জানান, শিশুটির এক আত্মীয় এএইচএম সুমন শুল্ক বিধান না মেনে দুটি সোনার বার নিয়ে আসেন বাহরাইন থেকে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় বিমানবন্দরে ব্যাগেজ পরিদর্শক ওই ব্যক্তিকে (সুমন) আটক করেন। পরবর্তীতে শুল্ক পরিশোধ করে সোনার বার দুটি নিজ হেফাজতে নিয়ে শিশুটির কাছে হস্তান্তর করে। কিন্তু এক শিশু অবৈধভাবে সোনার বার বহন করছে এমন খবরে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওই শিশুকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে উদ্ধারকৃত সোনার বার দুটির মধ্যে একটি দাবি করে শিশুকে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেয় পুলিশ। শিশুটির মা সোনার বারের বৈধ কাগজপত্র দেখালেও প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় অহেতুক মামলা দায়ের করে পুলিশ।

আদালত সূত্রে আরও জানা যায়, মামলাকে সত্য প্রামাণিত করতে এজাহারকারী তার দায়েরকৃত মামলার সমর্থনে আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দেন। ডি.ডব্লিউ-২ কর্তৃক দেওয়া সোনার বারের কাগজপত্র উপস্থাপন করা সত্ত্বেও তা আমলে না নিয়ে মামলা দায়ের করে ওই পুলিশ সদস্য। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাজস্ব অফিস হতে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ না করে মামলার বাদি পুলিশ কর্মকর্তাকে বাঁচানোর জন্য মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্তকারী কর্মকর্তা। প্রকৃত সত্য জানার পরও মিথ্যা প্রতিবেদনের স্বপক্ষে শপথ গ্রহণপূর্বক আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করেন তিনিও। এ মামলায় শিশুটি সম্পূর্ণ নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও ২০১৯ সালের ২২ এপ্রিল তারিখ থেকে ১ মাস ৬ দিন জেল হাজতে আটক থাকার পর একই বছর ২৮ মে জামিন পান।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর পিপি খন্দকার আরিফুল ইসলাম বলেন, মিথ্যা মামলায়, মিথ্যা পুলিশের রিপোর্ট ও সাক্ষী দেওয়ায় দুই এসআই আনোয়ার হোসেন ও সুবীর পালের বিরুদ্ধে মামলার করেছেন মাননীয় বিচারক। অভিযোগে পেনাল কোডের ১৭৭, ১৮১, ১৯৩ ৫ ২১১ ধারায় মামলা দায়ের করা করা হয়। সাধারণভাবে এই ধরনের মামলা হয় না, এটা বিরল মামলা।